২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ

-

দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছেন আদালত। রাজীবের দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী বেসরকারি স্বজন পরিবহন ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিআরটিসিকে এ ক্ষতিপূরণের টাকা সমানভাগে দিতে বলা হয়েছে।

ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে এর আগে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো: খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয়ার পাশাপাশি সড়কে যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশকিছু নির্দেশনাও এসেছে এই রায়ে।

আদালত বলেছে, গত বছর জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বহুল আলোচিত ‘সড়ক পরিবহন আইন’ ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। লাইসেন্স দেয়ার সময় চালকদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ও ডোপ টেস্ট করাতে হবে।

এছাড়া বাসে যত্রতত্র যাত্রী না তোলা, চলন্ত অবস্থায় বাসের দরজা বন্ধ রাখা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বা সংরক্ষিত এলাকার সামনে অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনের হর্ন না বাজানোরও কথাও রয়েছে নির্দেশনার মধ্যে।

এ সংক্রান্ত জারি করা রুলের শুনানি শেষে গত ১৯ মে রায়ের জন্য প্রথম দিন ঠিক করা হয়েছিল। পরে রায়ের দিন ২৩ মে পিছিয়ে ২০ জুন করা হয়।

রায় ঘোষণার সময় রাজীবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। বিআরটিসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান।

গত বছরের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে কলেজছাত্র রাজীব হাসানের। কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজীবের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুলসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন।

এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৬ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব।

এদিকে বাস মালিকদের আপিলের পর গত বছরের ২২ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ওই ঘটনায় দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন। পরে ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেন।

পাশাপাশি রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্ট বিভাগ এ কমিটি গঠন করেন।

গত ১৫ অক্টোবর দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে গণপরিবহন নিয়ে কয়েকটি সুপারিশ দেন।

কমিটির অপর সদস্য হিসেবে ছিলেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

ওইদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেছিলেন, ৪৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে কারা দায়ী সেটা বলা হয়েছে। রয়েছে অনেক সুপারিশ।

একইসাথে প্রতিবেদনে ওই দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে স্বজন পরিবহনের চালকের দায় থাকার কথা বলা হয়েছে। এমনকি চিকিৎসায় অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। চালকের হালকা যানের লাইসেন্স নিয়ে ডাবল ডেকার গাড়ি চালাতে দেয়া বিআরটিসিরও দায় রয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈনিক বা ট্রিপ ভিত্তিতে চালক নিয়োগ দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে, মাসিক বেতনের ভিত্তিতে কোম্পানির অধীনে চালক নিয়োগ করতে হবে। অনুমোদিত চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোকে একটি কোম্পানির অধীনে এনে ফ্রাঞ্চাইজি সিস্টেমে রুট পারমিট দেয়া, প্রত্যেকটি রুটে একটি নির্দিষ্ট রং কোড (কালার কোড) থাকবে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রাজধানীতে গণপরিবহনের বিশেষ করে ব্যক্তিমালিকানা বা সরকারি মালিকানাধীন বিআরটিসির বাসগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়।


আরো সংবাদ



premium cement