চীনে এবার হালাল পণ্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
- আল জাজিরা
- ১০ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৩৬
চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশে এবার হালাল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকারের কর্মকর্তারা। চীনের সর্বশেষ ইসলাম বিদ্বেষী পদক্ষেপ এটি। চীনা কর্তৃপক্ষ সব সময়ই বলে আসছে, ইসলাম দেশটির নাগরিকদের সেক্যুলার জীবনযাত্রা থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে এবং উগ্রপন্থা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। তাই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকিতে শুরু হয়েছে এই পদক্ষেপ। চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাটে নগর কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক নোটিশ থেকে জানা গেছে, গত সোমবার উরুমকিতে এক সভায় কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা তাদের কর্মীদের শপথ পাঠ করান হালাল পণ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার।
মুসলিম বিধান অনুযায়ী, খাবারসহ তাদের ব্যবহৃত সব পণ্য উৎপাদিত হতে হবে হালাল দ্রব্য দিয়ে। কিন্তু সেখানে এবার বাধ সাধছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার।
জিনজিয়াংয়ের মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগে অনেকদিন ধরেই সমালোচনার মুখে চীন। মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন বিদেশী সরকার এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে প্রতিনিয়ত। কিছুদিন আগে জিনজিয়াংয়ে ১০ লাখ মুসলিমকে বন্দী রাখার খবর ফাঁস হয়েছে, যা নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। উগ্রপন্থার অজুহাতে জিনজিয়াংয়ের মুসলিমদের বন্দী করে রেখে মারত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে চীন।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের পশ্চিমাংশে সংশোধন ক্যাম্পগুলোতে ১০ লাখের মতো উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়ার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটিও উদ্বেগ প্রকাশ করে। বেইজিং এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে ধর্মীয় কিছু উগ্রবাদীকে সংশোধন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে। জিনজিয়াং প্রদেশে অস্থিতিশীলতার জন্য চীন ইসলামীপন্থী বিদ্রোহীদের দায়ী করে আসছে। জিনজিয়াংয়ে ১ কোটি ২০ লাখ মুসলমানের বাস।
স্থানীয় স্থানীয় বৌদ্ধদের হাতেও উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। মুসলিম প্রধান জিনজিয়াং প্রদেশের নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবন যাপনের ওপর রয়েছে সরকারের কঠোর নজরদারি। যদিও চীন সরকার বরাবরই অস্বীকার করে আসছে এসব খবর।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ইংরেজী দৈনিক দ্য গ্লোবাল টাইমসের এক খবরে বুধবার বলা হয়েছে, যেভাবে পণ্যকে হালায় করার দাবি করা হয়, সেভাবে হালাল হতে পারে না। পত্রিকাটির দাবি এর মধ্যে সেক্যুলার জীবন থেকে মানুষকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। আর উগ্রপন্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হালাল বিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে উরুমকির প্রধান কৌশলি ইশাত ওসমান লিখেছেন, ‘আমার জন্য কারো হালাল রেস্ট্রুরেন্ট খোঁজার দরকার নেই’। যদিও ইশাত ওসমান নিজেও একজন উইঘুর।
উরুমকি নগর কর্তৃপক্ষের উইচ্যাট পোস্টে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের খাবার নিয়ে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। আর কর্মক্ষেত্রের ক্যান্টিনগুলোকে সংস্কার করতে হবে যাতে কর্মকর্তার সব ধরনের খাবার খেতে পারে। মূলত এই নোটিশের মাধ্যমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার ক্যান্টিনগুলোতে হালাল খাদ্য না রেখে সব ধরনের খাবার রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উরুমকির কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা এও বলছেন যে, তারা সরকারি চাকুরি ও দলের সদস্য পদ পাওয়ার জন্য মার্কসবাদ-লেলিনবাদে বিশ্বাসকে গুরুত্ব দেবে, কোন ধর্মকে নয়। এবং ভালোভাবে মান্দারিন(চীনা) ভাষা বলতে জানতে হবে।
চীনে ধর্ম পালনে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও দেশটিতে ধর্ম পালনকারীদের ওপর কঠোর নজরদারি করা হয়। সরকার দেশটির ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। গত আগস্টে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি এক নোটিশে বলেছে, দলটির সদস্যদের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস থাকতে পারবে না। এমন কাউকে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।