২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরিবারকেও ছাড় দেয়নি প্রতারক সাহেদ

পরিবারকেও ছাড় দেয়নি প্রতারক সাহেদ - ছবি : সংগৃহীত

সাহেদের প্রতারণা থেকে রক্ষা পায়নি তার পরিবারও। প্রতারণার সব কৌশল রপ্ত করা সাহেদ তার স্ত্রীকেও ছাড় দেননি। স্ত্রী সাদিয়া সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তাকেসহ তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সাহেদ প্রতারণা করেছে। এ কারণে তিনি কয়েকবার সাহেদের ঘরও ছেড়েছিলেন। তিনি বলেন, সাহেদের জন্য আমার পরিবারের লোকজন সমস্যায় আছে। তার পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, সাহেদের প্রতারণা শুরু হয় ২০০৮ সাল থেকে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে বিচার চান তিনি। জানা গেছে, সাহেদের বাবার নাম সিরাজুল করিম। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। তাকে সবাই একজন প্রতারক হিসেবে চিনে থাকে। নিজেকে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক দাবি করলেও পড়াশোনা করেছেন মাত্র এসএসসি পর্যন্ত।

এ দিকে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের প্রতারণা, জাল-জালিয়াতিসহ বিভিন্ন সময় তার হাতে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের বলেন, সাহেদের কাছে টাকার জন্য গিয়েছিলাম। টাকা চাওয়ামাত্রই তার লোকজন আমার দুই হাত ধরে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। এর পরই তিনি আমাকে মারধর করতে থাকেন। তিনি বলেন, পাওনাদারকে নারী দিয়ে হেনস্তা করাও ছিল সাহেদের অন্যতম কাজ। ভুক্তভোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে অভিযোগ করতে পারত না সাহেদের বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণার কৌশল হিসেবে সাহেদ অনেক সময় নিজেকে আর্মির মেজর, কখনো কর্নেল পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন আইডি কার্ড তৈরি করে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে প্রতারণা করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের পরিচয় দিয়েও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

প্রতারণার কৌশল হিসেবে সাহেদ বেশ কয়েক বছর ধরে উত্তরা, ডিওএইচএস, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে একজন উদ্যোক্তা বনে যান তিনি।

জানা গেছে, ২০১০ সালের দিকে সাহেদ ধানমন্ডি এলাকায় বিডিএস ক্লিক ওয়ান এবং কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস) নামে দু’টি এমএলএম কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দিলে ক্ষতিগ্রস্তরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১১ সালে তাকে প্রতারণা মামলায় একবার গ্রেফতারও করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে দ্রুতই তিনি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর প্রতারণার অর্থ দিয়ে তিনি রিজেন্ট গ্রুপ নামে ব্যবসা শুরু করেন। চালু করেন রিজেন্ট হাসপাতাল।

সাহেদের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়িক অংশীদার গণমাধ্যমকে জানান, সাহেদের বাসায় যাওয়ার পর আমাদের প্রণব মুখার্জি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির সাথে ছবি দেখিয়ে বলে আমি কাদের সাথে চলি বুঝছ। আমার হাত অনেক লম্বা। আমাদের বলে একটা টাকাও পাবা না। যদি টাকা চাও ১০টি করে মামলা দেয়া হবে। তার গানম্যানদের দিয়েও আমাদের ভয় দেখানো হয়। সাহেদের প্রতারণার শিকার টাঙ্গাইলের গোবিন্দাসীর মাটি খনন ব্যবসায়ী অমলেশ ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের শুরুর দিকে রিজেন্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট কেসিএ’র অধীনে নদী খননের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। কাজ শুরু হলে একপর্যায়ে ২১ লাখ ৭৪ টাকা টাকা বকেয়া হয় রিজেন্টের কাছে। টাকা চাইতে গেলে আসে মৃত্যুর হুমকি। অমলেশ ঘোষ বলেন, ঘটনা তুলে ধরতে পারিনি। কারণ আমাকে টাঙ্গাইল ডিবি অফিস, এসপি অফিস থেকে ফোন দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছিল।

রিজেন্ট হাসপাতালের ভবনগুলো দখলের অভিযোগ : উত্তরা ও মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতাল এবং রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের তিনটি ভবনই বিভিন্ন ফন্দি করে ভাড়া নেন সাহেদ। মিরপুরের ১২ নম্বরের যে বাড়িটিতে হাসপাতাল করা হয়েছে সেটি অন্য আরেকজনকে দিয়ে ভাড়া করিয়েছিলেন। পরে সেখানে জোর করে হাসপাতাল স্থাপন করেন। দুই বছর ধরে এর ভাড়াও দেননি সাহেদ। উত্তরাতেও একই অবস্থা। ভুক্তভোগী বাড়িওয়ালা উকিল নোটিশ দিয়ে ও থানায় নালিশ করেও তাকে সরাতে পারেননি।

এ ছাড়া উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ২/এ সড়কের ১৪ নম্বর বাড়িটির দু’টি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছেন সাহেদ। সেখানেই তিনি তার গ্রুপের অফিস করেছেন। এই অফিসের ভাড়াও নিয়মিত দেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ভবনটির তৃতীয় ফ্লোরের মালিকের মা জাহানারা কবির অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী লুৎফুল কবির পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন। আমার মেয়েকে ১৪ নম্বর বাড়িতে একটি ইউনিট কিনে দিয়েছি। আমার মেয়ে সেটি ভাড়া দিয়েছে। কিন্তু সাহেদ নিয়মিত ভাড়া দেয় না। সে নিজেকে অনেক ক্ষমতাধর বলেও পরিচয় দেয়। দুই বছর ধরে সে ওই বাড়িতে আছে। আমরা তাকে তিনবার নোটিশ দিয়েছি, তার পরও বাড়ি ছাড়ে না। ভাড়াও দেয় না।


আরো সংবাদ



premium cement