২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জিএফআইর তথ্যে সিপিডি

অর্থপাচার ১৪.১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে ২০৩০ সালে

‘এসডিজি নিয়ে সংসদে পৃথক অধিবেশন দরকার’
-

আমদানি ও রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার হচ্ছে। আর এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তা হলে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশ থেকে অবৈধপথে অর্থপাচারের পরিমাণ ১৪.১৩ বিলিয়ন বা এক হাজার ৪১৩ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর সিপিডির চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন ল্য (এসডিজি) অর্জনে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় সংসদে আলাদা অধিবেশন হওয়া উচিত। এতে এসডিজি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের মতামত পাওয়া যাবে। এ ছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায়ে একধরনের জবাবদিহি তৈরি হবে।
এসডিজি নিয়ে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণবিষয়ক সিপিডি আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। রাজধানীর এক হোটেলে এ সংলাপ হয়। এতে অর্থনীতিবিদ, সাবেক আমলা, এনজিও কর্মকর্তা, কূটনীতি ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সিডিপির পৃথক দু’টি প্রকাশনা উপস্থাপন করা হয়। এসডিজির চার বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি শীর্ষক বইয়ে জিএফআইর এই অর্থপাচারের তথ্য তুলে ধরা হয়। সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকা এবং নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন চার বছরে এসডিজি অগ্রগতি নিয়ে দু’টি উপস্থাপনা দেন। অনুষ্ঠানে এ-সংক্রান্ত দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো, একশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম প্রমুখ।
জিএফআইর ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে প্রতি বছর যে ভয়াবহ আকারে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে এই অর্থপাচার ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই প্রবণতাগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশের মতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো দেশ থেকে অবৈধভাবে আর্থিক মূল্যবান সম্পদগুলো সরিয়ে দিলে তা ওই জাতিকে দেশের কর আহরণে হাত থেকে বঞ্চিত করে; যা সেই অর্থনীতিকে মারাত্মক তি করতে পারে। তাদের ধারণা ২০১৩ সালে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে যেকোনো হিসাবেই তা সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তারা বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ আর্থিক প্রবাহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ড. রেহমান সোবহান বলেন, এসডিজি নিয়ে জাতীয় সংসদে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। অথচ জনপ্রতিনিধিরা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার মতে, পুরো এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের কথা খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে না। পুরোটা যেন সরকারের বাস্তবায়নের বিষয়। তিনি সুশীলসমাজকে এসডিজি বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত করার তাগিদ দেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এসডিজি অর্জনে আমরা শিা খাতে ভালো করছি। কিন্তু মানের প্রশ্ন এলে এটি কোথায় যাবে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, বৈষম্য ও ন্যায়বিচারে আমরা ভালো করছি না। তিনি মনে করেন, বৈষম্য থাকলে অন্য ল্যগুলো অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করে যাচ্ছে। এসডিজি বাস্তবায়নের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেশি লাগবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, মানসম্পন্ন শিা ছাড়া কোনো কিছুই অর্জন করা যাবে না। প্রথম শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিা বাধ্যতামূলক করা উচিত। ১২ বছর পড়াশোনা করেও শিার্থীরা তিন পাতা ইংরেজি লিখতে পারে না।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেনে হোলেনস্টেন বলেন, এসডিজি অর্জনে সর্বস্তরে সামাজিক অংশগ্রহণের প্রয়োজন বলে মনে করি। প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক রূপান্তরের মাধ্যমে এসডিজি অর্জন করতে হবে। তার মতে, বেসরকারি খাত হলো একটি দেশের ডিএনএ।
ইউএনএফপিএ’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ আসা আর্কেলসন বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সমালোচনামূলক অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশ অনেক েেত্র এগিয়ে থাকলেও বেশ কিছু েেত্র পিছিয়ে রয়েছে। প্রান্তিক, দলিত ও বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য দরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পিস, জাস্টিজ আর কাইমেট চেঞ্জ এই তিনটি জায়গায় আমরা দুর্বল অবস্থানে আছি। এই জায়গাগুলোতে ভালো করতে হবে। এটা ভালো না করতে পারলে অন্য ভালো এচিভমেন্টগুলো ধরে রাখা কষ্ট হয়ে যাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement