২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পর্যটকদের প্রিয় কুয়াকাটা ইকোপার্ক বিলীন হচ্ছে সাগরে

-

সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকনের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় আসা পর্যটক দর্শনার্থীর কাছে আকর্ষণীয় ইকোপার্কটির দুই-তৃতীয়াংশ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এ মুহূর্তে ইকোপার্কটি রক্ষার উদ্যোগ না নিলে আগামী দুই বছরে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্নের আশঙ্কা করলে স্থানীয় লোকজন ও পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্টরা। সিডর আইলার মতো সুপার সাইক্লোন কিংবা বর্ষা মওসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ইকোপার্কটি কয়েক দফায় বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অভ্যন্তরীণ মনোরম সাজানো লেকটির ছোট ছোট স্থাপনা। লেকটির সেতু, ঘাটলা, গোলঘর, শোভাবর্ধনের বাগান, বেঞ্চ, স্থায়ী ছাতা সব সাগর গিলে খেয়েছে। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা এখানে এসে খুঁজে পেতো প্রকৃতির বর্ণিল সুন্দরকে। যদিও এখন এটি শ্রীহীন হয়ে গেছে। তারপরও প্রতিদিন শত শত পর্যটক দর্শনার্থী কুয়াকাটার ইকোপার্কের খণ্ডিত অংশের ঝাউবাগানে ঘুরে বেড়ায়।
কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে পূর্বদিকে সৈকত লাগোয়া ইকোপার্কের অবস্থান। চার দিকে ঝাউবাগানে ঘেরা ছিল। কিছু দূর পর পর দেয়া ছিল বিশ্রামের জন্য বেঞ্চ। তার ওপরে ছিল সিমেন্টের তৈরি স্থায়ী ছাতা। ইকোপার্কটির গহিন অরণ্যের মাঝখান দিয়ে একাধিক চলার পথ ছিল। ছিল ছোট্ট ছোট্ট বক্স কালভার্ট। এরই মধ্যে ছিল বিশাল মনোরম লেক। লেকের মাঝখান দিয়ে চলাচলের কাঠের ব্রিজ ছিল, যা পেরিয়ে যেতে যেতে দুইপাড়ের সীমাহীন সুন্দরের বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ, সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছের সমাহার দেখার সুযোগ ছিল। স্বচ্ছ টলমলে পানির মধ্যে বন বিভাগের ফাইবার প্যাডেল বোট ব্যবহার করত। দুই দিকেই ছিল বাঁধানো ঘাট। লেকের মধ্যে ছোট্ট টং ঘর ছিল। ইচ্ছে করলে পিকনিক পার্টির বহর ব্যবহার করতে পারত ইকোপার্ক এরিয়া। এসব এখন গল্পের মতোই স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে আগের দেখা পর্যটক-দর্শনার্থীর কাছে। কালের সাক্ষীর মতো ছোট ছোট স্থাপনার খুঁটিসহ যে স্ট্রাকচার বেলাভূমে দাঁড়িয়ে আছে, এসবও কোনো এক উত্তাল ঢেউ কিংবা জলোচ্ছ্বাস গিলে খাবে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
পর্যটক দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে কুয়াকাটায় ইকোপার্ক করা হয়। বনাঞ্চল ছাড়াও রয়েছে বিশাল বনভূমি ইকোপার্কের এরিয়ায় ছিল। বন অধিদফতরের উদ্যোগে প্রাথমিক পর্যায়ে দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করা হয়। প্রথম দফায় ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২১টি ধাপের মধ্যে ২০টির কাজ সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তী ধাপে করা হয় কাঠের ব্রিজ। ওই সময়ে প্রধান ফটক নির্মাণ, মেঠোপথ প্রশস্তকরণ, বক্স ও পাইপ কালভার্ট, ভূমির উন্নয়ন, গোলঘর ও জেটি নির্মাণ, ফিডার রোড, কার পার্কিং সুবিধা, পিকনিক শেড, টিকিট কাউন্টার, এপ্রোচ রোড, বিশুদ্ধ পানির সংস্থান, অভ্যন্তরীণ পানি সরবরাহ, সিটিং বেঞ্চ, লেক-পুকুর খনন ও বাইরের বিদ্যুতায়ন। এ ছাড়া ম্যানগ্রোভ ও ননম্যানগ্রোভ এবং শোভা বর্ধনকারী বাগান, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নে বাগান সৃজনসহ ৪৭ হেক্টর বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষাধিক গাছের চারা রোপণ করা হয়। এর বাইরে এক হাজার ৬৬৭টি নারিকেল চারাও লাগানো হয়। এসব এখন শুধু হারানো স্মৃতি এবং স্বপ্নের অতীত।
সাতক্ষীরা থেকে কুয়াকাটা ঘুরতে আসা পর্যটক হাফসা জাহান জানান, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকনের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় আকর্ষণীয় ইকোপার্কটি ক্রমে ক্রমে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সরকারের উচিত কুয়াকাটায় আকর্ষণীয় ইকোপার্কটি রক্ষা করা এখন ও সময় আছে।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম জানান, বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের কারণে গাছের গোড়া ক্ষয়ে বালু বের হয়ে যাচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইকোপার্কটির দুই-তৃতীয়াংশ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কয়েকবার জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো: ওলিউজ্জামান বলেন, পরিকল্পনা-২ অধীনে আই, ডব্লিউ, এম, সম্ভবত যাছাই সমীক্ষা শেষ প্রতিবেদন ভিত্তিতে ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement