১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরানকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা!

ইরানকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা! - সংগৃহীত

ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক জাহাঙ্গিরি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে ইরানকে ‘আত্মসমর্পণ’ করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সাথে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করবে তাদের যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করবে।

ইসহাক জাহাঙ্গিরি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার অধীনে আমাদের সবার জন্য প্রথম অগ্রাধিকার হলো— দেশটি এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যেন সাধারণ মানুষের ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে আমাদের সমাজে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে পশ্চাদপসরণ ও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করছে।

ইসহাক জাহাঙ্গিরির মতো একইরকম মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। যদিও তিনি তার মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে হাসান রুহানি বলেছেন, আমরা আমাদের শক্রকে আমাদের হাঁটুর কাছে নিয়ে আসবো না। যদি শক্ররা মনে তারা আমাদের পরাজিত করবে— তাদের এ আশাকে তারা যেন সাথে করে কবরস্থানে নিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা আসলে চুক্তির শর্তাবলীকে ধ্বংস করছে।

ইরানের ইউএস ডলার কেনা, ধাতু বাণিজ্য, কয়লা, কারখানা সংক্রান্ত সফটওয়্যার এবং যানবাহন খাতকে লক্ষ্য করে এ নতুন এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যদিও ইরানের তেল রফতানির লক্ষ্যমাত্রার সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপগুলো চার মাস ধরে কার্যকর হচ্ছে না।

এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করছে। তবে নতুন এ নিষেধাজ্ঞা প্রভাবের ক্ষমতা প্রধানত ইউরোপীয় ও এশিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দেখাতে পারে ওয়াশিংটন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা সোমবার প্রত্যাখ্যান করেছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। অপরদিকে দেশটিতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি, চাকরির অভাব ও রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার ইরানি। যদিও এসব প্রতিবাদ প্রায়শই সরকার বিরোধী সমাবেশে রূপ নেয়।

এবার তেল অস্ত্র প্রয়োগ করবে ইরান!

১৬ আগস্ট ২০১৮

ইরানের বিরুদ্ধে আসন্ন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৫০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিখ্যাত হেজ ফান্ড এ সতর্কবার্তা দিয়েছে।

আগামী ৪ নভেম্বর থেকে আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। আমেরিকা বলছে, সেই নিষেধাজ্ঞা এত কঠোর হবে যে, তার ফলে ইরান বিশ্বের কোথাও জ্বালানি তেল বিক্রি করতে পারবে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানি তেলের শূন্যস্থান পূরণ করবে সৌদি আরব। এজন্য দেশটি প্রতিদিন বাড়তি ২০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করবে।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, ট্রাম্পের এ বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ এটা এক কাপ কফি অর্ডার করা নয়; কেউ চাইলেই এক কাপ কফির মতো ২০ লাখ ব্যারেল তেলের অর্ডার দিতে পারে না।

গত ৮ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর গত ৬ আগস্ট ইরানের বিরুদ্ধে প্রথম দফার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর প্রভাবে এরইমধ্যে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৮ ডলার ছাড়িয়েছে।

হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে ইরান!

২৫ জুলাই ২০১৮

ইরানের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, ইরানের তেল রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়া হবে৷ কিন্তু তেহরান কি আন্তর্জাতিক তেল বাণিজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পথ বন্ধে সক্ষম?

ইরানের তেল রফতানি বন্ধ করে দেয়ার যেসর্বশেষ হুমকি ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন, তার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেহরান৷ ইরানের প্রসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সেরকম কিছু করলে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে৷ আরব উপসাগরে পানিপথে তেল পরিবহণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট এই প্রণালী৷ এই পথ বন্ধ করা হলে তা গোটা বিশ্বের তেল বাজারে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে৷ তেল পরিবহণে চরম বিঘ্ন ঘটবে এবং তেলের দাম মুহূর্তের মধ্যেই অনেক বেড়ে যাবে৷

ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে সরে আসার পরপরই ওয়াশিংটন আন্তর্জাতিক তেল বাজার থেকে ইরানকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে এবং নভেম্বরের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ইরানের কাছ থেকে অশোধিত তেল কেনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়৷

