২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইশরাকের প্রচারে সংঘর্ষের ঘটনায় আ’লীগের মামলা

৫ বিএনপি কর্মীকে এক দিনের রিমান্ডে
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করছেন ইশরাক হোসেন : নয়া দিগন্ত -

রাজধানীর টিকাটুলিতে নির্বাচনী প্রচার চলাকালে দক্ষিণ সিটির নৌকা প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ওয়ারী থানায় মামলা করা হয়েছে। গত রোববার মধ্যরাতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা মাকসুদ আহমেদ বাদি হয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ওয়ারী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে বিএনপির ৫০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গ্রেফতার বিএনপির পাঁচ কর্মীর একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেনÑ জামিল আহম্মেদ তুহিন, বিল্লাল হোসেন, সোহেল, ফারুক ও আকরাম হোসেন মুন্না। গতকাল সোমবার আসামিদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় সংঘর্ষের ঘটনায় ওয়ারী থানায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এসআই জুলফিকার আলী। অন্য দিকে আসামিদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো: নোমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে গেলে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত রোববার দুপুরে গোপিবাগে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীরা। সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ দুই পক্ষের অন্তত ২৬ জন আহত হয়েছেন। ভোটের মাত্র পাঁচ দিন আগে নির্বাচনী সহিংসতার এই ঘটনা ঘটল। সংঘর্ষ শুরুর পরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনকে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেন কর্মীরা। সংঘর্ষে ইশরাক পায়ে আঘাত পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার পর গোপীবাগের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিনা উসকানিতে তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদের অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছেন। তারা গুলিও ছুড়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
অবশ্য রোকন উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পের সামনে দিয়ে বিএনপির মিছিল যাওয়ার সময় নৌকা ডোবাসহ উসকানিমূলক সেøাগান দিয়ে তারাই হামলা চালিয়েছে।
সংঘর্ষে ২৬ জন আহত হন। আহত সাংবাদিকেরা হলেন, নয়া দিগন্ত পত্রিকার রিপোর্টার ইকবাল মজুমদার, সময় টেলিভিশনের ভিডিও সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম, বাংলাভিশন টিভির ক্যামেরা পারসন উজ্জ্বল দাস। আর বিএনপির অন্তত ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গেণ্ডারিয়া থানা ছাত্রদলের সভাপতি জাবেদ হোসেন, ওয়ারী থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোহাম্মদ বিল্লাল, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল নেতা সৈকত হাসান অন্যতম।
এ ছাড়া আহত লোকজনের মধ্যে রয়েছেন ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান, থানা কমিটির সদস্য মোবারক হোসেন ও মনির হোসেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আমির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুছ, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো: রমজানসহ ১১ জন।
মামলার বিষয়ে পুলিশের ওয়ারী জোনের এসি হান্নানুল ইসলাম জানান, গত রোববার দুপুরে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা আওয়ামী লীগের ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা, নৌকাবিরোধী সেøাগান, মারধর ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়েছেনÑ এমন অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী মাকসুদ আহমেদ একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এতে বিএনপির ৫০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। মামলার পর পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার পাঁচজনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
জানা গেছে, ওই দিন সকালে মতিঝিল থেকে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন জনসংযোগ শুরু করেন। দিলকুশা-ইত্তেফাক মোড় হয়ে টিকাটুলি আসার পর সেখানে একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে নৌকার প্রতীক প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের সমর্থকদের সাথে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। মুহূর্তেই লাঠিসোটা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়াপাল্টা-ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাঙচুর শুরু হয়। শোনা যায় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দও। ২৫ মিনিট পর পুলিশের একটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement