২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইসরাইলের জন্য হুমকি

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইসরাইলের জন্য হুমকি - সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া নিন্দনীয়। ইরান যদি এখন পুরোদমে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করে, তাহলে এটি ইসরাইলের জন্য ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা ও নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরাম (এসপিআইইএফ)-২০১৮’ সম্মেলনে একটি সেশনে অংশ নিয়ে পুতিন এসব কথা বলেন।

পুতিন বলেন, আমরা এখনো উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ঝামেলা মেটাতে পারিনি। সেখানে আমরা একই ধরনের আরেকটি সমস্যা কীভাবে চাই? আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পর্যবেক্ষকেরা যেখানে বলে এসেছেন, ইরান সব ধরনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছে, সেখানে এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে তাহলে কিসের শাস্তি দেওয়া হলো?

পুতিন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে ইসরাইল। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ইসরাইলের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলবে। ইরান যদি এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চায় বা ছেড়ে দিতে চায়, তাহলে এটা কি ইসরাইলের জন্য ভালো হবে? আর এটি হলে ইরানের পরমাণু কর্মকাণ্ড পুরোপুরি অস্বচ্ছ হয়ে উঠবে।

পুতিন বলেন, ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ইরানের ওপর একের পর এক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর পর পর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রতি চার বছর অন্তর যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এভাবে একটি করে আন্তর্জাতিক দলিল বাতিল করে দিতে থাকেন। তাহলে সঙ্কট ও উত্তেজনা বাড়তেই থাকবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের পরমাণু চুক্তির অনুমোদন দেয়ায় এটি একটি বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক দলিলের স্বীকৃতি পেয়েছে।

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবেন না ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যাতে ইরানের বিরুদ্ধে একতরফাভাব যুদ্ধ ঘোষণা করতে না পারেন সেজন্য কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল পাস করা হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়া এ বিলে ইরানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা বাতিল করা হয়েছে।

প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া বিলটিতে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থন ছিল এবং বুধবার বিলটি পাস হয়। এরমধ্য দিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান পরিষ্কার হলো যে, ইরানের বিরুদ্ধে একক সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন- এমন কোনো আইন থাকা উচিত নয়।

ইরানের সাথে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা থেকে মার্কিন সরকার বের হয়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ এ বিল পাস করলো। বিলের প্রধান উদ্যোক্তা ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য কিথ মোরিস এলিসন বলেন, পরমাণু সমঝোতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার ও ইরানের সাথে শত্রুতামূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে এ বিল হচ্ছে জোরালো পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, বিলটির মধ্য দিয়ে এই শক্তিশালী বার্তা দেয়া হলো যে, আমেরিকার জনগণ ও কংগ্রেস সদস্যরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না। এ বিলের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা নিজের হাতে ফিরিয়ে নিলো বলেও মন্তব্য করেন এলিসন।

কংগ্রেসের আরেক সদস্য বারবারা লি বলেন, এই সংশোধনীর কারণে আমি খুশি যে, বিলটি পরিষ্কার করেছে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের নেই। আরো কয়েকজন প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য একই ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সবাই বলেছেন, তারা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না।

যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই বৈঠকে ইরানের সঙ্গে চুক্তিকারীরা
যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই ইরানের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলোর এক বৈঠক হয়েছে। চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনায় শুক্রবার অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় জড়ো হন রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইরানের প্রতিনিধিরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসতে পারেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইরানের পরমাণু চুক্তি বাতিল হয়ে গেলে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী থাকবে।

চুক্তি রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চেয়েছে তেহরান। বৈঠকে চুক্তির শর্ত পুরোপুরি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছে তেহরান। এছাড়া, ইউরোপের বাজারে ইরানের তেল বিক্রি এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় ইউরোপের দেশগুলোর স্পষ্ট অবস্থান নেয়াসহ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে ইরান।

১. ইউরোপের দেশগুলোতে ইরানের তেল বিক্রির নিশ্চয়তা। ২. সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্য ও অর্থ লেনদেনে ইরানের সঙ্গে ইউরোপের ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা বজায় রাখা। ৩. ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় ইউরোপকে শক্ত ও স্পষ্ট অবস্থান নেয়া। ৪. ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতার বিষয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির কোনো আপত্তি না করা। অবিলম্বে এসব শর্ত বাস্তবায়নের দাবি জানান ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইরান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ‘ইরান মুখে নয় বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে আমাদের অর্থনীতিতে যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে আমরা বিশ্বশক্তিগুলোর কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছি। অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখেই পরমাণু চুক্তি করেছিল ইরান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণে যদি সেই সমস্যা আবারো দেখা দেয়, তাহলে এ চুক্তিতে ইরানের থাকার কোনো মানে হয় না।’

যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিতে ফিরিয়ে আনতে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে : ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেও আলোচনার মাধ্যমে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করেন ফরাসি প্রেসিডেন্টে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিতে ফিরিয়ে আনতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। ২০১৫ সালের চুক্তির ভিত্তিতে নতুন একটি কাঠামো তৈরি করতে পারি আমরা।’

ম্যাক্রোঁ বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে ওই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলেও এর শর্ত নিয়ে সৌদি আরব ও ইসরাইলের জোর আপত্তি রয়েছে। পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এ বিষয়ে সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হওয়া উচিত।’


আরো সংবাদ



premium cement