১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
চীনের সাথে ব্যবসাবাণিজ্য সচল রাখার দাবি

জাতীয় সরবরাহ কৌশল প্রণয়ন করুন : এফবিসিসিআই

করোনাভাইরাস নিয়ে এফবিসিসিআইর সংবাদ সম্মেলন : নয়া দিগন্ত -

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে জাতীয় সরবরাহ কৌশল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম গতকাল রাজধানীর ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। পাশাপাশি চীনের সাথে ব্যবসাবাণিজ্য সচল রাখতে ঋণসহায়তা এবং ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি। এফবিসিসিআইর সহসভাপতি ও পরিচালকবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
করোনাভাইরাসের কারণে গত এক মাসে চীনের সাথে ব্যবসাবাণিজ্য, বিশেষ করে আমদানি ও সরবরাহে বিঘœ হয়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যথাযথ কাগজপত্র সরবরাহ করলে ওই ব্যবসায়ীদের এলসির বিপরীতে নেয়া ঋণ যেন খেলাপি না করা হয়। কিংবা বাড়তি মাশুল, সুদের ওপর জরিমানা করা না হয়। কেননা, এই বিলম্বের পেছনে ওই ব্যবসায়ীর দোষ নয়, দুর্যোগ দায়ী। চীন থেকে আমদানির জন্য যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে; কিন্তু শিপমেন্টে (জাহাজীকরণ) সময় লাগছে, এমন ব্যবসায়ীদের অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানির সুযোগ থাকলে ওই সব ব্যবসায়ীকে এলসি সীমার বাইরে স্বল্পমেয়াদি ঋণসুবিধা দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, চীনের বিভিন্ন প্রদেশের ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিয়েছেন যে, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনের রফতানিবাণিজ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। আমরা চাই, আমাদের বন্দরে যেন কোনো চীনা পণ্য আটকে দেয়া কিংবা খালাসে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি না হয়। তিনি বলেন, এফবিসিসিআই আপাতত কোনো আর্থিক সহায়তা চায় না। ব্যবসায়ীরা চান, চীনের সাথে যে আমদানি-রফতানি হয়, তা যেন স্বাভাবিকভাবে চলে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয় চীন থেকে। এর বাইরেও কাপড়, আদা, রসুন, বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যসামগ্রী, মেশিনারি, খুচরা যন্ত্রাংশ, খেলনা, মোবাইল, বৈদুতিক সামগ্রী মিলিয়ে শত শত আইটেমের পণ্য আমদানি করা হয় চীন থেকে। সবচেয়ে বড় বাণিজ্য হচ্ছে তৈরী পোশাক ও এর কাঁচামাল আমদানি, যা চীনের বাইরে প্রত্যাশা করাটাও অসম্ভব। চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সারা বিশ্বে। দেশটির ভেতরে এ সংক্রমণের প্রভাব এত তীব্র যে, চীনের বেশির ভাগ অফিস ও ব্যাংক নববর্ষের ছুটির পর এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। চেষ্টা করেও সেখানে এলসি খুলতে পারছেন না বাংলাদেশী আমদানিকারকরা।
তারা জানান, নবাবপুর এলাকায় বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ পণ্য আসে চীন থেকে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও মেশিনারিজ জিনিসপত্র পাওয়া যায় এখানে। চীনে করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী চীন যাচ্ছেন না। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চীনের পণ্যও আসতে পারছে না। এখন বড় বড় মজুদদারদের কাছে কিছু পণ্য আছে। আবার কিছু পণ্য কারো কাছেই পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের কাছে পণ্য আছে, তারা পণ্যের দাম ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে আগে যেসব পণ্য ১০০ থেকে ১১০ টাকায় পাওয়া যেতে সেগুলো এখন খুচরা বিক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। আবার যেসব পণ্য ২০০ টাকায় পাওয়া যেতে সেগুলো কিনতে হচ্ছে ২৫০ টাকায়। আর এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মোট বাণিজ্য হয় ১২ দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে চীন থেকে দেশে আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৬৯ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। একই সময়ে চীনে ৬৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ পাঁচ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে দেশটির সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যঘাটতি ১১ বিলিয়ন ডলার বা ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে চীনে চার হাজার ৭০০ পয়েন্ট শুল্কমুক্তভাবে রফতানি করতে পারে বাংলাদেশ।


আরো সংবাদ



premium cement