২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফিলিস্তিনের ঘুড়ি নিয়ে মহাআতঙ্কে ইসরাইল

গাজা থেকে উড়ানো ঘুড়ির লেজে আগুন, গন্তব্য ইসরাইল। ছবি - সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের নিতান্তই সাধারণ একটি অস্ত্রের কাছে মোটামুটি পরাজয় স্বীকার করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের গাজা থেকে উড়ানো ঘুড়ির সামনে ইসরাইলের বিধ্বংসী কামান, ট্যাংক, জঙ্গি বিমান, ড্রোন সবই হার মেনেছে। কী এমন কৌশল যার কাছে বিশ্বের সর্বাধুনিক একটি সেনাবাহিনী নাকানি চুবানি খেতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই ফিলিস্তিনের শিশু-কিশোররাও ঘুড়ি উড়ায়। হিলিয়ামের বেলুন আকাশে উড়ায়।

কিন্তু সমগ্র বিশ্বের শিশু-কিশোরদের ঘুড়ি আর বেলুন উড়ানোর সাথে ফিলিস্তিনের শিশু-কিশোরদের ঘুড়ি উড়ানোর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে। অন্যান্যরা যেখানে শুধু আনন্দ লাভের জন্য ঘুড়ি উড়ায় সেখানে ফিলিস্তিনিরা ঘুড়ি উড়ায় তাদের অধিকারের জন্য, অবৈধ দখলদারীদের হটানোর জন্য।

ঘুড়ির লেজের মাথায় আগুন বা বিশেষ ধরণের ককটেল লাগিয়ে তা উড়িয়ে সুতা কেটে দিলে তা ইসরাইলের দিকে উড়ে যেতে থাকে। হিলিয়াম বেলুনের সাহায্যে ককটেলসহ উড়িয়ে দেয়া হয়। এগুলো ইসরাইলের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে গিয়ে তাদের ফসলি জমি বনাঞ্চল ও অন্যান্য স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনায় ইসরাইলের সামরিক ও বেসামরিক মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই অভিনব কৌশলের কাছে ইসরাইলি বাহিনী পুরোপুরি বোকা বনে গেছে।

ফিলিস্তিনি ঘুড়ির কাছে পরাজিত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ইসরাইলের লেবার পার্টির প্রধান এভি গ্যাবি। তিনি বলেছেন, উন্নত সমরাস্ত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ঘুড়ি মোকাবেলা করতে পারছে না সরকার ও সামরিক বাহিনী। এটা ইসরাইলের জন্য বড় পরাজয়।

এর আগেও ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবরে স্বীকার করা হয়েছে, গাজা থেকে উড়ে যাওয়া ঘুড়ির সামনে অসহায় হয়ে পড়েছে ইসরাইলিরা। ঘুড়ি মোকাবেলায় বিশেষ ড্রোন তৈরি করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না তারা।

ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা থেকে উড়ে আসা শত শত ঘুড়ি ধ্বংস করা যাচ্ছে না। ইসরাইলি ড্রোনগুলো আকাশেই ঘুড়িগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু সব ঘুড়ি ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ উড়ে আসা ঘুড়ির সংখ্যা অনেক।

প্রতিরোধের এমন নতুন কৌশলে উচ্ছ্বসিত ফিলিস্তিনের তরুণ-তরুণীরা। ইসরাইলের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের মোকাবেলায় সাধারণ কিছু উপকরণ ব্যবহার করে  মোকাবেলার এমন দারুণ উপায় উদ্ভাবন করতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত। স্রষ্টার শুকরিয়া তাদের মুখে মুখে।

এদিকে ফিলিস্তিনিদের অগ্নিসংযোগকারী ঘুড়ি ও বেলুনে পর্যুদস্ত হয়ে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়েছে রাষ্ট্র ইসরাইল। এর আগে গাজা উপত্যকা থেকে পাঠানো জ্বলন্ত ঘুড়ি ও বেলুনে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনি ঘুড়ি গিয়ে পড়ায় সেখানকার তিন হেক্টরের বেশি জমির ফসল পুড়ে গেছে। এর ফলে ইসরাইলিদের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

দেশটির দমকলকর্মীরা ওই অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও কিসুফিম বনাঞ্চলের আরও কয়েকটি স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। চ্যানেল ১০ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

হামাসের মুখপাত্র সামি আবু যুহরি বলেছেন, গাজায় ইসরাইলি অবরোধের প্রতিবাদ জানাতেই গাজার বাসিন্দারা ঘুড়ি উড়াচ্ছে। গাজার ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হলেই কেবল ঘুড়ি থামবে। 

এদিকে গাজা থেকে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিবাদে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।

গাজার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের অধিকারের দাবিতে গত ৩০ মার্চ থেকে বিক্ষোভ করে আসছেন।


আরো সংবাদ



premium cement