১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেন মৃত্যুদণ্ড, কেন যাবজ্জীবন?

কেন মৃত্যুদণ্ড, কেন যাবজ্জীবন? - নয়া দিগন্ত

আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দুটি মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।

একই সাথে বিচারক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক বিশেষ সহকারী হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

বাকি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদের দণ্ড এবং পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আব্দুল মাজে ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে (অভি), মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, মো. লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, মো. আব্দুস সালাম পিন্টু ও মো. হানিফ (হানিফ পরিবহনের মালিক)।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে মাওলানা মোঃ তাজউদ্দিন ও মোঃ হানিফ পলাতক রয়েছেন। বাকিরা সবাই রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন।

রায়ে আসামিদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

আর যাবজ্জীবন পাওয়া আসামিরা হলেন, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মোঃ আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মোঃ খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মোঃ ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)। এদের সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দায়ের দুটি মামলায় আদালত এই রায় দিয়েছেন।

এর মধ্যে মৃত্যদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে নিহতদেরকে অভিন্ন অভিপ্রায়ে পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষডযন্ত্রের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০ খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের আদেশ দেয়া হলো।

যাবজ্জীবন দণ্ডের ক্ষেত্রে রায়ে উল্লেখ করা হয়, নিহতদেরকে অভিন্ন অভিপ্রায়ে পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০ খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলো।

এছাড়া মৃত্যুদণ্ড পাওয়া প্রথম ১৯ জনের বিরুদ্ধে মোকদ্দমার জখমপ্রাপ্ত ভিকটিমদেরকে অভিন্ন অভিপ্রায়ে পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার অভিযোগ দণ্ডবিধির ৩০৭/১২০ খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিন্ন পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখমের অভিযোগে দণ্ডবিধি ৩০৭/১২০ খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন দণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয় রায়ে।

আর ১৯০৮ সালের বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়েছে।

যাবজ্জীবন পাওয়া আসামিদের ক্ষেত্রে এই মামলার রায়ে বলা হয়েছে, ১৯০৮ সালের বিস্ফোরদ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

এছাড়া ১৯০৮ সালের বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৪ ও ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত সবাইকে (৩৮ জন) ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এদিন যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ১৯ আসামির মধ্যে মাত্র ছয়জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আর ১৩ জন পলাতক রয়েছেন।

বিচারক দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ও দণ্ডাদেশ পাওয়া পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

রায়ে বলা হয়, পলাতক আসামিদের গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণের দিন থেকে প্রদত্ত দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা ইচ্ছে করলে এই রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন-২০০২ এর ১৪ ধারা অনুসারে হাইকোর্ট ডিভিশনে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

রায়ে আসামিদের কাছ থেকে জব্দ আলামত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয়া হয়।

একই সঙ্গে মামলার সমস্ত প্রসিডিংস ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিত নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।


আরো সংবাদ



premium cement