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রোববার আরো কঠোর পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন৷ ইরানের উপর বাড়তি আর্থিকনিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেছেন তিনি৷ তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, ইরান যদি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় এবং আঞ্চলিক সঙ্ঘাতে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে সেদেশের উপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে না৷

নিজের বক্তব্যে পম্পেও ইরানের উপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সমাজেরও সহায়তা চেয়েছেন৷ তবে, এখন অবধি ইরান ছাড়া অন্য কোনো দেশ এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷ সেদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যামেরিকার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানিয়েছেন যে, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের চেষ্টা করলে তার পরিণাম ভয়াবহ হবে৷

যে কারণে হরমুজ প্রণালী এত গুরুত্বপূর্ণ

পারস্য উপসাগর এবং ওমান উপসাগরকে সংযুক্ত করেছে হরমুজ প্রণালী৷ বিশ্বের অন্যতম বড় কয়েকটি অশোধিত তেল উৎপাদক দেশ এই পানিপথ দিয়েই তাদের তেল রপ্তানি করে থাকে৷ এসব দেশের মধ্যে রয়েছে কুয়েত, বাহরাইন, ইরান, ইরাক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত৷

যেহেতু শীর্ষ পাঁচ তেল রফতানিকারক দেশের অবস্থান আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে, সেহেতু হরমুজ প্রণালী থেকে তেল পরিবহনের পরিমাণ ক্রমশই বাড়ছে৷ কালো সোনা বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ হচ্ছে এটি৷

সমুদ্রপথে বিশ্বের যে পরিমাণ তেল পরিবহণ করা হয়, তার এক তৃতীয়াংশই এই প্রণালী ব্যবহার করে পরিবহণ করা হয়৷ আর কাতার যেহেতু বিশ্বের অন্যতম বড় তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) উৎপাদক, সেহেতু ওই গ্যাসের প্রায় পুরোটাই হরমুজ প্রণালী দিয়ে বর্হিবিশ্বে রফতানি করা হয়৷

বিশ্ব অর্থনীতি যতদিন তেলের উপর নির্ভরশীল থাকবে, ততদিন এই প্রণালী থেকে তেল পরিবহনে কিছুটা বা অল্পসময়ের জন্য বিঘ্ন ঘটলেও তেলের বাজারে সেটির নাটকীয় প্রভাব পড়তে বাধ্য৷ কেননা এতে কুয়েত, বাহরাইন, ইরাক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে৷ আর সৌদি আরব তখন শুধুমাত্র লোহিত সাগরে থাকা সমুদ্রবন্দর থেকে তেল রপ্তানি করতে বাধ্য হবে৷

কিন্তু হরমুজ প্রণালী কি বন্ধ করা সম্ভব?

১৯৮২ সালে স্বাক্ষরিত জাতিসংঘের সমুদ্র আইন সম্পর্কিত কনভেনশন অনুযায়ী একটি দেশের তটরেখা থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল অবধি সেই দেশের সমুদ্রসীমা হিসেবে বিবেচিত হবে৷ এখন পারস্য উপসাগরে যেতে যেসব সমুদ্রযান উত্তর ও দক্ষিণ রুট ব্যবহারে বাধ্য হয় সেগুলোকে তাত্ত্বিক বিবেচনায় বাধা দিতে পারে ইরান৷

তবে জাতিসঙ্ঘের এ-সংক্রান্ত কনভেনশনের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাও দিতে পারে ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ইরান সরকার ১৯৮২ সালে তাতে স্বাক্ষর করলেও সেটি কখনোই সে দেশের সংসদে অনুমোদিত হয়নি৷ তাছাড়া পানিপথটি ব্যবহারে বাধা দিয়ে ইরান তার প্রতিবেশীতেল রফতানিকারী দেশগুলো, এবং তেল আমদানিকারক দেশগুলোর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি করতে সক্ষম হলেও নিজেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কেননা, প্রণালীর কিছু অংশ তখন সে দেশও ব্যবহার করতে পারবে না৷

আর, তেহরান শুধু এখনই নয়, অতীতেও হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে৷ মোটের উপর, এই প্রণালী নিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বহু দশক ধরেই একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে৷


আরো সংবাদ



premium cement