২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চার ঋতুর দেশে মনোরম উদ্যান পার্কে মিল্লাত

চার ঋতুর দেশে মনোরম উদ্যান পার্কে মিল্লাত - সংগৃহীত

'বুস্তানে মিল্লাত' শব্দটি বাংলা করলে হবে 'জাতীয় উদ্যান।' সাধারণ ভাবে এটি 'পার্কে মিল্লাত' বা 'মিল্লাত পার্ক' নামে পরিচিত। ৩০০০০০ বর্গ মিটার এলাকার মনোরম এ পার্ক স্থাপিত হয়েছে ১৯৬৬ সালে। নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় স্থাপিত পার্কটি তেহরানের ব্যস্ত নাগরিক জীবনে নিয়ে এসেছে সবুজের বিশাল অবকাশ। পার্কটির পাশ দিয়ে চলে গেছে তেহরানের অন্যতম সুন্দর এবং সুপারিসর সড়ক 'ওয়ালি আসর।

বিশাল এ পার্কের ঢোকার মুখে এবং ভেতরে রয়েছে ভাস্কর্য। প্রতিবন্ধীদের সম্মানে রয়েছে কালো পাথরের ভাস্কর্য।  রয়েছে হাফিজসহ ইরানের অনেক কবির পাথরে খোদিত প্রতিকৃতি। ভেতরে রয়েছে বড়সড় কৃত্রিম হ্রদ। রয়েছে খেলা-ধুলা, শরীরচর্চা এবং সময় কাটানোর চমৎকার আয়োজন। পার্কের পুরোটা ঘুরে দেখতে চাইলে দীর্ঘ সময় হাতে নিয়ে আসতে হবে। পার্কটিতে ঢোকার পথের উল্টো দিকে ইরানি হস্তশিল্পের দোকান আছে। এ ছাড়া, আছে ফুড কোর্ট।

চার ঋতুর দেশ ইরান। সব ঋতুতেই পার্কে জনসমাগম হয়। তুলনামূলক ভাবে গরমের সময়ে লোকজন বেশি আসেন। বিশেষ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন অনেকেই। দীর্ঘ সময় কাটান এখানে। কেউ কেউ দিনের শেষভাগ থেকে একেবারে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকেন। শীতে স্বাভাবিক ভাবেই লোক সমাগম হয় কম।

এ ছাড়া, হস্তশিল্প, ইরানের নানা প্রদেশের বিশেষ বিশেষ মিষ্টি বা পণ্যসহ নানা জিনিসের জমজমাট মেলাও চলে প্রায় সারা বছর। তেহরান ঘুরতে আসলে সময় হাতে নিয়ে এ পার্ক একবার ঘুরে যাবেন। তা হলে  প্রায় বিনা ব্যয়ে সুন্দর এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন।

ইরানের স্থাপত্য বিস্ময় : তাব্রিজের ‘নীল মসজিদ’
মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান

‘তাব্রিজ’ ইরানের অন্যতম ঐতিহাসিক নগরী। নানা কারণে উচ্চারিত হয়েছে নগরীটির নাম। ইরানের পূর্ব আজারবাইন প্রদেশের এই নগরে আছে ইসলাম ও ইরানের স্থাপত্যকলার অনেক অপূর্ব নিদর্শন। এ রকম একটি নিদর্শনের নাম ‘নীল মসজিদ’। কেউ কেউ একে ‘টারকোয়েজ অব ইসলাম’ বা ‘ইসলামের ফিরোজা নিদর্শন’ নামেও ডাকেন। মসজিদটির ভেতর ও বাইরের অংশগুলো সাজানো হয়েছে মনোরম নীল ও ফিরোজা রঙের টাইলস দিয়ে। এ কারণেই মসজিদটির নাম নীল মসজিদ।

মসজিদটি নির্মিত হয়েছে পনের শতকে। সে সময় শিয়া তুর্কি সম্প্রদায় ‘কারা কোইনলুর’ নেতা জাহান শাহের আদেশে এ অনবদ্য স্থাপনা তৈরি হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিদের হাতে নিহত হওয়ার পর এ মসজিদের দক্ষিণ অংশে দাফন করা হয় তাকে। ‘কারা কোইনলুর’ সম্প্রদায় ১৩৭৫ থেকে ১৪৬৮ সাল পর্যন্ত বর্তমান আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, তুরস্কের পূর্বাঞ্চল এবং ইরাক পর্যন্ত শাসন করে।

