২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

২১ আগষ্ট মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ার বিএনপির আইনজীবী যা বললেন

২১ আগষ্ট মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ার বিএনপির আইনজীবী যা বললেন - ফাই

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামীপক্ষের অন্যাতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এ মামলায় ১৯জন আসামীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমি পূর্বেই বলেছি, এ মামলায় বিএনপি নেতা তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হারিস চৌধুরীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এক মাত্র মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি ব্যতীত অন্যকোনো সাক্ষী নেই। যার ওপর নির্ভর করে এসব বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দেয়া যায়।

তিনি বলেন, আমি এখনো বিশ্বাস করি দেশের প্রচলিত আইনে এই মামলায় বিএনপি নেতাদের যে দণ্ড দেয়া হয়েছে তা আইনের পরিপন্থি। আগামী দিনে ইতিহাস একদিন বলবে, এই সাজা আইনের পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলপ্রসুত।

বুধবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার পর খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বরবরোচিত এই সন্ত্রাসী হামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের প্রচেষ্টা শুরু করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মামলার ৬১জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হওয়ার পর মামলার পুন:তদন্ত করা হয় একজন বিতর্কিত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে। যাকে বিএনপি সরকার চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছিল।

এরপর তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন। তাকে এনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সফল করার জন্য মুফতি হান্নানকে নির্যাতন ও রাজসাক্ষী করার প্রলোভন দেখিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়ে বিএনপি নেতাদের এ মামলায় আসামী করা হয়। মুফতি হান্নান পরবর্তীতে আদালতে লিখিতভাবে তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে বলেছেন, তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এই মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

এমনকি তার ভাই, ভগ্নিপতি এবং বোনকে প্রায় এক বছর কারাগারে রাখা হয়েছিল। তাই আমি বলতেচাই দেশের প্রচলিত আইনে কোনো আসামির শুধুমাত্র স্বীকারোক্তি দ্বারা অন্যকোনো আসামীকে সাজা দেয়া যায় না। যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে শুধুমাত্র তাকেই সাজা দেয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, আইনের বিধান মোতাবেক একজন আসামী বিচারের শেষ পর্যায়ে তার সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে দেয়া হয়েছে। সেই সাক্ষ্য প্রমাণ সঠিক কি না তা জাচাই করা ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩২ ধারায় বাধ্যতামুলক। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে দেশে যখন শত শত মৃত্যৃদ- প্রাপ্ত আসামী জেলে আছে, তাদের দ-ের ব্যাপারে শুরাহা না করে মুফতি হান্নান যাতে তার স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দী নির্যাতনের কারণে তা যাতে ৩৪২ ধারায় জবানবন্দীর সময় বলতে না পারে। এজন্য অন্য একটি মামলায় তড়িঘড়ি করে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আসামীপক্ষের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, মুফতি হান্নান রিমান্ডে যে জবানবন্দি দিয়েছেন সে জবানবন্দি তিনি প্রত্যাহার করে বলেছেন, তারেক রহমান বা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার কোনদিন দেখাই হয়নি। অথচ আজকে অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আবদুস সালাম পিন্টুসহ বিএপির বহু নেতাকে এ মামলায় মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির যেসব নেতাদের আসামি করা হয়েছে তারা কেউ এ হামলায় জড়িত নয়। আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে কোনও সাক্ষী এসে এ মামলার সাক্ষ্য দেয় নাই। তারা সেখানে বসে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছে, তার কোনো সাক্ষী নাই। এ মামলায় আমরা ন্যায় বিচার পাইনি।

তিনি বলেন, তারেক রহমান যখন বাংলাদেশে ফিরে আসবেন তখন আমরা অবশ্যই এ মামলায় আপিল করব। তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, হারিস চৌধুরীসহ কেই কোনো অন্যায় করে নাই। তারেক রহমান দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা করার জন্য, আইনের শাসনের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন এবং আরও করে যাবেন।

এ বিষয়ে পালাতক আসামী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ-উল- আলম বলেন, আমার ধারণা এই আসামীকে সাজা দেয়ার মতো কিছু ছিল না। রায় না দেখে মন্তব্য করা যাবে না যে তাকে কি কারণে জড়ানো হয়েছে।

আদালতে আসামীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, এসএম শাহাজাহান, মাসুদ রানা, আবদুর রশিদ মোল্লা, নজরুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান দুলাল প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement