১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদি যুবরাজের সাথে কুশনারের বৈঠক, রিয়াদ-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন মাত্রা

সৌদি যুবরাজের সাথে কুশনারের বৈঠক, রিয়াদ-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন মাত্রা - সংগৃহীত

সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের সাথে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের জামাই ও উপদেষ্টা জারেড কুশনার। মধ্যপ্রাচ্য সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি সৌদি আরব গেছেন।

ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের দ্বন্দ্ব নিরসনের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন যখন কথিত ‘শতাব্দির গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি’ উন্মোচন করতে যাচ্ছে তার আগে কুশনার আঞ্চলিক সফরে বের হয়েছেন।

বুধবার বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত জ্যাসন গ্রিনব্লাট উপস্থিত ছিলেন। দুই পক্ষ ফিলিস্তিনি ইস্যু এবং রিয়াদ-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে মতবিনিময় করেন। হোয়াইট হাউজ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এসব কথা জানানো হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রথম পর্যায়ে কুশনার মঙ্গলবার জর্দানের রাজধানী আম্মানে যান এবং সেখানে তিনি ও তার সঙ্গী গ্রিনব্লাট বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। তার একদিন আগে বাদশা আবদুল্লাহ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথিত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আম্মানে বৈঠকে বসেন।

ফিলিস্তিন-ইসরাইল সঙ্কট নিরসনের বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদল মধ্যপ্রাচ্য সফরে বের হয়েছে এবং সৌদি আরব সফর শেষে কুশনার ও গ্রিনব্লাট ইসরাইল, মিসর, ও কাতার সফর করবেন কিন্তু তারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবেন না।

গত ডিসেম্বর মাসে পবিত্র জেরুসালেম শহরকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার করার পর আমেরিকার সঙ্গে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ঘোষণা করেছেন, তারা আর আমেরিকাকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মানবেন না।

কেমন গেল যুবরাজের এক বছর?

ক্ষমতায় এক বছর পার করলেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সময়ে তার অর্জন ও ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, সমালোচনাও আছে। বলা হয়, তিনি সামাজিক সংস্কারে বড় ভূমিকা রেখেছেন। আবার সমান তালে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছেন। এ সময়ে সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতিকে ঝাঁকুনি দিয়েছেন অপ্রত্যাশিতভাবে। 
মাত্র ৩৩ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার চার পাশে যারা আছেন তারা দেখেন উচ্চাভিলাষী হিসেবে।

তিনি মতাকে কুগিত করতে সময়পেণ করেননি। অব্যাহতভাবে তিনি নিজেকে সংস্কারবাদী হিসেবে এবং উদার ইসলামের একজন প্রতীক হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। বিশ্বাস করা হয় কাতারের বিরুদ্ধে যে অবরোধ দেয়া হয়েছে তার নেপথ্যে ছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তার নেতৃত্বে সৌদি আরব সঙ্গে পেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরকে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কাতারের বিরুদ্ধে ওই অবরোধ আরোপ করিয়েছেন।

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিরামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর মাত্র দুই মাস পরই ইয়েমেনে সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এখন পর্যন্ত ওই যুদ্ধে ইয়েমেন বিধ্বস্ত। এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেশটি। নিহত হয়েছেন কমপে ১০ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘ বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের দেশ ইয়েমেন। 

দেশের ভেতরে গত সেপ্টেম্বরে কয়েক ডজন সমালোচক ও ভিন্ন মতাবলম্বীকে জেলে পুরেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এর মধ্যে রয়েছেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকারী অধিকারকর্মী, লেখক, সাংবাদিক ও দু’জন সুপরিচিত মুসলিম ধর্মীয় নেতা। তার এ কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

যারা মানবাধিকার ও সংস্কারের পে কথা বলেন এমন নাগরিকদের দিকে সরকারের এমন উদ্যোগকে পুরোপুরি অসহনীয় বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি। এক মাস পর রাজধানী রিয়াদে এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সেখানে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, শিগগিরই তিনি উগ্রবাদকে নির্মূল করবেন। আরো বলেন, সৌদি আরব একটি উদার ইসলামের দেশ। এ দেশটি সব ধর্ম ও বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত। 

গত নভেম্বরে তিনি কয়েক শ’ সৌদি প্রিন্স, উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী ও সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, এসব ব্যক্তি তার রাজনৈতিক প্রতিপ ছিলেন। গ্রেফতার করা এসব ব্যক্তিকে আটক রাখা হয় রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে। পরে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুক্তি পাওয়ার জন্য কোটি কোটি ডলার দিতে হয়েছে জামিন হিসেবে। যুবরাজ বর্তমানে সৌদি আরবের প্রধান তিনটি নিরাপত্তা রাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছেন। ধর্মীয় নেতাদের প্রভাবকে খর্ব করার কথা বললেও তিনি তাদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছেন, যাতে তারা খুশি থাকেন।

তার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে অনুমোদন দিয়েছিল সৌদি আরবের প্রধান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো নারীদের স্পোর্টস স্টেডিয়ামে যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে নারীদের কখনো স্টেডিয়ামে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। নারীদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত একটি আইনকে উল্টে দেন তিনি। এ বিষয়ে একটি রাজকীয় ডিক্রিতে স্বার করেন তিনি। এর অধীনে তিনি নারীদের জনসমে বা প্রকাশ্যে আসার জন্য বড় সুযোগ করে দেন। 

দুই বছর আগে মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবকে তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। ভিশন-২০৩০ কে সামনে রেখে তিনি এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এতে বলা হয়েছিল সামাজিক েেত্র সংস্কার করা হবে এবং নারীদেরকে কর্মশক্তিতে অঙ্গীভূত করা হবে। শিা, পর্যটন ও মানসিক প্রশান্তির মতো সরকারি খাতগুলোকে উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সৌদি আরবে বিদেশী বিনিয়োগকে নিশ্চিত করতে মোহাম্মদ বিন সালমান সরকারি সফরে বিদেশ গেছেন। তা শুরু করেছেন মিসর দিয়ে। সেখান থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। সাাৎ করেছেন সরকারি বড় বড় কর্মকর্তা, সেলিব্রেটি, প্রভাবশালী নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। চুক্তি করেছেন। আধুনিক মানের সৌদি আরবে তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। 

আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল