যেভাবে গ্রেফতার করা হয় ব্যারিস্টার মইনুলকে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৪২, আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৫৮
সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে টিভি টকশোতে চরিত্রহীন বলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে উত্তরায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
জানা গেছে, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায় রংপুরে দায়ের করা একটি মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালত অনুমতি দিলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি পুলিশ।
ড কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন ব্যরিস্টার মইনুল। আ স ম আব্দুর রবসহ ফ্রন্টের বিভিন্ন নেতার বাড়িতে বৈঠকে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন।
জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যার পর আ স ম রবের সাথে সাক্ষাত করতে তার উত্তরার বাসায় যান মইনুল। কিন্তু রব তখন বাসায় ছিলেন না। মইনুল সেখানে কিছুক্ষণ রবের জন্য অপেক্ষা করেন। রব বাসায় ফেরার কিছুক্ষণ পরই ডিবি পুলিশের সদস্যরা তার বাসা ঘিরে ফেলে।
উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা মইনুলের বিরুদ্ধে রংপুরের একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার কথা জানান। এরপরই মইনুলকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷
আ স ম আব্দুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব বলেন, ‘আমরা বাসায় ছিলাম না। রাতে এসে দেখি অনেক লোক, একটু আবাকই হলাম। আজ কোনো মিটিং ছিল না। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এমনিতেই এসেছিলেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে তাকে ডিবি পুলিশ নিয়ে গেছে।’।
এর আগে সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনেও ব্যারিস্টার মইনুলকে নিয়ে আলোচনা হয়
টিভি টকশোতে কী বলেছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল
গত ১৬ অক্টোবর একাত্তর টেলিভিশনের একটি আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি এবং বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন।
উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে যুক্ত করার পর মাসুদা ভাট্টি তার কাছে একটি প্রশ্ন করতে চান এবং জানতে চান— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে আপনাকে শিবিরের একটি জনসভায় অংশ নিতে দেখা গেছে এবং সে কারণেই অনেকেই প্রশ্ন করেছেন যে, আপনি কী জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে উপস্থিত থাকছেন?
প্রশ্নটি শেষ করার আগেই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং বলেন— আপনার। সাহসের প্রশংসা করতে হয়। তবে আমি আপনাকে একজন চরিত্রহীন বলে মনে করতে চাই।
এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার পর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ফোনে মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চান। তবে এটি যথেষ্ট নয় বলে প্রকাশ্যে তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন মাসুদা ভাট্টিসহ দেশের বিশিষ্টজনরা। সম্পাদক ও সিনিয়র ৫৫ জন সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির কাছে প্রকাশ্রে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান ব্যারিস্টার মইনুলকে।
ওই ঘটনার পর মঈনুল টেলিফোন করে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। তা না করায় মইনুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানেও মানহানির অভিযোগে কয়েকটি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।
এসব মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর মইনুল কয়েকটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিলেও রংপুরের মামলাটিতে জামিন ছিল না বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
আরো দেখুন : যেভাবে মাসুদা-মইনুল বিতর্কে তসলিমা নাসরিন
বিবিসি, ২২ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৫৯
সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, ঠিক তখনই নির্বাসিত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের এক ফেসবুক পোস্ট আলোচনার মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত নাম "মাসুদা ভাট্টি"।
গত ১৬ অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে 'চরিত্রহীন' বলে মন্তব্য করেন নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদক এবং তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
এরপর দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির পাশে দাঁড়িয়ে মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে বলেন।
এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রোববার মাসুদা ভাট্টিকে ভীষণ রকম চরিত্রহীন বলে মন্তব্য করেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
সেখানে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, "আমার বিরুদ্ধে যারা কুৎসা রটাতে শুরু করলো, সেই মিছিলে সামিল হলো মাসুদা ভাট্টি।"
রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এমন মন্তব্যের কারণে আলোচনায় আসেন তিনিও।
পরে মাসুদা ভাট্টিও তার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তসলিমা নাসরিনের দেয়া স্ট্যাটাসের জবাবে পাল্টা একটি স্ট্যাটাস দেন।
সেখানে তিনি বলেন, "যখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কবলে থেকে একদল মানুষ ন্যয়ের জন্য লড়ছে, তখন মইনুল হোসেনের দেওয়া তকমা "চরিত্রহীন"-কে একটি "ভীষণ" শব্দ জুড়ে দিয়ে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট-কে আরো শক্ত করেছেন তসলিমা নাসরিন।"
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের দুইজনের এই পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাসের কারণে এই ইস্যুতে সাংবাদিকদের আন্দোলনের ধারাটি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। যেখানে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছেন তসলিমা নাসরিন বনাম মাসুদা ভাট্টি।
বিষয়টিকে 'দু:খজনক' বলে আখ্যা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
তিনি বলেন, "মাসুদা ভাট্টির সঙ্গে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের যে রাজনৈতিক তর্ক চলছিল, সেটা এক পর্যায়ে অন্যদিকে মোড় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে গড়িয়েছিল। পরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মন্তব্য নিয়ে যখন বিতর্ক শুরু হল, তখন সেই ইস্যুটা আবার ঘুরে গেল তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস পোস্টের পর।"
বিষয়টি কোন অবস্থাতেই তসলিমা নাসরিন বা মাসুদা ভাট্টির ব্যক্তিগত রেষারেষির জায়গা নয় বলে তিনি মনে করেন।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, "বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে সেই শব্দ চয়ন করেছেন। কোন নারীকে তিনি এমন বলতে পারেননা। পাবলিক মিডিয়াতে তো বলতেই পারেননা। কেননা এতে একজন মানুষের সম্মানহানি হয়।"
তিনি বলেন, "ব্যারিস্টার মইনুল এখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরই একজন প্রতিভূ। যেখানে একজন নারীকে সহজেই চরিত্রহীন বলা যায়। যেকোন সমস্যায়, তর্কে বা দ্বন্দ্বে নারীকে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা যে প্রতিবাদ করছেন, সেটা যথার্থ, ন্যায্য।"
তসলিম নাসরিনও তার লেখায় আক্ষেপ করে বলেছেন যে তাকে যখন দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, তখন তিনি কাউকে পাশে পাননি।
তবে এক্ষেত্রে সময়টাকে বড় শক্তি হিসেবে দেখছেন অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
তিনি বলেন, "হলিউড বলিউড থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে এখন নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে হ্যাশটাগ মি-টু আন্দোলনের জোয়ার চলছে। তারই এক কাছাকাছি সময়ে মাসুদা ভাট্টির উদ্দেশ্যে মইনুল হোসেনের এমন মন্তব্য করলেন। বাচিক যৌন নির্যাতন বলা যেতে পারে, যেখানে তাকে অসম্মান করা হয়েছে।"
"এখন এই মিটু আন্দোলনের মধ্যে এমন মন্তব্য আসলে প্রতিবাদের আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। টাইমিংটা এখানে খুব ইম্পরট্যান্ট। বলা যায়, সময়টার কারণেই এতো তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।"