২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘাটে ঘাটে ‘খরচ’ বাড়ছে পশুর দাম

‘খরচ’ বাড়ছে পশুর দাম - ছবি : সংগৃহীত

ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে গিয়ে বাড়ছে পশুর দাম। এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গেলেই পশু প্রতি দাম বেড়ে যাচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার। বিক্রেতারা বলেছেন, তাদের লস হবে না। তবে বাড়তি টাকা গুনতে হবে ক্রেতাদের। গড়ে প্রতিটি পশুতে বেশি গুনতে হবে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই পশু পরিবহনের বাহনসহ নানা সরঞ্জামে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি শুরু করেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

কোরবানির আর মাত্র ৯ দিন বাকি। ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কোরবানির পশু সংগ্রহ করে বড় বড় শহর ও হাটবাজারে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে পশু সংগ্রহ করে জড়ো করছেন। আস্তে আস্তে এগুলো শহরে পাঠাবেন তারা। কিন্তু শুরুতেই তারা সঙ্কট দেখছেন নানা সরঞ্জামের। সিদ্দিকুর রহমান নামে এক পশু ব্যবসায়ী বলেছেন, ঘাটে ঘাটে তাদের টাকা গুনতে হচ্ছে। পশু সংগ্রহ করে জড়ো করতেই পথে পথে শেষ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা। আর হাটে পাঠাতে কত জরিমানা গুনতে হয় তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। সিদ্দিকুর নোয়াখালী-চট্টগ্রামসহ ওই এলাকার হাটবাজারে পশু সরবরাহ করে থাকেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনি পশু সংগ্রহ করে থাকেন। তিনি বলেন, একটি পশু কিনে তার বাড়িতে নিতে বাড়তি অন্তত এক হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। দেখা যায়, এক স্থান থেকে কিনে অন্য স্থানে নেয়ার সময় কয়েকটি স্থানে চাঁদা দিতে হয়। ভোলা থেকে গরু যখন ট্রলারে তোলেন তখন গরু প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। আবার লক্ষ্মীপুর গিয়ে ঘাটে যখন ট্রলার থেকে গরু নামানো হয় তখনো ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দিতে হয়। সিরাজগঞ্জের এক ব্যবসায়ী জানান, চরাঞ্চল থেকে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি ফেরার পথে এখনই টাকা গুনতে হচ্ছে পথে পথে। এই টাকা আবার আদায় হবে ক্রেতাদের কাছ থেকে।

কোথাও কোথাও এখনই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ঘাটগুলোতে ট্রাক আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাকগুলো আটকে থাকলে এমনিতেই পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত ও ফেরি সঙ্কট থাকার কারণে উভয় ঘাটে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক অপেক্ষা করছে। গত কয়েক দিন থেকেই দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পণ্যবাহী ট্রাকের সারি এবং দৌলতদিয়া ট্রাক টার্মিনালে দুই শতাধিক ট্রাক আটকে রয়েছে। সময় মতো ফেরি পার হতে না পেরে উভয় ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানী ও চট্টগ্রামমুখী অর্ধশতাধিক কোরবানির পশুবাহী ট্রাকও রয়েছে বলে জানা গেছে। ট্রাক চালকেরা জানান, ঘাটে ১২ ঘণ্টা করে ফেরির জন্য বসে থাকায়; পশুর খাবার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে হাটে পশুর দাম বেড়ে যাবে।

ট্রাফিক সার্জন মৃদুল কান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেছেন, কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে পণ্যবাহী ট্রাক পারের অপেক্ষায় থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট ম্যানেজার মো: শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৫টি ছোট-বড় ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়া পারে ছয়টি ঘাটের মধ্যে পাঁচটি সচল রয়েছে। আর রাতে ছোট ফেরিগুলো চলতে পারে না। এ ছাড়াও পুরনো দুর্বল পাঁচটি রো রো ফেরি তীব্র স্রোতের বিপরীতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার মাত্র পাঁচ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগছে। ২৪ ঘণ্টায় ওই দুর্বল ফেরিগুলো তিনটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। ফলে ঘাটে যানজট থেকেই যাচ্ছে। একই অবস্থা মাওয়া ফেরিঘাটেও। সেখানেও শত শত ট্রাক আটকে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই ট্রাকগুলো আটকে থাকলে এমনিতেই পরিবহন সঙ্কট সৃষ্টি হবে। তখন পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে।

বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, বিভিন্ন স্থানে এভাবে গাড়ি আটকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। কাঁঠালবাড়ি-কাওরাকান্দি রুটে ভয়াবহ অবস্থা। সেখানে গাড়ি আটকে এক পরিবহন শ্রমিক নেতা সরাসরি টাকা আদায় করছেন। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।


আরো সংবাদ



premium cement