২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশীদের এ মুহূর্তে আনা সম্ভব নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
-

করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, এটা শীতের ভাইরাস। বাংলাদেশে খুব শিগগিরই শীত চলে যাবে এবং গরম আসছে। অতএব এই ভাইরাসটি নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীকে করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ তথ্য জানাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, মাত্রার দিক থেকে বর্তমানের ‘২০১৯এনসিওভি’ সার্স ভাইরাসের মতো ভয়াবহ নয়। চীনের উহানে শিক্ষা ও গবেষণারত বাংলাদেশীদের এ মুহূর্তে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। না আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৩১৭ জন শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও চীন সরকারের ১৪ দিনের আগে উহানের বাইরে না বেরুনোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে তাদের এখন দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তবে শিক্ষার্থীদের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। ১৪ দিনের রেস্ট্রিকশন পিরিয়ড শেষ হলেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, এই মুহূর্তে উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩টি মতো দেশে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলেও বাংলাদেশে কেউ আক্রান্ত হননি। সীমান্ত এলাকার সবগুলো ইউনিটেই আমরা স্ক্যান মেশিন বসিয়েছি। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য একটি আইসোলেটেড (বিচ্ছিন্ন) কেবিন খোলা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী ও কিটস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসবের খোঁজখবর রাখছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে আমরা আলাদা হটলাইন চালু করেছি এবং বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের হাতে করোনা ভাইরাসের সতর্কতা, করণীয় ও যোগাযোগ নম্বরসংবলিত কার্ড দেয়া হচ্ছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের স্বাস্থ্য খাতসহ সব ইউনিট একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সবাই একে মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছি।
চীনের সাথে বাংলাদেশের সব ধরনের যাতায়াত সাময়িক বন্ধ রাখা হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চীনের সাথে বাংলাদেশের বহুবিধ সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশই চীনের সাথে তাদের যোগাযোগ বন্ধ করেনি। এ ছাড়া বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে আমাদেরকে কিছু বলেনি। কাজেই চীনের সাথে যাতায়াতব্যবস্থা বন্ধ রাখার কোনো চিন্তা সরকারের আপাতত নেই।
এর আগে দুপু সাড়ে ১২টায় করোনা ভাইরাস নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক আহমেদুল কবীর, কিটস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রোবেন, বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি শিউ ওয়াং, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, শিল্প, বিমান ও পর্যটন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কিটস বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশীদের এ মুহূর্তে আনা সম্ভব নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকার প্রস্তুত থাকলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে আটকা পড়া বাংলাদেশীদের এ মুহূর্তে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা চীন সরকারের সাথে কথা বলছি। উহান থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশই চীনের কাছে আবেদন করেছে। চীন দুই সপ্তাহ তাদের পর্যবেক্ষণে রাখবে। এই দুই সপ্তাহ হুবেই প্রদেশে কোনো বিদেশীকে ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হবে না। পর্যবেক্ষণের সময়কাল শেষে চীন সিদ্ধান্ত জানালে আমরা বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত রয়েছি। এ জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করা হবে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বাস্তবায়নবিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ড. মোমেন বলেন, চীন ভ্রমণের ব্যাপারে আমরা কোনো সতর্কতা জারি করিনি। আমরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাই না, তবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উহান শহরে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি। তাই চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যারা দেশে আসছেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখবে সরকার। তাদের নাম-ঠিকানা সংরক্ষণ করা হবে, যাতে কোনো ঘটনা ঘটলে তাদের সহজেই খুঁজে বের করা যায়।
বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিসহ বিভিন্ন প্রকল্পে অনেক চীনা নাগরিক স্থানীয়দের সাথে কাজ করছে। এতে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভাইরাস না থাকলে কোনো সমস্যা নেই। উহানে থাকা বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য খোলা ওয়েবপেইজের মাধ্যমে ২৪৫ জনের সাথে বেইজিংয়ের দূতাবাস সার্বক্ষণিক আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে বলে জানান ড. মোমেন।
পদ্মা সেতুর চীনা কর্মীদের দেশে আসা-যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি
এ দিকে পদ্মা সেতুতে কর্মরত চীনা কর্মীদের এ মুহূর্তে বাংলাদেশে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আবার তারা চীনে যেতে পারবেন না এ মুহূর্তে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেওয়ান আব্দুল কাদের এ খবর নিশ্চিত করেছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সাধারণ কর্মী থেকে অনেক চীনা প্রকৌশলীও কাজ করছেন। এ প্রকল্পে কর্মরত কোনো চীনা কর্মী এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের সিনিয়র অকুপেশনাল অ্যান্ড হেলথ স্পেশালিস্ট মাহমুদ ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, কর্মীদের মধ্যে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সময়ে সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর’র সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা দল’ গঠন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা: শাকিল আরসালানকে প্রধান করে গঠন করা হয় ছয় সদস্যবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য পরীক্ষা দল। গতকাল সোমবার সকাল থেকে কাজ শুরু করে এ দলটি। তারা চেকপোস্ট দিয়ে আসা-যাওয়াকারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় রয়েছে আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন ও জয়নগরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় দেড় হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় সাত শ’ যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এ স্বাস্থ্য পরীক্ষা দলটি। এ ছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দর্শনা সীমান্তে আগে থেকেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement