২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসরাইলকে শুধু ইহুদি রাষ্ট্র করতে বিল পাস

ইসরাইলকে শুধু ইহুদি রাষ্ট্র করতে বিল পাস - সংগৃহীত

ইসরাইলকে শুধু ইহুদিদের রাষ্ট্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে বিতর্কিত একটি বিল পাস করে সেটিকে আইনে পরিণত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার নেসেটে ‘ইহুদি জাতি রাষ্ট্র’ শীর্ষক এ বিলটি পাস হয়।

বিলটিতে বলা হয়, ইসরাইল ইহুদিদের ঐতিহাসিক মাতৃভূমি। ফলে তাদের জাতীয় স্বার্থ অগ্রগামী ইহুদি বসতি স্থাপন। কারণ এর ভিতরে তাদের আত্মপরিচয় নির্ধারণের বিশেষ অধিকার আছে। বিলে রাষ্ট্রভাষার তালিকায় থাকা আরবির মর্যাদা হ্রাস করা এবং ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ‘সম্পূর্ণ ও অখণ্ড’ জেরুসালেমকে স্বীকৃতিও দেয়া হয়েছে।

ইসরাইলের আরব পার্লামেন্ট সদস্যরা বিলটির ব্যাপক বিরোধিতা করলেও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেগুলোকে উপেক্ষা করে এ সময়টিকে ‘ইহুদিবাদ ও ইসরাইলের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি সরকার সমর্থিত বিলটিতে ইসরাইলকে ‘ইহুদিদের ঐতিহাসিক মাতৃভূমি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইহুদিরা ইসরাইলের জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও বিশেষ অধিকার রাখেন। আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা তর্ক-বিতর্কের পর ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে বিলটি ৬২-৫৫ ভোটে অনুমোদিত হয়।

তবে প্রেসিডেন্ট ও অ্যাটর্নি জেনারেলের আপত্তিতে বিলটির প্রাথমিক খসড়া থেকে বেশ কয়েকটি ধারা বাদ দেয়া হয়েছে। ধারাগুলোর একটিতে বিভিন্ন আইনে ‘কেবলমাত্র ইহুদি সম্প্রদায় সৃষ্টিতে’ বিধানটি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট রুইভেন রিভিøন এক খোলা চিঠিতে কট্টর ইহুদিদের সতর্ক করে বলেন, তিনি মনে করেন, এই আইনের মধ্যে সহজাত একটি ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষ করে এর একটি ধারা তৈরি করা হয়েছে শুধু ইহুদিবসতিগুলোর অস্তিত্ব রক্ষা এবং তাদের বিষয়ে ইতিবাচক প্রচারের জন্য।


দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ করে আসছেন ইসরাইলি আরবরা। ইসরাইলের মোট জনসংখ্যা ৯০ লাখ। এদের প্রায় ২০ শতাংশ আরব, যাদের অধিকাংশই সুন্নি মুসলমান; বাকিরা খ্রিস্টান ও দ্রুজ। সেখানকার আরবদের অভিযোগ, ইসরাইলের ভূখণ্ডের ভেতর থাকা আরবদেরকে দেশটি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের মতো পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন পাস হওয়া ‘ইহুদি জাতি রাষ্ট্র’ আইন দেশটিতে জাতিগত বিভেদের রাজনীতিকে আরো উসকে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির আরব নেতারা। কারণ গত সপ্তাহে দেয়া এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বেসামরিক নাগরিকদের অধিকার অক্ষুন্ন রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও ‘সংখ্যাগরিষ্ঠদেরও অধিকার আছে, এবং তারাই সিদ্ধান্ত নিবে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। আরব অধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন আদালাহ বলেছে, এ আইনের লক্ষ্য হলো বর্ণবাদী নীতিকে অনুমোদন দিয়ে জাতিগত প্রাধান্য বিস্তার।

১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি আরবদের প্রতি বৈষম্যমূলক নানা আচরণ করে আসছে। তারা সব সময়ই দেশে একটি শুধু ‘ইহুদিদের একটি রাষ্ট্র’ গঠন করতে চেয়েছে। দেশটিতে ইতোমধ্যেই বহু বৈষম্যমূলক আইন রয়েছে। সেখানে সমতার কোনো অধিকার নেই। আর সর্বোপরি কথা এটি তার সব নাগরিকের দেশ নয়। অবশ্য এর রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণাটিরই কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
২০১২ সালে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জানান, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই ভূমি উন্নয়নের এমন একটি মডেল অনুসরণ করছে, যাতে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং তাদের বাস্তুচ্যূত করা হয়। জাতিসংঘ তখন এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছিল, এক্ষেত্রে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এমন অনেকগুলো আইন রয়েছে, যা অ-ইহুদিদের মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

এখন নতুন এই আইনের সাহায্যে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ আইনি এবং রাজনৈতিকভাবেই নতুন ইহুদি রাষ্ট্রের বিষয়টি কার্যকর করতে পারবে। আদালাহ বলেছে, এ আইনের ফলে এখন তারা আইনের মধ্যে থেকেই অত্যাচার-নিপীড়ন চালানোর সুযোগ পাবে। ইহুদি জাতি রাষ্ট্রের এ আইনটি শুধু লিকুদ পার্টি এবং ইহুদি বসতির ব্যাপার নয়, নেতানিয়াহু বা নাফতালি বেনেটের ইস্যু নয়, বরং এতে প্রমাণ হচ্ছে, এটি দুই দশক ধরে যে সব আরব নাগরিক তাদের জাতীয় পরিচয় চেয়ে চলছিল এবং রাষ্ট্রটিকে সকল নাগরিকের বলে দাবি করছিল তাদের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টা।

গত সপ্তাহে +৯৭২ নামের একটি ম্যাগাজিনে কলামিস্ট ওরলে নয় লিখেন, ইসরাইলে ইহুদীবাদের প্রকৃত চিত্র হচ্ছে আরব নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহজাত ও চিরস্থায়ী জনসংখ্যাতাত্ত্বিক যুদ্ধ। তাই ইসরাইল যদি ইহুদী ও গণতান্ত্রিক হয়ে হয়ে উঠতে চায়, তাহলে এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদীদের সক্রিয়তা নিশ্চিত করতে হবে। ইহুদি জাতি রাষ্ট্র আইনটি এই ঐতিহাসিক ও চলমান জনসংখ্যাতাত্ত্বিক যুদ্ধের একটি অংশমাত্র। এর দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয় যে, ধীরে ধীরে আরব নাগরিকদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। আর স্বাভাবিকভাবেই জাতিবিদ্বেষকে বাস্তবে রূপ দিতে এটাই তাদের তাদের সর্বশেষ পদক্ষেপ নয়।


আরো সংবাদ



premium cement