২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ দৃঢ়চেতা ফিলিস্তিনি এমপির

ফিলিস্তিন
জুহেইর বহলুল - ছবি: সংগৃহীত

ইহুদিবাদী ইসরাইলের পার্লামেন্টে বর্ণবাদী আইন পাস করার প্রতিবাদে একজন ফিলিস্তিনি সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। সরকার বিরোধী জায়োনিস্ট ইউনিয়ন পার্টির এমপি জুহেইর বহলুল শনিবার নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তিনি পদত্যাগ করছেন।

বহলুল বলেন, ‘সম্প্রতি পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইনে ইসরাইলে বসবাসরত আরব নাগরিকদের সম অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। কাজেই আমি আর কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে বসে থাকতে পারি না। একটি উগ্র, বর্ণবাদী ও ধ্বংসাত্মক পার্লামেন্টের আইনকে বৈধতা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’

গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে আগামী সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হলে তার পদত্যাগ কার্যকর হবে বলে জানান ইসরাইলি পার্লামেন্টের আরব সদস্য বহলুল। তবে এ সময়ের মধ্যে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন না বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

দখলদার ইসরাইলের পার্লামেন্ট ‘নেসেট’ গত ১৯ জুলাই গোটা অধিকৃত ফিলিস্তিনকে ইহুদি জাতির রাষ্ট্র বলে ঘোষণা দিয়ে এ ঘোষণাকে আইন হিসেবে অনুমোদন করে। চরম বর্ণবাদী এ আইন অনুযায়ী গোটা ফিলিস্তিন কেবল ইহুদিবাদীদের দেশ হওয়ায় সেখানে ফিলিস্তিনিদের কোনো নাগরিক ও মানবিক-অধিকার থাকবে না।

ইসরাইলি এ আইনে মুসলমানদের প্রথম কিবলার শহর বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদীদের জন্য নতুন নতুন অবৈধ বসতি গড়ে তোলাকে জাতীয় মূল্যবোধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আইনে পুরনো অবৈধ ইসরাইলি-বসতিগুলোর বিস্তার ও উন্নয়নের পাশাপাশি কথিত নতুন ‘ইহুদি-বসতি’ গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরাইলের এই নতুন বর্ণবাদী তাণ্ডব ও উপনিবেশবাদী দাম্ভিকতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমনকি হাজার হাজার ইসরাইলি নাগরিকও এই বিল পাসের প্রতিবাদে তেল-আবিবে বিক্ষোভ-মিছিল করেছে।

আরো পড়ুন :
ইসরাইলের ঔদ্ধত্য, অনমনীয় ইরান-ফিলিস্তিন-সিরিয়া
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ২৩ জুন ২০১৮
ইসরাইলের ঔদ্ধত্য বেড়েই চলছে। ফিলিস্তিন, সিরিয়া কিংবা ইরানের ব্যাপারে দেশটি যেন চুল পরিমাণও ছাড় দিতে রাজি নয়। মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ কয়েকটি ছাড়া তারা অন্য কোনো দেশের জনমতকেই পাত্তা দিচ্ছে না। ফলে সঙ্কট বেড়েই চলছে।

ইসরাইলের মিলিটারি বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন গাজা সীমান্তে আরো সেনা মোতায়েন করা হবে। নেতানিয়াহুর এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই গাজায় দফায় দফায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে বেশ কিছু বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক গুরুতরভাবে আহত হন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি জ্যাসন গ্রিনব্লাট ও জারেদ কুশনার ইসরাইল পরিদর্শনে যাওয়ার প্রাক্কালে এই ঘোষণা দেন ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট।

হামাস বলেছে, ইসরাইলের আগ্রাসী পদক্ষেপকে গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক হিসেবে তুলে ধরার কোনো উপায় নেই। অন্যায় আগ্রাসনের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে আমেরিকা জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে গেছে। আমেরিকা ২০১৭ সালে ইসরাইলের অন্যায় তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করার কারণে ইউনেস্কো থেকেও বেরিয়ে গেছে। আমেরিকা এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রমাণ করছে তাদের সরকার মূলত ইসরাইলিদের নিয়ন্ত্রিত এবং জনগণ ও মানবাধিকার তাদের কাছে কোনো গুরুত্বই রাখে না।

এদিকে পাশ্চাত্যের সাথে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা অক্ষুণ্ন রাখতে সহযোগিতা শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান ও রাশিয়া। মস্কোয় ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি ও তার রুশ সমকক্ষ সের্গেই রিয়াবকভের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

ওই মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমেরিকার একতরফা ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত হয়ে পরমাণু সমঝোতার আওতায় ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য দু’দেশের মধ্যে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ইরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, পাশ্চাত্যের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা ভেঙে পড়লে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্ব ‘ভয়ঙ্কর’ পরিণতির সম্মুখীন হবে। ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি শুক্রবার অসলো ফোরামের অবকাশে একদল বিশেষজ্ঞের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সেখানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওমান ও নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

২০১৫ সালে জাতিসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ ও জার্মানিকে নিয়ে গঠিত ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় সই করেছিল ইরান। কিন্তু গত মাসের গোড়ার দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ওই সমঝোতা থেকে আমেরিকাকে একতরফাভাবে বের করে নেন।

এ সম্পর্কে আলী আকবর সালেহি বলেন, ট্রাম্পের ‘অপরিণামদর্শী ও ভিত্তিহীন’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো পরমাণু সমঝোতাকে ধরে রাখার যে কথা মুখে বলছে তা যদি তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে দেখাতে না পারে তাহলে এর পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’। পরমাণু সমঝোতা ভেঙে পড়লে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্ব নজিরবিহীন নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে পাশ্চাত্যের সাথে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার বাস্তবায়ন শুরু হয়। সমঝোতা অনুযায়ী ইরান তার শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে এবং এর বিনিময়ে তেহরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় পাশ্চাত্য। তবে ট্রাম্প গত ৮ জুন পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার সময় বলেছেন, তার দেশের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর থেকে তুলে নেয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করা হবে।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে আলোচনা করা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়; কারণ, তারা আমেরিকার প্রেসার গ্রুপগুলোর হাতে জিম্মি। ১৯৭৪ সালে আমেরিকার সঙ্গে সিরিয়ার আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে দামেস্ক এখন পর্যন্ত কিছু পায়নি। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্টরা দেশটির বিভিন্ন লবি, বৃহৎ গণমাধ্যম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং তেল ও অস্ত্র কোম্পানিগুলোর মতো বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপের হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছেন। সিরিয়ার চলমান সঙ্কট সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এমন যেকোনো পক্ষ ও দেশের সাথে আলোচনায় বসতে দামেস্কের আপত্তি নেই।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু আমেরিকা যেহেতু সিরিয়ার ব্যাপারে বিদ্বেষী নীতি পোষণ করে কাজেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করে সময় নষ্ট করার অর্থ হয় না। সিরিয়ার ব্যাপারে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকার নীতিতে পরিবর্তন আসার কোনো লক্ষণ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement