২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বারডেমে তৃতীয় সফল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন

বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন : নয়া দিগন্ত -

শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে তিন নম্বর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টটি সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়ে গেল গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এবার পুত্র তার মাকে লিভার দান করেছেন। বর্তমানে লিভার গ্রহীতা মা ও লিভার দাতা পুত্র সুস্থ আছেন। মায়ের নাম অথবা অন্য কোনো পরিচয় প্রকাশ করা না হলেও পুত্রের পরিচয়ে বলা হয়েছে, তিনি ২৯ বছরের একজন আইনজীবী এবং তার নাম শরীফুল। মায়ের বয়স ৫২ বছর। তারা কুমিল্লার জেলার বাসিন্দা। লিভার গ্রহীতা মা ন্যাশ বা নন অ্যালকোহলিক স্টিটো হেপাটাইটিসে ভুগছিলেন। অ্যালকোহল বা মদের সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও শুধুমাত্র লিভারে বেশি চর্বি (ফ্যাট) জমে যাওয়ার কারণে মায়ের লিভার সিরোসিস হয়ে গিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত লিভার অকার্যকর হয়ে যায়। ট্রান্সপ্ল্যান্টের আগে মায়ের অকার্যকর লিভার পুরোটাই অসারণ করে ফেলে দেয়া হয়।
সাধারণত হেপাটাইটিস বিওসি ভাইরাসের কারণে, অত্যধিক অ্যালকোহল (মদ) পান করার কারণে এবং লিভারে চর্বি জমে গেলে লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষের লিভারে চর্বি রয়েছে। এর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষের ন্যাশ হয়ে থাকে। অপরদিকে দেশের ৪ থেকে ৫ (৬০ থেকে ৮০ লাখ) শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং ১ শতাংশ (প্রায় ১৬ লাখ) মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার বারডেম কর্তৃপক্ষ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট পরবর্তি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা: এ কে আজ খান। প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিষয়ক অভিজ্ঞতা এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিশিষ্ট লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন বারডেমের অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ আলী। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনে মহাসচিব মো: সাইফ উদ্দিন, অধ্যাপক ডা: জাফর লতিফ প্রমুখ।
এটা ছিল বারডেমের তৃতীয় লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি। প্রথম সফল ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ওই ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে গেলে তাকে জেলে যেতে হয়। বারডেম কর্তৃপক্ষ জানার পর তাকে জামিনে জেল থেকে বের করে আনা হলেও কিছুদিন পর তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। দ্বিতীয় সফল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ব্যক্তি বরিশালের রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়াতে পিএইচডি করছেন। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর তিনি দু’টি কন্যা সন্তানের জনক হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ট্রান্সপ্ল্যান্টের রোগীসহ তিনটি ট্রান্সপ্ল্যান্টই করা হয় বিনামূল্যে। রোগীকে কোনো অর্থ খরচ করতে হয়নি। বারডেম কর্তৃপক্ষ সরকারি ও বেসরকারি তহবিল সংগ্রহ করে তিনটি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টই করেন।
অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, এখন থেকে বারডেমে নিয়মিতভাবেই লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হবে। সব ধরনের প্রস্তুতিই বারডেমের রয়েছে।
বারডেমে প্রথম লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু হয় ৩ জুন, ২০১০, দ্বিতীয় সফল ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয় ২ আগস্ট ২০১১ তারিখে। তৃতীয় লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টে ৩০ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম কাজ করেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ভারতের ম্যাক্স হাসপাতালের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জনরা। তারা কেবল উপস্থিত ছিলেন। তাদের অভিজ্ঞতা বেশি বলে তাদের আনা হয়েছিল।
আনজীবী শরীফুলের এক হাজার ৫২০ গ্রাম লিভারের ৭৭৩ গ্রাম কেটে নিয়ে তার মায়ের দেহে জোড়া দিয়ে দেয়া হয়। অপারেশনের পর থেকে ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যেই শরীফুলের লিভারে দান করা ৭৭৩ গ্রাম আগের মতো পূরণ হয়ে যাবে এবং গ্রহীতা তার মায়ের লিভারও একই সময়ের মধ্যে পূর্ণ লিভারে পরিণত হয়ে যাবে বলে জানান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে ১১ ঘণ্টা সময় লেগেছে।
লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য বারডেমকে সরকার ১০ কোটি টাকা এবং ডাচবাংলা ব্যাংক দিয়েছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। উল্লেখ্য ভারতে গিয়ে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হলে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত এবং ট্রান্সপ্ল্যান্টেরখরচসহ এক কোটি টাকা লেগে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল