২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোচিং ব্যবসা বন্ধ করুন

-

শহরে লক্ষ করলে দেখা যায় অভিভাবকদের কাছে স্কুল বা কলেজশিক্ষকদের প্রতিষ্ঠিত কোচিংয়ের গুরুত্ব খুবই বেশি। তারা নিয়মিত ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর চেয়ে কোচিংয়ে পড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। শিক্ষকেরা তাদের ক্লাসের নিয়মিত পাঠদানে ফাঁকি দিয়ে কোচিংয়ে শুধু পরীক্ষায় ভালো করার কৌশল শিখাচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী পাঁচ থেকে ছয় বিষয়ের শ্রেণিশিক্ষকের কাছে কোচিং করে দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে ওই শিক্ষার্থীরা মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির চেয়ে আজকাল শিক্ষার্থীদের দৌড়ঝাঁপ বেশি শ্রেণিশিক্ষকদের প্রতিষ্ঠিত কোচিং সেন্টারগুলোতে। আর্থিক লোভে স্কুল- কলেজের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করতে দ্বিধাবোধ করেন। কোথাও কোথাও স্কুল শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে ভর্তি হতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো করার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষার্থীদের টাকার মাধ্যমে চুক্তি করে কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে স্কুল ও কলেজ শিক্ষকেরা তাদের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার প্রদত্ত বেতন পাওয়ার পরও কেন তাদের কোচিং ব্যবসা চালাতে হবে? এতে দেশের শিক্ষিত উচ্চ ডিগ্রিধারী বেকার যুবকদেরও অর্থ উপার্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরাও কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টারগুলোর প্রতি বেশ ঝুঁকছেন। মানবিক মূল্যবোধ তথা মনুষ্যত্ববোধের শিক্ষা নেই। স্কুল বা কলেজশিক্ষকদের প্রতিষ্ঠিত কোচিংগুলোতে শুধু পরীক্ষার আগ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের কমনোপযোগী সাজেশন প্রদান করে তা থেকে গুটিকয়েক প্রশ্ন মুখস্থ করানো হয়।
শিক্ষকেরা কোচিংয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার খাতায় বেশি মার্ক দিয়ে, কখনো কখনো স্কুল-কলেজের পরীক্ষার প্রশ্ন বিশেষ কৌশলে ফাঁস করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। স্কুল বা কলেজশিক্ষকেরা তাদের আর্থিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের আজ এমন দুরাবস্থা। অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী মেধাবী বেকার যুবকেরা এই কোচিং সেন্টারগুলোর কারণে টিউশনি করার সুযোগ পর্যন্ত পাচ্ছেন না। কারণ, স্কুলশিক্ষকেরা বাইরে কোনো টিউটরের কাছে প্রাইভেট পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বেশির ভাগ স্কুল বা কলেজে আজ এই কোচিং ব্যবসা চালু থাকায় শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের ওপর সঠিক নজর রাখছেন না। এতে বিপাকে ও ভোগান্তিতে পড়ছে দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে, তার ছেলেমেয়ে কতটুকু শিখতে পারল? শুধু পরীক্ষায় এ+ পাওয়ার নামই সুশিক্ষা নয়। তাই শিক্ষার্থীদের সারা দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রেণিশিক্ষকদের কোচিংয়ের দ্বারপ্রান্তে না ঘুরিয়ে সঠিক পন্থা অবলম্বন করুন। কারণ, শিক্ষার্থীদের এহেন বন্দিদশা থেকে উত্তরণ দরকার।
তাইফুর রহমান মুন্না
কাছিকাটা, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট


আরো সংবাদ



premium cement