২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাসপাতাল ছেড়ে পিকনিকে চিকিৎসকরা!

মঙ্গলবার সারাদিনই বর্হিবিভাগের চিকিৎসকদের রোগী দেখার কক্ষ ছিল বন্ধ। পাশের ছবিটি পিকনিক স্পট থেকে তোলা - নয়া দিগন্ত

গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসকরা কর্মস্থল ছেড়ে কক্ষ তালাবদ্ধ রেখে প্রীতিভোজ ও মিলন মেলার নামে পিকনিকের আয়োজন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের আয়োজনে সামিল হয়েছেন চিকিৎসকসহ সকল কর্মকর্তারাও। হাসপাতালে জরুরী বিভাগে একজন চিকিৎসক ছাড়া দেখা মেলেনি অন্য কোনো চিকিৎসকের। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাননি তারা।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কর্মস্থলে ছিলেন না অধিকাংশ চিকিৎসক। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চাপাইল মধুমতি রিসোর্টে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উচ্চশব্দে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে আছেন চিকিৎসকেরা। আনন্দ উপভোগের জন্য ছামিয়ানা টাঙিয়ে কেউবা গল্পে মেতে, কেউবা সেলফিতে ব্যস্ত। আবার অনেক চিকিৎসককেই দেখা যায় প্রতিষ্ঠানের ২ টি সরকারি গাড়িতে করে পিকনিকস্থলে যেতে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেক চিকিৎসকই সরে পড়েন।

চাপাইল মধুমতি রিসোর্টে প্রীতিভোজে আশা গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন এ সম্পর্কে আমার কিছুই বলার নেই।

অন্যদিকে দূরদুরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা সকাল থেকে হাসপাতালে অপেক্ষা করতে থাকেন। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান অনেক রোগী। কেউবা আবার অনিচ্ছা সত্বেও যাচ্ছেন প্রাইভেট ক্লিনিকে।

চিকিৎসা নিতে আসা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরগোবরা গ্রামের বাসিন্দা গোলেজা বেগম বলেন, আমি সকাল থেকে টিকিট কেটে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষায় আছি। দুপুর ২টা পর্যন্ত বসে আছি, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ডাক্তারের দেখা পাইনি। আমরা গরিব মানুষ, টাকা নেই, তাই বাইরের ক্লিনিকে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর সামর্থ নেই। অসহায় হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১০১ নং কক্ষ হতে ২১৮ পর্যন্ত প্রত্যেকটি কক্ষই তালাবদ্ধ থাকতে দেখা যায়। জানতে চাইলে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সহকারী বলেন, স্যার নেই, তাই কক্ষ তালা বন্ধ করে চলে যাচ্ছি। স্যারেরা না থাকলে আমরা থেকে আর কি করবো।

এবিষয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক বলেন, এভাবে বহির্বিভাগ খালি রেখে যাওয়ার কথা না। কারা কারা গিয়েছে আগামীকাল খোজ নিয়ে দেখবো।

হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডাঃ ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররাই এ প্রীতিভোজ ও মিলন মেলার আয়োজন করেছে। দুপুর ২টার পর আমি ও সহকারী পরিচালক ডাঃ অসিত কুমার মল্লিক বহিঃবিভাগে ঘুরে দেখেছি। তখন মাত্র দুইজন রোগী ছিল। তাদেরকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি।

 

চিকিৎসকদের নৈতিকতা নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, (১৮ জুলাই ২০১৮)

চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চু শিবিরে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ২০ জনের চোখ হারানোর ঘটনার ওপর বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট বিষয়ে ডাক্তারদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, রিপোর্টটি প্রমাণ করে ডাক্তারদের নৈতিকতার মান কোথায়।

গতকাল এ সংক্রান্ত রুলের শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন।

আদালতে রিটের পে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত। সাথে ছিলেন শুভাষ চন্দ্র দাস। ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা: আবুল কালাম আজাদ ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা: মো: খাইরুল আলমের পে ছিলেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম।

শুরুতে ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনের দাখিল করা পৃথক দু’টি তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, রিপোর্টে অপারেশনকারী ডাক্তারদের দ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তখন আদালত বলেন, ডাক্তারদের দতা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা জানতে চাই, এখানে কোনো অবহেলা ছিল কি না? চিকিৎসাজনিত কোনো অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কি না? যেহেতু অপারেশনের প্রথম ও তৃতীয় দিন কোনো ঘটনা ঘটেনি, চোখ হারানোর ঘটনা ঘটেছে অপারেশনের দ্বিতীয় দিন, সে ক্ষেত্রে সেদিন (দ্বিতীয় দিনে) যেসব চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়েছে, তার কোনো না কোনো কিছুতে জীবাণুর উপাদান ছিল, যা সংক্রমিত হয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের কোনো চিকিৎসাজনিত অবহেলা ছিল কি না, যা তাদের আগেই পরীা করা উচিত ছিল, কিন্তু তারা তা করেনি।

জবাবে ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম বলেন, অপারেশনকৃত চোখ নষ্ট হয়েছে কিন্তু অন্য চোখটি নষ্ট হয়নি। এ বাক্যটির প্রতি আদালত আপত্তি তুলে বলেন, এটি আনওয়ান্টেড (অবাঞ্ছিত) এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট প্রমাণ করে আমাদের দেশে ডাক্তারদের নৈতিকতার মান কোথায়!

শুনানির একপর্যায়ে ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম ওষুধ সরবরাহকারীদের এ মামলায় পভুক্ত করার আবেদন করেন। এ সময় আদালত বলেন, তাহলে আপনি তাদের পভুক্ত করুন। এরপর আদালত মামলাটির শুনানি আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত মুলতবি রাখার আদেশ দেন।

গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে তিন দিনের চু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন।

এর মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্টের প থেকে ১২ মার্চ একসাথে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ তি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়। আর বাকি একজন অন্য জায়গায় চিকিৎসা নিতে থাকেন।

আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি শেষে চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চু শিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে কেন তিপূরণ দেয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।


আরো সংবাদ



premium cement