২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেষ সময়ে বৃষ্টিতে ছন্দপতন

-

সোমবার থেকেই আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল। গতকাল সকাল থেকে মেঘলা আকাশ দেখেই নগরবাসী বৃষ্টি হবে এমনটা প্রায় নিশ্চিত ছিলেন। হয়েছেও তাই। বেলা বাড়ার সাথে সাথে হালকা বৃষ্টি নগরের মানুষের স্বাভাবিক চলচলে কিছুটা হলেও বিঘœ ঘটিয়েছে, যার প্রভাব পড়েছিল প্রাণের বইমেলাতেও। তবে আগে থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রকাশকরা সতর্ক থাকায় গতবারের মতো বইয়ের কোনো ক্ষতি হয়নি। যা হয়েছে তা বলা যায় স্বাভাবিক গতির ছন্দপতন।
গতকাল বেলা তিনটায় যখন বইমেলার দরজা খোলা হয় তখন অন্যান্য দিনের মতো মেলামুখী মানুষের চাপ ছিল না। বেলা গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নামছিল তখন বৃষ্টি সকালের তুলনায় একটু বাড়ছিল, যার কারণে স্টল মালিকরা বই রক্ষার প্রস্তুতিতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় অল্প দর্শনার্থী মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেলেও তারা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন শেডের নিচে যান। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও তা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় খুবই কম। হালকা বৃষ্টিতে ঘোরাঘুরি না করে আগতদের বেশির ভাগ জটলা বেঁধে আড্ডারত ছিলেন।
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৯১টি। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় সমীর কুমার বিশ্বাস রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর সমবায়-ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন সেলিম জাহান। আলোচনায় অংশ নেনÑ রাজু আলাউদ্দিন, তপন বাগচী এবং এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন সমীর কুমার বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষি আমাদের অর্থনীতির একটি অন্যতম খাতই নয়, বরং আমাদের রাজনৈতিক বিবর্তন ও সমাজব্যবস্থাতেও কৃষি অনাদিকাল ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কৃষি ও গ্রামীণ জীবনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু প্রণয়ন করেছিলেন তার বিশেষ গ্রাম-সমবায় প্রকল্প। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশে কৃষি বিপ্লব সম্ভব। সেই সাথে তিনি বিশ্বাস করতেন সমবায়ের মাধ্যমেই আসতে পারে বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল একজন সফল রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, রাষ্ট্রের গঠন ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় তার গভীর প্রজ্ঞার পরিচয় আমরা পাই সমবায়-ভাবনার মধ্যে। তার সমবায় প্রকল্পের মূল ছিল কৃষি, গ্রাম এবং জনগণ। এ প্রকল্পের প্রায়োগিক দিকগুলোও ছিল অত্যন্ত নিখুঁত, সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী। গণমুখী ও উৎপাদনমুখী রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর সমবায়-ভাবনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সালমা বাণী, রফিকুর রশীদ, সাদ কামালী এবং নওশাদ জামিল। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি সিদ্ধার্থ হক, মিলু শামস, আফরোজা সোমা, মন্দিরা এষ এবং গিরীশ গৈরিক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মীর জাহিদুল হাসানের পরিচালনায় এবং মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় নাটক ‘মহাপ্রয়াণের শোক আখ্যান’।
আজ মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে কামরুল হক রচিত বঙ্গবন্ধু ও সংবাদপত্র : ছয় দফা থেকে গণ-অভ্যুত্থান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করবেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশ নেবেনÑ মোরশেদ শফিউল হাসান এবং হারুন হাবীব। সভাপতিত্ব করবেন কামাল লোহানী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেলায় ঐতিহ্য প্রকাশনী নিয়ে এসেছে বই ‘কবিতার মুসাফির’, এর লেখক বুলবুল সরওয়ার। গল্পগ্রন্থ, আসাম : এনআরসি, ভারতের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও বাংলাদেশ, সংকলন ও সম্পাদনা : মনজুরুল হক। দি সান অলসো রাইজেজ-আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, অনুবাদ : ইফতেখার আমিন। ছানার নানাবাড়ি আনোয়ারা সৈয়দ হকের কিশোর উপন্যাস। রবিকণা-সংকলন : পলাশ দত্ত। রবীন্দ্রনাথের চিঠিতে ছড়িয়ে থাকা ধ্রুপদী রবীন্দ্রকথা। এ ছাড়া আবদুল্লাহ শুভ্রের দু’টি বই এসেছে; একটি উপন্যাস ও একটি কবিতার বই। কাব্যগ্রন্থের নাম ‘চলে এসো এক কাপড়ে’। বইটি প্রকাশ করেছে কবি প্রকাশনী। এর আগে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কালো জোছনায় নীল তারা’। শুভ্রের প্রথম কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের বইমেলায়। এবার মেলায় আবদুল্লাহ শুভ্র প্রথম উপন্যাস ‘শেষট্রেন’ নিয়ে হাজির হয়েছেন। অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এই উপন্যাসটিতে মানুষের সহজ-সরল মনের বিন্যাসকে বিভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে। বইটি অন্বেষা প্রকাশনের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement