১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘সন্তানের জানাজায় আসতে পাঁচ মিনিট সময় হল না স্যার?’

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যার দু’দিন পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

এ সময় তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে আমি একমত। সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা হচ্ছে। আমি কাজ করে যাচ্ছি।

শিক্ষার্থীরা তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে থাকলেও কোনো সদোত্তর দিতে পারেননি বুয়েট ভিসি।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কেন তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে আসেননি, কেন তার ছেলের (ভিসি বুয়েটের সর্বোচ্চ অভিভাবক) জানাজায় উপস্থিত হননি, কেন ক্যাম্পাসে দাঙ্গা পুলিশ চড়াও হল একের পর এক প্রশ্ন করে ভিসির কাছে উত্তর জানতে চান শিক্ষার্থীরা।

এ সময় ভিসি কাউকে বুকে জড়িয়ে, কাউকে নাম ধরে কাছে ডেকে আবার কাউকে অভিভাবক হয়ে কিছুটা শাসনের সুরে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের সব দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তোমাদের প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজনের সাথে বসে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তোমরা আলটিমেটাম তুলে নাও।

এ সময় শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, আপনার ছেলেকে (আবরার ফাহাদ) হত্যা করা হল আর আপনি জানাজা পড়ার মতো পাঁচ মিনিট সময় পেলেন না কেন?

এর উত্তরে ভিসি বলেন, তিনি ওই সময় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীসহ অনেকের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলেন।

শিক্ষার্থীদের একজন ভিসিকে বলেন, স্যার, আপনার কাছে শিক্ষার্থীদের অনেক প্রশ্ন। দু-একজন প্রশ্ন করবে, কিন্তু এ সব প্রশ্ন উপস্থিত সবার।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিনিধি গেলেও যা বলবেন তা মিডিয়ার সামনে করতে হবে, বলতে হবে।

ভিসি বলেন, এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। আমি বলছি নীতিগতভাবে তোমাদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। সব সমস্যার সমাধান তার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা সকালে শহীদ মিনার এলাকায় বিক্ষোভ শুরুর পর একদল সাবেক শিক্ষার্থীও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল মিছিল করে এসে বেলা পৌনে ১২টার দিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়।

পরে বুয়েট শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিরা সমাবেশস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। আবরার ফাহাদের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ।

তিনি বলেন, আমরা অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা শিক্ষকরা বলি, প্রশাসন বলি, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার থেকে পলাশী হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায়।

সেখান থেকে বুয়েটের পূর্ব প্রান্তে খেলার মাঠ হয়ে তারা আবার বুয়েট শহীদ মিনারে ফিরে আসে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবরারের জন্য গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল হয়।

গায়েবানা জানাজার পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তির বিরোধিতা করায় আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। আবরারের রক্তস্নাত দেশবিরোধী চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement