২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তেল বিক্রির ব্যাপারে নীতি পাল্টাচ্ছে সৌদি আরব!

তেল বিক্রির ব্যাপারে নীতি পাল্টাচ্ছে সৌদি আরব! - সংগৃহীত

দুই বছর ধরে সৌদি আরবের জাতীয় তেল কোম্পানি আরামকো'র ৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে বিক্রির জন্য ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। পুঁজিবাজারে আসতে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যান চেজ অ্যান্ড কো. এবং এইচএসবিসিকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছিল কোম্পানিটি। সম্প্রতি আরামকো'র শেয়ার ক্রয়ের আবেদনের প্রক্রিয়াকে স্থগিত করেছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। 

স্টক মার্কেটে মাত্র ৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়েই কোম্পানিটি বাজার থেকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ করার আশা করছিল। সৌদি আরামকোর শেয়ার বিক্রি থেকে যে অর্থ পাওয়া যেত, তা জমা হতো সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা পিআইএফে। এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হতো নানা ধরণের প্রকল্পে। সৌদি আরামকোর বাকি ৯৫ শতাংশ মালিকানাও চলে যেতো এই তহবিলের কাছে।

সৌদি আরামকো'র কর্মকর্তারা বিশ্বের শেয়ার বাজারের ইতিহাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় আইপিও বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং এর ব্যাপারে কথা বলেছিলেন বিশ্বের বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর সাথে, ব্যাঙ্কগুলোর সাথে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে। এই চিন্তাটি ছিল ৩২ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের।

এই কোম্পানির ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে  শেয়ার বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কারণ ছিল তেলের দাম পড়ে যাওয়ার পর সৌদি আরবের মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কট। গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের টানা দরপতন সৌদির উন্নয়নকে ‘পঙ্গু’ করে দিয়েছে। এখন দেশটি তেলে নির্ভরতা কমাতে চাইছে। সৌদি অর্থনীতি সংস্কারে ভিশন-২০৩০ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে- আইপিও’র স্থান ও শেয়ার বন্টন নিয়ে এখনো কাজ চলছে। আইপিও এর ধরণ ও  কখন হবে সে সময় চূড়ান্ত হয়নি। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আরামকো কোম্পানি প্রতিদিন সর্বোচ্চ এক কোটি ৭২ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করেছিল। ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে বাড়তি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন শুরু করে। এত পরিমাণ বাড়তি খনিজ তেল উত্তোলন সর্বকালীন রেকর্ড। বাড়তি তেল উত্তোলন ও রফতানির জন্য সৌদি সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী নভেম্বর মাসে মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম দেখতে চান ট্রাম্প৷

বাজারে শেয়ার ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই সৌদি আরামকো নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল বিশ্বের বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যে। সবাই চাইছিল আরামকো'র আইপিও তাদের বাজার থেকেই ছাড়া হোক। ২০১৭ সালের মে মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের সৌদি আরব সফরের সময় তার সাথে ছিলেন লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ কর্মকর্তা। সেখানে তারা আরামকোর শেয়ার লন্ডন থেকে ছাড়ার জন্য দেনদরবার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রীতিমত টুইট করে সৌদি আরবের প্রতি আহবান জানিয়েছেন, আরামকো-কে যেন নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করা হয়। সৌদি কর্মকর্তারা বলছিলেন, তারা লন্ডন, নিউইয়র্ক, টোকিও এবং হংকং - এই সব কটি শেয়ার বাজারকেই তাদের বিবেচনায় রেখেছেন।

সৌদি আরামকো বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ও গ্যাস কোম্পানি। সৌদি আরবের  পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক জাতীয় কোম্পানীটির পর যে কোম্পানিটি দ্বিতীয় স্থানে আছে, তার চাইতেও এটি বহুগুণ বড়। বিশ্বের মোট রিজার্ভের ১৫ শতাংশেরও বেশি বা প্রায় ২৬৫ বিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আছে সৌদি আরামকোতে। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্কিন কোম্পানি এক্সনের তেলের রিজার্ভ হচ্ছে ১৩ বিলিয়ন ব্যারেল।

বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি সৌদি আরামকো-কে একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বাজার মূল্যের হিসেবে সৌদি আরামকোর মূল্য হচ্ছে ২ ট্রিলিয়ন হতে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, ১ ট্রিলিয়ন মানে ১ লাখ কোটি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাপলের বাজার মূল্য হচ্ছে ৮৭৬ বিলিয়ন ডলার। আর গুগলের পেরেন্ট কোম্পানি অ্যালফ্যাবেটের বাজার মূল্য ৭৫৫ বিলিয়ন ডলার।

১৯৩৩ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বরে একদল আমেরিকান জিওলজিস্ট এসে নেমেছিল সৌদি আরবের পারস্য উপসাগর তীরের বন্দর জুবেইলে। সে বছরের জুলাই মাসেই ঘাওয়ার তেল ক্ষেত্র আবিস্কারের পর সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ মার্কিন কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড অয়েল'কে সৌদি আরবে তেল অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়েছেন। তার সূত্র ধরেই এই বিজ্ঞানীদের সৌদি আরবে আসা। সৌদি আরব সরকার আর মার্কিন কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মধ্যে এই চুক্তির পথ ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যারাবিয়ান আমেরিকান অয়েল কোম্পানি (আরামকো)।

সৌদি সরকারকে প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড ছাড়াও আয় অনুযায়ী অর্থ দেয়ার অঙ্গীকার করে আরামকো। আরামকো সৌদি আরবের কিছু এলাকায় তেল অনুসন্ধানের একচেটিয়া অনুমতি পায়। আরামকোর প্রকৌশলীরা জানতেন, সৌদি আরবে তেল আছে। কিন্তু কোথায়, সেটাই ছিল প্রশ্ন। ১৯৩৮ সালে দাহরানের কাছে দাম্মাম তেল ক্ষেত্র আবিস্কার করলো তারা। ১৯৫০ সালে সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ আরামকো জাতীয়করণের হুমকি দিলে আরামকো তাদের লভ্যাংশ সৌদি সরকারের সাথে আধাআধি ভাগ করতে রাজি হয়।

১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষ নেয়ার পর সৌদি আরব সরকার আরামকোর ২৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে নেয়। ১৯৭৪ সাল নাগাদ সৌদি সরকারের মালিকানা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ শতাংশে। আশির দশক নাগাদ পুরো কোম্পানিকেই রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ে আসে সৌদি সরকার।

রোবোটিক শহর নির্মাণ করছে সৌদি আরব
ব্লুমবার্গ , ০৩ আগস্ট ২০১৮

সৌদি বাদশাহ সালমান প্রথমবারের মতো দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর নিওমে তার মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন। প্রায় পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে রোবোটিক শহর। এই শহরটিতে মানুষের চেয়ে রোবটের সংখ্যাই হবে বেশি।

সৌদি সরকারি বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, বাদশাহ শহরটিতে বৈঠকের পর কিছু সময় বিশ্রাম ও বিনোদন করেছেন। সরকারি এই প্রকল্পে যে বাদশাহর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এটা তারই ইঙ্গিত। শহরটিতে সৌদির শীর্ষ অর্থনৈতিক কাউন্সিলের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যক্তিগত দফতরের প্রধান বদর আল আসাকের বলেছেন, ‘এটা একটি স্বপ্নের শহরের ঐতিহাসিক আরম্ভ’।

গত বছরের অক্টোবরে দেয়া এক সাাৎকারে যুবরাজ মোহাম্মদ বলেছিলেন, ‘আজকের সৌদি আরবে যে জীবনযাত্রা নেই তার প্রতিশ্রুতি মিলবে ওই নগরীটিতে। মানবতার জন্য এটা হবে সভ্যতার একটি লাফ।’ তিনি জানিয়েছিলেন, শহরটিতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ প্রতিটি জিনিসের সংযোগ থাকবে। মিসরের সাথে এই শহরটির সংযোগ স্থাপনের জন্য লোহিত সাগরের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হবে সেতু।


আরো সংবাদ



premium cement