স্পেন, সৌদি আরব ও কানাডাকে পেছনে ফেলবে ইরান
- ফার্স, আইএমএফ ও মেহের নিউজ
- ১৫ আগস্ট ২০১৮, ০৯:২০
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড) এক পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী তিন বছর পর অর্থাৎ ২০২১ সালে ইরান হবে বিশ্বের ১৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতি। স্পেন, সৌদি আরব ও কানাডাকে পেছনে ফেলে ইরান এই অবস্থানে উঠে আসবে বলে সংস্থাটি মন্তব্য করেছে।
সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭ সালে ইরানের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন ছিল মার্কিন মুদ্রায় ১৬৪৪ বিলিয়ন ডলার (বা এক লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার) এবং এরই আলোকে দেশটি বিশ্বের ১৮ তম বৃহত্তম অর্থনীতি। আর ২০২১ সালে ইসলামী এই দেশটির জিডিপি হবে ২ হাজার ৯৫ বিলিয়ন ডলার বা দুই লাখ একুশ হাজার কোটি ডলার।
অন্যদিকে চীনের জিডিপি ২০২১ সালে হবে ২৩ হাজার এক শত ৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং এর ফলে ওই বছর চীন হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। আর ওই বছর মার্কিন জিডিপি হবে ১৯ হাজার ৩৯০ বিলিয়ন ডলার এবং ভারতের জিডিপি হবে নয় হাজার ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার। ফলে এ দুটি দেশের অর্থনীতি হবে যথাক্রমে বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
সামরিক ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে ইরান
‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উদ্দেশ্য কেবল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও আত্মরক্ষামূলক’। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ কথা বলেছেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লা দ্রিয়াঁ আরটি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাতকারে দাবি করেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কেবল প্রতিরক্ষার জন্য নয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি তার দেশের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয় উল্লেখ করে বলেছেন, ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসহ গত কয়েক দশকে তেহরান সামরিক দিক দিয়ে ব্যাপক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, শত্রুদের হুমকি ও অশুভ চক্রান্ত রুখে দেয়ার জন্য ইরান সামরিক শক্তি অর্জন করেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাশ্চাত্য এখন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে টার্গেট করেছে। এ লক্ষ্যে একদিকে তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রকে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এ ক্ষেত্রে ইরানের শক্তিকে দুর্বল করার পায়তারা করছে।
বিশ্লেষকরা পাশ্চাত্যের এ আচরণকে দু'দিক থেকে মূল্যায়ন করছেন। প্রথমত, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং যে কোনো হুমকি মোকাবেলায় নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা জরুরি। এ অবস্থায় পাল্টা আক্রমণের যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি বৈধ বিষয় এবং এ নিয়ে কোনো সংলাপ কিংবা আপোষ হবে না। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সম্মিলিতভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি আরব দেশের সম্মিলিতভাবে নিরাপত্তা রক্ষার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই। সব কিছুতে তারা কেবল পাশ্চাত্যের সাহায্য ও সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। পাশ্চাত্যের ইন্ধনে এ দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে চলেছে। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট গত আগস্টে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরান ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং এটা তাদের আত্মরক্ষার প্রধান মাধ্যম।
ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যদিও পরমাণু সমঝোতা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করেছে কিন্তু তারপরও এই চুক্তিতে তেহরানকে ধরে রাখার জন্য ইউরোপের সঙ্গে চলমান সংলাপে তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্বেগ ও সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ইউরোপের ধারণা হয়তো এভাবে পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্রদের খুশী রাখা যাবে। যদিও তাদের এ ধরণের চিন্তা একেবারেই ভুল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনী এই চুক্তি টিকিয়ে রাখার অজুহাতে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের উপস্থিতির বিষয়ে কোনো আপোষ করা যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
নিজস্ব প্রযুক্তিতে উন্নত ট্যাঙ্ক বানাচ্ছে ইরান
ইরানের সামরিক বাহিনীকে আরো ৮০০ ট্যাংক সরবরাহ করা হবে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব ট্যাঙ্ক আইআরজিসি এবং ইরানের সেনাবাহিনীকে দেয়া হবে। এর মধ্যে ইরানের বিখ্যাত কারার ট্যাঙ্কও থাকবে।
ইরানের উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রেজা মোজাফফারি-নিয়া বুধবার বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজকে একথা জানান। তিনি জানান, সেনাবাহিনী এবং আইআরজিসি’র চাহিদা পূরণের জন্য ইরান প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০টি ট্যাঙ্ক তৈরি করে।
গত বছরের মার্চ মাসে ইরান উন্নতমানের কারার ট্যাঙ্কের উদ্বোধন করে। উভচর শ্রেণির এ ট্যাঙ্ককে ইরানি প্রতিরক্ষা খাতের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হোসেইন দেহকান বলেছিলেন- গোলাবর্ষণের ক্ষমতা, নিখুঁতভাবে গোলা নিক্ষেপ এবং চলাচলের ক্ষমতার কারণে এ ট্যাঙ্ক বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ট্যাঙ্কের অন্যতম। এতে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় এবং ট্যাঙ্কটি দিনে ও রাতে সমানভাবে কাজ করতে পারে।
কারার হচ্ছে ইরানে তৈরি প্রথম ট্যাঙ্ক যার পুরোটাই নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। এতে রয়েছে ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল ফায়ার কন্ট্রোল ব্যবস্থা, লেসার রেঞ্জফাইন্ডার এবং ব্যালিস্টিক কম্পিউটার অ্যান্ড অ্যাবিলিটি। এ ট্যাঙ্কের সাহায্যে রাতে ও দিনে একইভাবে অভিযান চালানো যাবে। এছাড়া, এ ট্যাঙ্ক গর্ত, নদী এমনকি পানির নিচ দিয়ে চলতে পারবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান সামরিক খাতে বিপুল অগ্রগতি লাভ করেছে। ইরানের প্রতিরক্ষা বিভাগের তৈরি নানা ধরনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম এরইমধ্যে বিভিন্ন মহড়ায় পরীক্ষা করা হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে ইরান আকারেব নামে একটি নতুন ধরনের যুদ্ধট্যাঙ্ক উদ্বোধন করে। এ ট্যাঙ্কে ৯০ মিলিমিটারের কামান বসানো হয়েছে এবং চারজন সেনা বহন করতে পারে।
নতুন রোডম্যাপ তৈরি করছে ইরান
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনী বলেছেন, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে টেকসই অর্থনৈতিক রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। রোড ম্যাপ তৈরি হলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তৎপর ব্যক্তি তথা জনগণ তাদের করণীয় বুঝতে পারবে এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবে।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমেরিকার মতো গুটি কয়েক দেশের বাইরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক দ্রুত জোরদার করতে হবে । ইরান সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে সক্ষম হবে।
রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ইউরোপে দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, বিজাতীয় শক্তি বিশেষকরে আমেরিকার মোকাবেলায় দৃঢ়তা প্রদর্শন জরুরি। দৃঢ়তা প্রদর্শনের কাজটি করতে হবে সময় মতো, সুস্পষ্ট ও জোরালোভাবে।
তিনি বলেন, ইউরোপের পক্ষ থেকে অবশ্যই পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা দিতে হবে। তবে ইরানের অর্থনীতিকে ওই সমঝোতার সাথে জড়িয়ে ফেলা যাবে না এবং সেটার জন্য সময়ক্ষেপণও করা যাবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা