কারাগার জীবন ও মামলার শুনানি নিয়ে যা জানালেন জাহালম
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:১০
কোনো দোষ না করেও দুর্নীতি দমন কমিশনের এক মামলায় তিন বছর কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন জাহালম।
রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৫৮ মিনিটের দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২ এর জেলার তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রোববার রাত ১২টা ৫০ মিনিটে জাহালাম কারাগার থেকে মুক্তি পায়।
পাটকল শ্রমিক জাহালমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল তার ছবি ব্যবহার করে এ জালিয়াতি করেছিলেন আবু সালেক নামে আরেক প্রতারক। আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর সব ধরনের মামলা থেকে অব্যাহতি পান তিনি। সরে যায় ৩৩টি মামলার খড়গ।
কারামুক্তির পর জাহালম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার জেল জীবনের কথা, পূর্বে মামলাগুলোর শুনানির বিষয়।
জাহালম বলেন, কারাগারে অনেক কষ্টে আমার দিন কেটেছে, মানুষের কাপড় ধুয়ে, কাজ করে দিয়ে ভালো খাবার খাইছি। আমার জীবন থেকে তিনটি বছর চলে গেছে। আমি রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষতিপূরণ চাই।
জাহালম বলেন, জজ সাহেবকে বলেছিলাম আমি এ মামলার আসামি না। আমি আবু সালেক না। আমি জাহালম। কিন্তু তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেননি। সাক্ষীরা আমাকে আবু সালেক বলে সাক্ষ্য দিয়েছে। কিন্তু আমি তো এ মামলার কিছুই জানি না। মাসে পাঁচ থেকে ছয়বার করে আদালতে যাইতাম। অনেক কষ্ট লাগতো। কাঁদতামও। কাশিমপুর থেকে প্রতিনিয়ত যাওয়া খুব কষ্ট লাগতো।
দুদুকের ভুলে জাহালম বিনা কারণে তিন বছর জেল খেটেছেন। তাই দুদকের কঠিন বিচার দাবি করে জাহালম বলেন, সঠিক তদন্ত করে যেন আসামি ধরা হয়।
জাহালম আরো বলেন, আমি জীবনে চিন্তাও করতে পারিনি যে বের হতে পারব।
এর আগে রোববার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ভুল আসামি জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। এ সময় আদালত তাকে তাৎক্ষণিকভাবে কারাগার থেকে মুক্তির নির্দেশও দেন।
জাহালম টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ধুবড়িয়া এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি পাটকল শ্রমিক ছিলেন।
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলার মূল আসামি আবু সালেক। কিন্তু তার বদলে এ মামলার আসামি হয়ে বিনা অপরাধে প্রায় ৩ বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন জাহালম।
২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাহালমকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন।