২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদি আরবকে ক্ষেপিয়ে বিপদে কানাডা : মিত্রদের দ্বারস্থ ট্রুডো সরকার

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো - ছবি : সংগ্রহ

সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাগ গলাতে গিয়ে ভালোই বিপদে পড়েছে কানাডা। সর্বশেষে কানাডায় সৌদি নাগরিকদের সব ধরনের চিকিৎসা কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব। এমনকি দেশটিতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন যেসব সৌদি নাগরিকরা আছেন তাদের কানাডার বাইরে অন্য কোথাও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার বিষয়ে কাজ চলছে। সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে একথা।

এদিকে সৌদি আরবের সাথে অচলাবস্থা কাটাতে সৌদি আরবের মিত্রদের দারস্থ হয়েছে কানাডার সরকার। তারা চায় দ্রুত এই অচলাবস্থা কাটাতে। যদিও তাতে এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। সৌদি আরবের মানবাধিকার নিয়ে মন্তব্য করে ভালোই বিপাকে পড়েছে অটোয়া। তাদের অবস্থা এখনে অনেকটাই ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’।

সৌদি আরবের সাথে অচলাবস্থা কাটাতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ব্রিটেনের সহযোগিতা চেয়েছে কানাডা, এক গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দেশ দুটিকে কানাডা অনুরোধ করেছে এই সঙ্কটে মধ্যস্ততা করতে।

অন্যদিকে কানাডার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ও সামরিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের রেখেছে এই সঙ্কটের সাইডলাইনে। দেশটি বলেছে, তারা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। ফলে সৌদি আরবকে চটিয়ে কানাডা যে বড় বিপদে পড়েছে সেটি নিশ্চিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি রয়টার্সকে জানিয়েছে, সৌদি আরবের আঞ্চলিক মিত্রদের দারস্থ হবে কানাডা। এর মধ্যে প্রধান হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা চায় দ্রুত বিষয়টি মীমাংসা করতে। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, কানাডা এই সঙ্কট কাটাতে ব্রিটেনের সহযোগিতাও চাইছে। মঙ্গলবার ব্রিটেন সরকার উভয় দেশকে মাথা ঠাণ্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে বিষয়টি নিয়ে দেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করেছে কানাডার জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। তাদের পরামর্শেই হয়তো সৌদি মিত্রদের দারস্থ  হচ্ছে তারা।

কিন্তু সৌদি আরব রয়েছে অনড় অবস্থানে। শুধু তাই নয়, কানাডার বিরুদ্ধে তাদের কঠোরতা আরো বাড়ছে। সৌদি আরব আগেই জানিয়ে দিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের নাগ গলানো সহ্য করবে না তারা। সর্বশেষ চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে কাোডার প্রতি সৌদি আরবের কূটনৈতিক কঠোরতা আরো জোরদার হলো।

সৌদি আরবে নারী ও মানবাধিকার কর্মীদের আটকের প্রতিবাদ করার সম্পর্ক ছিন্ন করার ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলো। এর আগে কানাডার সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি বাতিল ও কূটনীতিককে বহিষ্কারও করে সৌদি আরব। এমনকি সৌদি আরব থেকে সরাসরি কানাডাগামী বিমান চলাচলও বন্ধ করে দেয় দেশি।

গত ১ আগস্ট ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ জানিয়েছিল, সৌদি আরব কয়েকজন অধিকারকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত সামার বাদাবি। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শুক্রবার অন্য অধিকারকর্মীদের পাশাপাশি সামার বাদাবির ‘অবিলম্বে মুক্তি’ দাবি করেছিল কানাডা। কানাডার এই ‘অবিলম্বে মুক্তির দাবি’ ভালো লাগেনি সৌদি আরবের।

কানাডার আহ্বানের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব বলেছিল, ‘কানাডার বক্তব্য সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খোলাখুলি হস্তক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও বিধির খেলাপ।’ এরপরই কানাডার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে আরব দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নিযুক্ত সৌদি স্বাস্থ্য দূত ডা. ফাহাদ বিন ইব্রাহিম আল তামিমির বরাত দিয়ে সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সৌদি নাগরিকদের জন্য কানাডায় চিকিৎসা নেওয়া বন্ধ করতে যাচ্ছে তারা। এখন থেকে চিকিৎসার জন্য কানাডায় কোনও রোগী পাঠাবে না দেশটি। এমনকি যেসব রোগী এখন সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদেরও অন্য দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। অধিকারকর্মীদের আটকের প্রতিবাদ জানানোয় সৌদি আরব কানাডার বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্থা নিচ্ছে।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড সৌদি আরবের এসব প্রতিক্রিয়ায় বিষয়ে বলেন, বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন কানাডা মানবাধিকার, নারী স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব মূল্যবোধকে সমর্থন করতে কখনওই দ্বিধান্বিত হবো না। আমরা বিশ্বাস করি, এই আলোচনা আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য মারাত্মক হবে।’

যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের হাত ধরে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি নিয়েছে সৌদি আরব। নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানসহ অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। সেই সাথে তারা চলছে দাপুটে পররাষ্ট্রনীতির পথে। সৌদি আরব আগেই জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না তারা।

আরো পড়ুন : চীনকে খুশি রাখতে পিছু হটল ভারত

চীনের বিরুদ্ধে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রকল্প থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত। বেইজিংকে ক্ষুব্ধ না করার নরেন্দ্র মোদি সরকারের যে কৌশল, এটি তারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ করতে পারে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে। অনেকদিন ধরেই এই অঞ্চলে চীনের বিরোধীতায় ভারতে কাজে লাগাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

সিঙ্গাপুরে গত ১ জুন শাংগ্রি লা সংলাপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, এই মহাসাগরীয় অঞ্চলকে তিনি কখনওই ‘হাতে গোনা কিছু সদস্য দেশের কৌশলগত ক্ষেত্র’ হিসেবে দেখেন না। তখনই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল, চীনের সাথে সংঘাত এড়িয়েই মহাসাগরীয় নীতি তৈরি করা হবে। ৩০ জুলাই জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার উদ্যোগে ওই অঞ্চলেই পরিকাঠামো সংক্রান্ত যে প্রকল্প ঘোষণা হয়, তাতে থাকার কথা ছিল ভারতেরও; কিন্তু ওই প্রকল্প থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে নয়াদিল্লি।


ভারতের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে আমেরিকার সঙ্গে যে বৈঠকটি হতে চলেছে, সেখানে প্রসঙ্গটি ফের উত্থাপন করে ভারতের উপর চাপ তৈরি করবে ওয়াশিংটন। বলা হবে ওই উদ্যোগে শামিল হতে। সেখানে কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তার প্রস্তুতি শুরু করেছে নয়াদিল্লি।

এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে ত্রিপাক্ষিক প্রকল্পটি শুরু হল, তাকে চীনের ওবর প্রকল্পের পাল্টা হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। এটা ঘটনা যে ভারত এখনও ঘোষিত ভাবে ওবর-এর বিরোধী; কিন্তু একই সাথে তারা এই মুহূর্তে নতুন করে এমন কোনও বার্তাও বেজিংকে দিতে চায় না যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আবার সঙ্কট তৈরি হয়।

উহানে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সাথে ঘরোয়া বৈঠকের পর থেকেই ডোকলাম-ক্ষতে প্রলেপ দিতে তৎপর হয়েছে মোদি সরকার। মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে জোট বেঁধে নেতৃত্ব দান থেকেও ধীরে ধীরে পিছু হঠেছে মোদী সরকার।

শাংগ্রি-লায় তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোনও বিশেষ দেশের (চীন) বিরুদ্ধাচরণ করা তাঁর কাম্য নয়। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ভারতের এই পরিবর্তিত অবস্থান ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলির কাছে হতাশাজনক হলেও নয়াদিল্লি এক্ষেত্রে অটল। নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় বাধ্যবাধকতার দিকটি বিবেচনা করে শক্তিশালী প্রতিবেশী চীনের সাথে নরম নীতি নিয়েই এগোনোটাই এখন বিজেপি সরকারের কাছে জরুরি।


অথচ গত নভেম্বরে সাড়ম্বরেই এই তিনটি দেশের (জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা) সঙ্গে চতুর্দেশীয় জোট গড়েছিল ভারত। উদ্দেশ্য ছিল, চীনের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ‘মুক্ত এবং অবাধ’ এবং ‘আঞ্চলিক সংযোগকে শক্তিশালী’ করতে জাপান এবং জাপান-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পৃথক আলোচনাও করেছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু এরপরই চীনের সাথে ধীরে ধীরে সম্পর্ক সহজ করার পথে হাঁটতে থাকে ভারত সরকার। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement
হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে? গাজায় রিজার্ভ ব্রিগেড মোতায়েন ইসরাইলের উপজেলা নির্বাচন জটিলতা ভোটাধিকারের প্রতি মর্যাদা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধের ধারাবাহিক ধারা’ অনুসরণের অভিযোগ

সকল