১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পঙ্গপাল বাংলাদেশের কৃষি কতটা ঝুঁকিতে?

-

আফ্রিকার কয়েকটি দেশের পর পাকিস্তান এবং সর্বশেষ ভারতে আক্রমণ চালানোর পর বাংলাদেশেও পঙ্গপালের আক্রমণ হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বলছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে সে ঝুঁকি এ বছরের চেয়ে আগামী বছর বেশি।
গত বছরের শেষ দিক থেকে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে পঙ্গপাল। এ বছরের শুরুতে পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায়। পঙ্গপালের উৎপাতে দেশটিতে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। এরপর ভারতের পাঞ্জাবে ঢুকে পড়েছে পঙ্গপাল, যার ব্যাপ্তি ছিল তিন কিলোমিটার। সে প্রেক্ষাপটে পাঞ্জাবের আশপাশের কয়েকটি রাজ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সংস্থা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক এ জেড এম ছাব্বির ইবনে জাহান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোমবার তাদের একটি চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে পঙ্গপালের আক্রমণ সংক্রান্ত সতর্কতা ও প্রস্তুতি রাখার জন্য। আমাদের আশঙ্কা পাকিস্তান ও ভারতের পর বাংলাদেশেও আসতে পারে এই পঙ্গপাল। তবে আমরা যতটা বুঝতে পারি এ বছরে তেমন ঝুঁকি নেই, কিন্তু আগামী বছরের জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে। এর কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করছেন, যেহেতু পঙ্গপালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী এরা চলাফেরা করে এবং এক জায়গার খাবার ফুরালেই নতুন জায়গার খোঁজ করে তারা, সে কারণে কৃষি অধিদফতরের আশঙ্কা বাংলাদেশেও আক্রমণ হতে পারে পঙ্গপালের।
ছাব্বির ইবনে জাহান জানিয়েছেন, পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকার, জাতিসঙ্ঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ফাও-এর সাথে যোগাযোগ রাখছেন তারা। তবে তিনি জানিয়েছেন যে গত ৫৫ বছরের মধ্যে পঙ্গপালের আক্রমণ হয়নি এ অঞ্চলে।
যেহেতু এই পতঙ্গের ঝাঁক মরু এলাকা থেকে এসেছে, কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনে করেন বাংলাদেশে আক্রমণ হলে দেশের শুষ্ক ও খরা প্রবণ এলাকায় সেই ঝুঁকি বেশি থাকবে।
পঙ্গপাল কী?
বিভিন্ন দেশের কৃষি বিভাগ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে ইংরেজি লোকাস্ট নামে পরিচিত এই পঙ্গপাল। বাংলায় এর নাম পতঙ্গ, এটি এক জাতের ঘাসফড়িং।
স্বভাবে কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ইঞ্চি খানেক দৈর্ঘ্যরে এই পতঙ্গ, খাবারের জন্য নিজ প্রজাতির বিপুলসংখ্যক সদস্যের সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। সাধারণত একেক ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে এক হাজার কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। তখন একে পঙ্গপাল বলে।
পঙ্গপাল যখন ফসলের ক্ষেতে আক্রমণ করে, তখন তা একজন কৃষকের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্নের বিষয় হয়ে ওঠে। একটি পূর্ণবয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার ওজনের সমপরিমাণ খাদ্য খেতে পারে। যে অঞ্চলে তারা আক্রমণ করে, সেখানে খাদ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা অন্য অঞ্চলে যায় না।
উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে, একা থাকলে পতঙ্গ বেশ নিরীহ প্রাণী, কিন্তু দলবদ্ধ অবস্থায় এরা হয়ে ওঠে বিধ্বংসী। জাতিসঙ্ঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ফাও বলছে, এক বর্গকিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল একসাথে যে খাবার খায় তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো সম্ভব। একটি বড় পঙ্গপাল দিনে ১২০ মাইল পর্যন্ত জমির ফসল খেয়ে ফেলতে পারে। কেবল খাবারই খায় না তারা, একই সাথে প্রজননের কাজটিও করে।
গত বছরের শেষ দিকে আফ্রিকার সোমালিয়া, ইথিওপিয়া এবং কেনিয়াসহ কয়েকটি দেশে কৃষিক্ষেতে আক্রমণ চালাচ্ছে পঙ্গপাল, যে কারণে সেসব দেশের কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তবে ওই অঞ্চলে পঙ্গপালের আক্রমণ নিয়মিত বিরতিতে হয়ে থাকে। জাতিসঙ্ঘের হিসাবে পশ্চিম আফ্রিকায় ২০০৩-০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের ফসলের ক্ষতি করে পঙ্গপাল।
গত ১০ ফেব্রুয়ারির জাতিসঙ্ঘের ফাও একটি নির্দেশনা জারি করে, যাতে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি কৃষিপ্রধান দেশকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয় ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ অর্থাৎ পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় বছরখানেক ধরে পঙ্গপালের ব্যাপক বংশবিস্তার হয়। উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, সৌদি আরব, ইরিত্রিয়া এবং ইয়েমেনসহ কয়েকটি দেশে পঙ্গপাল হামলা চালাতে পারে বলে সাবধান করা হয়।
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান এবং ইরানকে সতর্ক করা হয়েছে, তবে ওই তালিকায় ভারত না থাকলেও ইতোমধ্যে দেশটির পাঞ্জাবে আক্রমণ চালিয়েছে পতঙ্গের দল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক মি. জাহান বলেছেন, পঙ্গপালের উপদ্রব ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। এরা বাতাসের সাথে উড়ে আসে, আকাশপথে উড়ে আসা কোনো আক্রমণ থেকে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি রক্ষার কোনো উপায় এখনো আমরা জানি না। তা ছাড়া এরা কোনো অঞ্চল লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করার পর সেটা থামিয়ে দেয়ার কোনো পদ্ধতির কথাও আমরা জানি না। তবে পঙ্গপাল থেকে বাঁচার জন্য বেশির ভাগ সময় উড়োজাহাজে বা বহনযোগ্য যন্ত্রের সাহায্যে কীটনাশক ছিটিয়ে এদের দমন করা হয়।
যদিও তিনি বলছেন, সমস্যা হলো এতে উপকারী কীটপতঙ্গও মারা পড়ে, যে কারণে এটি জটিল একটি সিদ্ধান্ত।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

সকল