২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দায়রা ও শিশু আদালতে আরো ৮ জনের সাক্ষ্য মিন্নির আদালত পরিবর্তনের আবেদন শুনবেন হাইকোর্ট রিফাত হত্যা

-

বরগুনার বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় জেলা ও দায়রা জজ মো: আছাদুজ্জামানের আদালতে গতকাল সোমবার আরো দুইজন ও শিশু আদালতের বিচারক ও জেলা জজ মো: হাফিজুর রহমানের আদালতে আরো ছয়জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। জেলা ও দায়রা আদালতে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী ও বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন যখন সাক্ষ্য দেয় তখন জেলা ও দায়রা আদালতে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৯ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। শিশু আদালতে সাক্ষ্য দেনÑ মাকসুদা বেগম, জয় চন্দ্র রায়, বৃষ্টি দাস, তাপস দেবনাথ, ফারুক সিকদার ও মোসা: হেপী বেগম। এ পর্যন্ত জেলা ও দায়রা আদালতে ৭৩ জন ও শিশু আদালতে ৩৯ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হয়েছে।
এদিন জেলা ও দায়রা আদালতে সাক্ষ্য শেষে বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমি ২৬ জুন রাত ১-০৫ মিনিটে বাদি আবদুল হালিম দুলাল শরীফের টাইপকৃত অভিযোগ পেয়ে এজাহার রুজু করে বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক মো: হুমায়ূন কবিরকে তদন্তের জন্য প্রেরণ করি।
বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী রোববার ১৬৪ ধারা জবানবন্দীর আংশিক সাক্ষ্য দেন। বাকি সাক্ষ্য আজ সোমবার দেন। শিশু আদালতে ছয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য ফারুক সিকদার বলেন, রিফাত শরীফকে যে বগি দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই বগি দা পুলিশ বরগুনা সরকারি কলেজের উত্তর পাশে একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করে। আমি সেই সময় উপস্থিত ছিলাম। পুলিশ যখম বগি দা জব্দ করে আমি সেই জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি।
সাক্ষ্য জয় চন্দ্র রায় বলেন, আমি রিফাত শরীফকে কোপাতে দেখিনি। তবে ২৬ জুন রিফাত শরীফকে আসামি রিফাত ফরাজি, রিশান ফরাজি, তানভির, চন্দনসহ অনেক ছেলেরা রিফাত শরীফকে কলেজ গেট থেকে ক্যালিক্স অ্যাকাডেমির সামনে মারতে মারতে নিয়ে আসে। এগুলো ভিডিওতে দেখছি।
দায়রা আদালতে আসামি কামরুল ইসলাম সায়মুনের আইনজীবী আবদুর রহমান বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আটজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও পাঁচজন সাক্ষ্যের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন। আমরা তাকে সাজেশন দিয়েছি। তিনি যথাযথভাবে জবানবন্দি রেকর্ড করেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, আদালতে ৭৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: হুমায়ূন কবির, ঢাকা সিআইডির আইটি শাখার ফরেনসিক বিভাগের দুইজন এ কে নাজমুল হোসেন ও জাকির হোসেন ইমন সাক্ষ্য দিলে সাক্ষ্যপর্ব শেষ হবে।
এ ছাড়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিলের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছে। আদালত সেই আবেদন তদন্তের জন্য বরগুনা থানায় পাঠায়। পুলিশ প্রতিবেদন দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
আদালত পরিবর্তনে মিন্নির আবেদন শুনবেন হাইকোর্ট :
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির আদালত পরিবর্তনের আবেদন শুনবেন হাইকোর্ট।
বরগুনা থেকে ঢাকার আদালতে মামলা বদলির এ আবেদনের শুনানি হবে আগামী বুধবার। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের জবাবে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘বিরতিহীনভাবে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ করছেন বরগুনার আদালত।’
এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘এভাবে সাক্ষ্য নিতে বাধা আছে কি ? আইনজীবী বলেন, ‘বাধা নেই। তবে একটি মামলার ক্ষেত্রে এত তাড়াহুড়ো কেন। যদি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হয় তাহলে দেশের সব মামলার ক্ষেত্রেই তা হতে হবে।’ আদালত বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সাক্ষী আদালতে হাজির হলে তার বক্তব্য রেকর্ড করতে হবে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এফ আর খান বলেন, ‘আবেদনকারী মিন্নি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষপর্যায়ে আমি এখনো কোনো ডকুমেন্টস পাইনি। তাই আমার সময় প্রয়োজন। সময় আবেদনে আপত্তি জানান মিন্নির আইনজীবী।
তখন আদালত বলেন, ‘আমরা তো আপনার আবেদন শুনব।’ এরপর আদালত শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন ধার্য করেন।
৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা থেকে ঢাকার আদালতে ট্রান্সফার (বদলি) চেয়ে মিন্নি আবেদন করেন। বরগুনায় তার জীবনের শঙ্কা থেকে এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানানো হয়। গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে নেয়ার পর সেখানেই মারা যান। গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। 

 


আরো সংবাদ



premium cement