১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারী যানচালক তৈরিতে খরচ হাজার কোটি টাকা

চালক তৈরিতে খোরাকি খরচ ৩৮৪ কোটি টাকা ; ভারী যানচালক ঘাটতি ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০ জন ; ৬ শ্রেণীতে লাইসেন্সধারী ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৮ জন
-

দেশে ভারী যানবাহন চালক তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য ৯৭৭ কোটি টাকার বিশাল অর্থ ব্যয় প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রকল্পটি অনুমোদন থেকে পাঁচ বছরে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চালক তৈরি করা হবে। আর এই চালক তৈরিতে পুরো সময়ে খোরাকি বাবদ ব্যয় হবে ৩৮৪ কোটি টাকা। এ দিকে দেশে ছয় শ্রেণীর যানবাহনের লাইসেন্সধারী মোট ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৮ জন। তবে ভারী যানবাহনের চালকের ঘাটতি হলো এক লাখ ৩৪ হাজার ৬০ জন বলে চালক ও পরিবহন মালিক সমিতির তথ্য বলছে।
তিন লাখ দক্ষ ভারী যানবাহন শ্রমিক তৈরির লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রকল্পের লক্ষ্য হলোÑ প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ গাড়িচালক তৈরির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভিষ্ট ৩.৬ বাস্তবায়ন, হালকা বা মধ্যম লাইসন্সেধারী চালকগণের মধ্যে যাদের ভারী যানবাহন চালানোর অভিজ্ঞতা আছে তাদের দুই সপ্তাহ ও চার সপ্তাহ মেয়াদি ভারী যানবাহন চালনার ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান করা। সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দেশে বিদেশে উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ১৬ জেলার ১৮টি এলাকায় এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রতি বছর ৬০ হাজার করে পাঁচ বছরে তিন লাখ।
ব্যয় বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, ১২ দিনের প্রশিক্ষণে দৈনিক খোরাকি দুই লাখ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় ১৯২ কোটি টাকা। ২৪ দিনের প্রশিক্ষণে দৈনিক খোরাকি দুই লাখ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় ১৯২ কোটি টাকা। দু’ধরনের প্রশিক্ষণ ভাতা খাতে মোট ব্যয় ১২৫ কোটি টাকা। ব্যবস্থাপনা ব্যয় ১২ কোটি টাকা। গাড়ি পরিচালনায় ১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দু’ধরনের প্রশিক্ষণে ডিজেল কিনতে হবে ৫১ কোটি ৯৪ লাখ টাকার। ড্রাইভিং সিমুলেটর খাতে ৫০ কোটি টাকা এবং ২৫টি ছাত্রাবাস নির্মাণে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। ১৭০টি যানবাহন সংগ্রহে ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এখানে প্রকল্প পরিচালকের মোট বেতন হবে মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা এবং উপ-প্রকল্প পরিচালকের বেতন হবে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। সহকারী প্রকল্প পরিচালকের বেতন ৯৫ হাজার টাকা। এরা সবাই হবেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরপিএ) তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৪৭ বছরে ভারী যানবাহনের মধ্যে বাস, কাভার্ডভ্যান, মিনিবাস, ট্যাংকার ও ট্রাকের সংখ্যা হলো ২৫০ হাজার ৮০৩টি। যার মধ্যে ফিটনেসহীন ৯৯ হাজার ৭৭৯টি এবং ফিটনেসকৃত এক লাখ ৫১ হাজার ২৪টি। আর মোট যানবহানের সংখ্যা হলো ৪০ লাখ ৬১ হাজার ৫১৪টি। এদের মধ্যে ফিটনেসকৃত হলো ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ২১টি। যাার মধ্যে ২৬ লাখ ৬৮ হাজার ১২৩টি মোটরসাইকেল। তবে ছয় শ্রেণীতে বিআরটিএ কর্তৃক ইস্যুকৃত লাইসেন্স হলো ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ও মহিলা মিলে পেশাদার হলো ১৭ লাখ ৬২ হাজার ২২৭ জন এবং অপেশাদার ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৫৯১ জন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ভারী যানবাহনের সংখ্যা হলো দুই লাখ ৫০ হাজার ৮০৩টি। যার মধ্যে লাইসন্সেধারী চালক আছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৩ জন। বর্তমানে প্রতিটি যানবহনে একজন করে চালক নিয়োজিত থাকলে ভারী যানবাহনের জন্য ঘাটতি হলো ৬৭ হাজার ৩০ জন। বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী প্রতিটি ভারী যানবাহলের জন্য ১.৫ জন চালক থাকার কথা। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি বলছে প্রতিটি ভারী যানবাহনের জন্য দুইজন করে চালক নিয়োজিত থাকার কথা। সেই হিসাবে চালকের ঘাটতি এক লাখ ৩৪ হাজার ৬০ জন।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্প ব্যয়ের অনেক খাতের বরাদ্দকে যৌক্তিকপর্যায়ে আনতে হবে। তবে বিশাল অঙ্কের এই প্রকল্পে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য পাওয়া যায়নি। বিআরটিসি ও বিআরটিএ ছাড়া অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকায় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের ভারী যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সক্ষমতা আছে কি না তা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement