১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধ পুনর্বহাল, ইইউর বিরোধিতা

ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধ পুনর্বহাল, ইইউর বিরোধিতা - ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ও একতরফা অবরোধ পুনর্বহাল করেছে। এ নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এ পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন তেহরানের বিরুদ্ধে তাদের কঠিন শাস্তি কার্যকর করা আবারো শুরু করল।

ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। ২০১৫ সালের ওই পরমাণু চুক্তির অংশ হিসেবে থাকা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এই মার্কিন সিদ্ধান্তে ‘গভীর দুঃখ প্রকাশ’ করেছে। সব পক্ষকে চুক্তির প্রতিশ্রুতি মেনে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করেছে তারা।

ট্রাম্পের সই করা এক নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী নিম্নোক্ত খাতে পুনর্বহাল হবে নিষেধাজ্ঞা : ইরান সরকারের মার্কিন ডলার কেনা বা সংগ্রহ, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু কেনাবেচার ক্ষেত্রে, গ্রাফাইট, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, কয়লা ও শিল্পকারখানার কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের আমদানি, ইরানি রিয়াল সংক্রান্ত লেনদেন, ইরানের সার্বভৌম ঋণ খাত, মোটরযান খাত, বন্দরকার্যক্রম, জ্বালানি, জাহাজ ও জাহাজ নির্মাণসংক্রান্ত খাত, পেট্রলিয়াম বা জ্বালানি তেলসংক্রান্ত লেনদেন এবং ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বিদেশী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেন। 

সোমবার রাত থেকে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মূল বিষয়বস্তু ইরানের তেল শিল্প, যেটি দেশটির অর্থনীতির প্রাণ। দেশটির জ্বালানি খাতের ওপর সামগ্রিক একটি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে নভেম্বর থেকে। এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনকারীদের কঠোর পরিণতি বইতে হবে বলেও সতর্ক করেন।

সাংবাদিকদের সাথে দুই সম্মেলনে সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার করে যাওয়া এই চুক্তি ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প পুরোপুরি স্থবির করতে যথেষ্ট ছিল না। মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের আক্রমণাত্মক আচরণ বন্ধ করতেও এই চুক্তি ভূমিকা রাখেনি। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আশা করব সব রাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নেবে যার ফলে ইরানের সামনে যেকোনো একটি পথ খোলা থাকে, হয় তারা বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করা ও বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ কার্যক্রম বন্ধে করে বিশ্বের অর্থনীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবে, অথবা সারা বিশ্ব থেকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।’ তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের এ নিয়ে তীব্র আপত্তি দেখিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তা এমনকি ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার সাথে সাংঘর্ষিক বলেও আখ্যা দিয়েছেন। ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করতে ও ইরান পারমাণবিক চুক্তি অক্ষুণœ রাখতে পদক্ষেপ বৃদ্ধি করারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে ইইউ। 

ইইউ ও ইউরোপের তিন শক্তিধর দেশ জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ইরান পারমাণবিক চুক্তি অক্ষুণœ রাখতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের শক্তিশালী ন্যাটো মিত্রত্রয়ের সাথে সরাসরি বিরোধে জড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ওয়াশিংটন ও ইউরোপের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়েই বিরোধ দেখা গেছে। তবে ইরান চুক্তি নিয়ে মতদ্বৈততা ছাড়িয়ে গেছে সব কিছুকে। এর আগে মে মাসে ট্রাম্প এককভাবে পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন। ইউরোপের তিন দেশসহ চুক্তির অবশিষ্ট দুই অংশীদার রাশিয়া ও চীন বারবার চুক্তি অক্ষুণœ রাখতে স্ব-অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। দেশগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক আণবিক জ্বালানি সংস্থা বারবার পরিদর্শন করে জানিয়েছে ইরান চুক্তি মেনে চলছে।

মার্কিন অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় সিনিয়র ইউরোপিয়ান কর্মকর্তারা এক কঠোর যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেন। এতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালে খেদ প্রকাশ করেছে। তারা ইরান চুক্তি সমুন্নত রাখার কথাও বলেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় স্তর ইউরোপের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক ছিল। এই নিষেধাজ্ঞায় বলা আছে, শুধু মার্কিন প্রতিষ্ঠান নয়, যেসব বিদেশী কোম্পানি নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন করবে, তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। ইরানের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে যেসব ইউরোপিয়ান কোম্পানির তারাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা আছে ইইউর। এই পরিস্থিতি এড়াতে ইইউ পালটা আইন করে জানিয়েছে, এসব কোম্পানি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যখন থেকে কার্যকর হবে ঠিক একই সময়েই ইইউর পালটা এই সুরক্ষামূলক আইন কার্যকর হবে।

এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপিয়ান কমিশনের কর্মকর্তারা দৃশ্যত মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, ইইউর সুরক্ষামূলক আইনের মাধ্যমে যেসব ইউরোপিয়ান কোম্পানি ইরানের সাথে ব্যবসায় করছে, তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে হওয়া ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের আইনি লড়াইয়ের খরচসহ তাদের ক্ষয়ক্ষতি দিতে বাধ্য থাকবে মার্কিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে থাকে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, এটি মনে করাও গুরুত্বপূর্ণ যে ইরান চুক্তি জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব নম্বর ২২৩১-এর অংশ। সেই হিসেবে আমরা নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনাই সমুন্নত রাখছি। আন্তর্জাতিক আইনে এই প্রস্তাবনার আইনি ভিত্তি যে কী, সেটি আমরা সবাই জানি। ইইউর রাজনৈতিক নেতারা ওয়াশিংটনের সমালোচনায় আরো কঠোর ছিলেন। ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি এক কড়া ভাষায় বিবৃতি দেন। এতে আরো স্বাক্ষর করেন ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তারা বলেন, ‘ইরান চুক্তি ভালোভাবেই কাজ করছে। ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প শান্তিপূর্ণ রাখার যেই লক্ষ্য ছিল এই চুক্তির সেই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে। যেমনটা নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক আণবিক জ্বালানি সংস্থা।’


আরো সংবাদ



premium cement