‘কারা কোইনলুর’ শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতি লাভ করেছিলেন জাহান শাহ। ১৪৩৮ থেকে ১৪৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ ককেশাস এবং ইরানের আজারবাইজান শাসন করেন। আনাতোলিয়ার পশ্চিমাঞ্চল, বর্তমান ইরাকের প্রায় পুরোটা ও মধ্য ইরান পর্যন্ত ছিল তার সাম্রাজ্য। তাব্রিজকে সাম্রাজ্যের রাজধানী করার পর তিনি নির্মাণ করেন এই ‘নীল মসজিদ’।মসজিদটির মূল কমপ্লেক্স নির্মিত হয় ১৪৬৫ সালে ইজ্জতদ্দিন কায়াপুচির সময়ে। সে সময়ে এখানে একটি বিদ্যালয়, একটি গণহাম্মাম ও গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়।

মনোরম নকশা টাইলস ও ইটের সমন্বয়ে নির্মিত হয় মসজিদটি। এক সময় এসব নকশায় মসজিদের পুরোটাই আচ্ছাদিত ছিল। বেশির ভাগ টাইলস ছিল নীল ও ফিরোজা বর্ণের। তাতে কালো ও সাদার ছাপ দেয়া হয়। মসজিদের প্রধান ফটকে তুলুথ ও কুফিক হরফে পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা ছিল। মসজিদের প্রধান ফটকে আজারবাইজানের অন্যতম খ্যাতিমান ক্যালিওগ্রাফার বা লিপিশিল্পী নেয়ামতউল্লাহ ইবনে মোহাম্মদ বাভাবের নাম লেখা আছে। তিনি মসজিদটির অভূতপূর্ব টালিগুলোর নকশাশিল্পী ছিলেন।

প্রধান এই ফটকে জাহান শাহের নামও লেখা আছে। এক সময় এটি স্বর্ণমণ্ডিত ছিল। মসজিদের মূল অংশের উপরের ভাগে পুরো সুরা আল ফাতাহ লেখা আছে। দুই গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির তিন পাশ ঘিরে আছে খিলানের সারি। দক্ষিণ অংশে আছে দু’টি দীর্ঘ মিনার। মসজিদের মূল অংশের ফটকে ফার্সি কবিতা লেখা আছে। মসজিদটির দক্ষিণ অংশে আছে ছোট একটি কক্ষ। জাহান শাহের ব্যক্তিগত কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো এটি। মর্মর পাথরে নির্মাণ করা এ কক্ষটিতে তুলুথ লিপিতে পবিত্র কোরআনের বাণী লেখা আছে। আর এ বাণী সাজানো হয় জ্যামিতিক নকশায়।

১৭৭৯ সালের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে প্রায় পুরো স্থাপনাটি ধ্বংস হয়ে যায়। সে সময় মসজিদটির কেবল সামনের অংশ ও কয়েকটি খিলান ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। ১৯৭৩ সালে মসজিদটি পুনর্গঠনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ধ্বংস্তুপ থেকে প্রচুর স্বর্ণ ও মর্মর পাথর লুট হয়।

মূল ভবনের যে অংশ টিকে আছে তা থেকে দেখা যায়, মসজিদটি ফিরোজা এবং ষড়ভূজাকৃতি টাইলসে আবৃত। এসব টাইলসে জ্যামিতিক নক্সাসহ ফুল-পাতা ও নানা বাণী খচিত ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মসজিদটির ছাদের ভেতরের দিক স্বর্ণমণ্ডিত ও মেঝ মর্মর পাথরে নির্মিত ছিল। তৈমুর বংশীয় শাসকদের মহৎ এক শিল্পকর্মের নিদর্শন হয়ে আছে তাব্রিজের এই ‘নীল মসজিদ।’ আজ এই মসজিদ প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের পদভারে।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল