যাত্রীবেশে ভয়ঙ্কর ওরা!
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
টাকাপয়সা, মোবাইল ফোন কিংবা স্বর্ণালঙ্কার নয়, ওদের টার্গেট মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশার মতো ছোট যানবাহন ছিনতাই করা। ছিনতাইয়ের জন্য কখনো যাত্রীবেশে, কখনো বিয়ের জন্য গাড়ি ভাড়া করত তারা। এমনকি ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে জখম কিংবা হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতেও তারা পিছপা হতো না। প্রথমে তারা টার্গেট করে নির্ধারিত গন্তব্য ঠিক করে যানবাহনসহ চালককে নিয়ে যায়। যেখানে আগে থেকেই তাদের অন্য সহযোগীরা ওঁৎ পেতে থাকে। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছামাত্র চালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে যানবাহন নিয়ে নিরাপদে সটকে পড়ে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ার কাঠগড়া পালোয়ান পাড়ার মোল্লা বাড়ির বাঁশঝাড় এলাকা থেকে শামীম বেপারী বাবু (২৮) নামে এক পাঠাও চালককে খুন করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মো: শাহিন বেপারী (৫৮) বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে র্যাব-১ এর একটি দল আশুলিয়া থানার জামগড়ার রূপায়ণ মাঠ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মামুনুর রশিদ (২২), মাহবুবুর রহমান (২০) ও মোমিন মিয়া (২০)। গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকারীর রক্তমাখা প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
গত সোমবার দুপুরে রথ্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, তারা একটি সঙ্ঘবদ্ধ পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তারা অন্যান্য ছিনতাইকারীর মতো টাকাপয়সা, মোবাইলফোন, স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে না। তারা শুধু মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশার মতো ছোট যানবাহন ছিনতাই করে। চক্রটি শামীমকে হত্যার পর ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলে এবং নিজেদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখে। জ্যাকেটে রক্ত লেগে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে খুলে ফেলে দেয় এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও ঘটনাস্থলে ফেলে দেয়। গ্রেফতার মামুনুর রশিদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে পেশায় একজন গার্মেন্টকর্মী। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত এবং ছিনতাইকারী এ চক্রটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তার দেয়া তথ্য মতে, ঘটনার আগের দিন রাতে সে ভিকটিমের মোটরসাইকেল দিয়ে গাবতলী থেকে আশুলিয়া যায় এবং তাকে টার্গেট করে। ঘটনার দিন আবার ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে এবং তার মোটরসাইকেলে গাবতলী থেকে আশুলিয়ায় পৌঁছে দিতে বলে। সন্ধ্যায় গাবতলী থেকে আশুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধূমপানের কথা বলে পাশের বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা মাহবুব ও মোমিন ভিকটিমের ওপর আক্রমণ করে।
গ্রেফতার মাহবুবুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, জামগড়া এলাকায় তার একটি চায়ের দোকান আছে। তার চায়ের দোকানে বসেই তারা সবধরনের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন ভিকটিমকে সে-ই প্রথম ছুরি দিয়ে আঘাত করে। গ্রেফতার মোমিন মিয়া জানায়, সেও পেশায় একজন গার্মেন্টকর্মী। প্রায় ১১ বছর ধরে আশুলিয়া এলাকায় এ চক্রের হয়ে ছিনতাই করা গাড়ি বিক্রয়ের কাজ করে।