২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি লুটপাটের জন্যই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি : রিজভী

-

বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাত্র আট মাসের মাথায় আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি দেশের শিল্পের শক্তি ধ্বংস করে দেবে। ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। তাই এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় বিদ্যুৎ, ওয়াসার পানির দামবৃদ্ধিসহ গণবিরোধী সব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। গতকাল শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারারুদ্ধ গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুচিকিৎসার অভাবে এখন প্রায় পঙ্গু হয়ে গেছেন। কেবল উন্নত চিকিৎসার জন্যই নয়, তিনি একজন মহিয়সী নারী, তার বয়স, অসুস্থতাসহ সব বিবেচনায় তিনি জামিনের যোগ্য হলেও গণভবনের সরাসরি হস্তক্ষেপে জামিন পেলেন না। তাকে জামিন দেয়া হয়নি। আবারো তাকে তার মানবাধিকার, মৌলিক সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো। এটা গোটা বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য। মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও ’৭১ এর রণাঙ্গনের বীর সেক্টর কমান্ডারের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়াকে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে শুধু হিংসার বশবর্তী হয়ে। নি¤œ থেকে সর্বোচ্চ আদালত আজ অবরুদ্ধ মিডনাইট ভোট ডাকাতদের করতলে।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ বিশ্বাস করে, আদালতের ন্যূনতম স্বাধীনতা থাকলে বেগম খালেদা জিয়া জামিন পেতেন। এই বাংলাদেশে ফাঁসির আসামিরাও জামিন পায়। শত শত কোটি টাকা লুট করা ব্যক্তিরাও জামিন পায়। অথচ একজন মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতালিপ্সা আর প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে নিজের পছন্দ মতো সুচিকিৎসার সুযোগ দিতে জামিনও দেয়া হচ্ছে না। মাত্র দুই কোটি টাকা অনিয়মের সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ এনে দেশনেত্রীকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে, অথচ সেই দুই কোটি টাকা ব্যাংকে সুদে-আসলে বেড়ে এখন আট কোটি টাকার বেশি হয়েছে।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যিনি তার পুরো রাজনৈতিক জীবন ব্যয় করেছেন, এমন একজন নেত্রী আজ ভোট লুটেরাদের প্রতিহিংসা, অনাচার আর জুলুমের শিকার। এমন জুলুম বাংলাদেশ আর কখনোই দেখেনি। এখন যারা বিচারপতির আসনে, সাবেক প্রধান বিচারপতির পরিণতি দেখে তারা সঠিক রায় দেয়ার সাহস করছেন না।
স্বৈরাচারের মন রক্ষা করে সাময়িক সুবিধা হয়তো পাওয়া যায় কিন্তু তাদের পরিণতি হয় অত্যন্ত অপমানজনক, সাবেক প্রধান বিচারপতি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এখনো যারা স্বৈরাচারের ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে নিজেদের ব্যবহার করছেন তাদের পরিণতি ভালো হতে পারে না। তাদের পরিণতিও অপমানজনক হতে বাধ্য। শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
তিনি বলেন, মানুষের আশা-ভরসার শেষ জায়গা যদি এমন হয় তাহলে মানুষের শেষ আশ্রয় কোথায়? বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে। খালেদা জিয়া যেভাবে সরকারের তত্ত্বাবধানে আদালতের অবিচারের শিকার হচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার যদি আরো বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে জনগণ কাউকেই ক্ষমা করবে না। গণতান্ত্রিক শাসন আর ন্যায়বিচারের সব পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে জনগণ তখন আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, নিশিরাতের সরকার আসলে কী চায় এটাই এখন জনগণের সামনে বড় প্রশ্ন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও বর্তমান সময়ের মতো ঠিক একই রকমের পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। ক্ষমতাসীনদের কথায়-ই ছিল আইন। কিন্তু বিএনপি কোনো সশস্ত্র রাজনৈতিক দল নয়। বিএনপি একটি নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তাই আমাদের দলের নেতাকর্মীরা শত নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি। আমরা আশা করি, নিশিরাতের সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে না, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে সসম্মানে নিঃশর্ত মুক্তি দেবে।
রিজভী বলেন, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস দশার কথা বিবেচনা না করে সম্পূর্ণ গণবিরোধী এই নিশিরাতের সরকার বিদ্যুৎ ও ওয়াসার পানির দাম আবারো বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘যখন ইচ্ছা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পারবে সরকার’ এই স্বেচ্ছাচারী আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করিয়ে জনগণের ওপর ভয়াবহ জুলুম চালাচ্ছে এই লুটেরা শাসকরা। গণমানুষ, ভোক্তা অধিকার কিংবা ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর যুক্তি-অনুরোধ কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে যখন মন চাচ্ছে গ্যাস বিদ্যুৎ পানির দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটছে। জনগণকে শোষণ করে আওয়ামী সিন্ডিকেটের মুনাফার জন্য সরকার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে।
তিনি বলেলন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাণিজ্য মন্দা এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দর পতনের মধ্যেই দেশে সব পর্যায়ে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য বাড়নোর একমাত্র কারণ হলো লুটপাট। দামবৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রাহকদের পকেট থেকে বছরে দুই হাজার কোটি টাকা লুটে নেবে আওয়ামী সিন্ডিকেট। লুটপাটের বড় অনুসঙ্গ কুইক রেন্টাল করে এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। গতবার কুইক রেন্টালগুলো উৎপাদন না করলেও ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ বছর দিতে হবে ২০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা ক্ষমতাসীন দলের ব্যবসায়ীরা পাচার করে দিচ্ছে বিদেশে।
তিনি আরো বলেন, এই আওয়ামী আমলে এই নিয়ে নয়বার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে সাধারণ মানুষের। শিল্প মালিকদেরও ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা। দেশীয় শিল্পকারখানা ধ্বংস করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধের মাধ্যমে দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা হারাচ্ছে শত শত প্রতিষ্ঠান। সেচ বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যসহ জীবনযাত্রার সব খরচ বেড়ে যাবে। মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধা ও ফুলপুরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।

 


আরো সংবাদ



premium cement