২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিরিয়ায় বাশারের পক্ষে নামতে চায় চীন

সিরিয়ায় বাশারের পক্ষে নামতে চায় চীন - ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ দিন ধরে চীন কোনো দেশকে সরাসরি সামরিক সাহায্য দেয়ার বিষয়টিকে এড়িয়ে চলছিল। কিন্তু এ মাসের প্রথম দিকে চীনের রাষ্ট্রদূত সিরিয়া সফরে গিয়ে ইঙ্গিত দেন, বহুদিনের এ ধারা ভেঙে সিরিয়াতে সরাসরি সামরিক সাহায্য দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে বেইজিং। 

বাশার আল-আসাদের পক্ষে চীনের সরাসরি সামরিক সাহায্য মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিকে পাল্টে দেবে। গত ১ আগস্ট চীনের রাষ্ট্রদূত কি কিয়ানজিন সিরিয়ার সরকারপন্থী বার্তা সংস্থা আল ওয়াতানকে জানান, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ইদলিবসহ দেশের যেসব স্থানে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, চীনের সামরিক বাহিনী এ ক্ষেত্রে তাদের সাথে অংশ নিতে চায়। এ সময় রাষ্ট্রদূত চীন ও সিরিয়ার সামরিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন। 

সিরিয়াতে নিযুক্ত চীনের সামরিক অ্যাটাশে ওঙ রয় চ্যাঙ বলেন, সিরিয়া ও চীনের সামরিক সহযোগিতা আগে থেকেই চলমান ছিল। এখন আমরা সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো উন্নত করতে চাই। তবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে। 

এর আগে গুজব ছিল চীন সিরিয়ায় তাদের সামরিক উপদেষ্টা বা বিশেষ বাহিনী প্রেরণ করবে। তবে সেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং চীন সেগুলো প্রত্যাখ্যান করে। তবে চীনের রাষ্ট্রদূত যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা যদি সত্য হয়, তাহলে তা চীনের মৌলিক নীতিমালা থেকেই সরে যাওয়ার মতো হবে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিকে অনেকাংশে পাল্টে দেবে। 
সিরিয়াতে লড়াই শুরু হওয়ার সময় থেকেই রাশিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষ নেয় রাশিয়া। আর রাশিয়াকে সে ক্ষেত্রে পূর্ণ সমর্থন দেয় চীন। সিরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ তদন্ত চালাতে চাইলেও দেশ দু’টি তাদের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাতে বাধা দেয়। চীন এ ক্ষেত্রে তাদের আগের রেকর্ড ভঙ্গ করে অনেক বেশিবার এ ক্ষেত্রে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

কিন্তু কেন?
কেনো দীর্ঘ দিনের ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে চীন সিরিয়ায় সামরিক সাহায্যে নামতে চাচ্ছে? এর উত্তরে তিনটি পয়েন্টের কথা বলা হচ্ছেÑ প্রথমত চীনের সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন, দ্বিতীয়ত সিরিয়ায় উদ্ভব হওয়া চীনের মুসলিম বিদ্রোহী দমন এবং তৃতীয়ত সিরিয়া পুনর্গঠনে যে সম্ভাব্য চুক্তিগুলো তাতে অংশ নেয়া। 
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের এশিয়াবিষয়ক কর্মকর্তা অ্যাবিগিল গ্রেস বলেন, চীনের সেনাবাহিনী অনেক উন্নত হলেও তারা আসল যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারছে না। ফলে তারা এ যুদ্ধে অংশ নিতে চাচ্ছে। এ কারণেই তারা জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষীবাহিনীতে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করছে। ২০১৫ সালে আট হাজার সৈন্য অথবা মোট শান্তিরক্ষী বাহিনীর ২০ শতাংশের জোগান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কারণ এই প্রত্যক্ষ যুদ্ধের মাধ্যমেই চীন তাদের সেনাদের দক্ষতা এবং অস্ত্রশস্ত্রের কার্যকারিতার প্রমাণ পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই এসব ফর্মূলা ব্যবহার করছে। 

কিন্তু যেখানে চীনের পররাষ্ট্র নীতিতেই অন্য দেশে সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি নেই সেখানে তাদের নতুন এই প্রস্তাবটি কিভাবে কাজ করবে? এর উত্তরে তারা বলছে, এটি তাদের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমেরই অংশ। কেননা, তাদের ভাষায় কয়েক হাজার তুর্কিভাষী উইঘুর মুসলিম সিরিয়ায় লড়াই করছে। তারাই আবার চীনে গিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। চীন যদি সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নেয়, তাহলে এসব যোদ্ধাকে সিরিয়াতেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া বা আটক করা সম্ভব হবে, যাতে তারা আর চীনে ফিরে যেতে না পারে। 

আর সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছেÑ সিরিয়ার যুদ্ধ এখন শেষের দিকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়াকে পুনর্গঠনে প্রচুর অর্থ ব্যয় হবে। রাশিয়া ও ইরানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে এ সংক্রান্ত চুক্তিগুলো হচ্ছে। চীনও এ চুক্তিগুলোতে অংশীদার হতে চায়। এ তিনটি বিষয় বাস্তবায়ন হলে চীন এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লাভবান হতে পারবে। 
তবে এ ক্ষেত্রে প্রথমত বেইজিংয়ের আনুষ্ঠানিক সম্মতির প্রয়োজন হবে। তারও আগে প্রয়োজন হবে চীনের অন্যতম প্রধান মিত্র রাশিয়ার সম্মতি। কেননা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শুরু থেকেই রাশিয়া সেখানে নিজেদের ভূমিকা রেখে চলছে। ফলে তারা সেখানে নিজেদের সিরীয় সরকারের প্রধান সহযোগী বলেই মনে করে।


আরো সংবাদ



premium cement