২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত নিয়ে আলোচনা

এ নিয়ে সরকার কিছুই ভাবছে না : আইনমন্ত্রী ; খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছায় : জয়নুল আবেদীন
-

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নততর চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিতে তার সাজা স্থগিত করার বিষয়টি এখন সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, তিনি সাজা স্থগিতের আবেদন করলে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। তবে গতকাল মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে সরকার কিছুই ভাবছে না। তিনি বলেন, আমরা কেন চিন্তা-ভাবনা করব? আমি চিন্তা-ভাবনার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। আমাদের কাছে এ রকম প্রশ্ন ওঠেনি, আমরা অন্ততপক্ষে এটা নিয়ে এখন ভাবছি না।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, আইনমন্ত্রী যে জায়গায় আছেন তাকে সব সময় সরকারের কথাই বলতে হয়। সরকার যা ভাবে তাই তাকে বলতে হয়। তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় মুক্তি দিতে কোনো আবেদন করতে হয় না। এটা শুধু নির্ভর করে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। এখন সরকারের সদিচ্ছা আছে কি না সেটা সরকারই বলতে পারবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমরা (খালেদা জিয়ার মামলা ও জামিন নিয়ে) চিন্তা-ভাবনা করছি কি না? আমরা কেন চিন্তা-ভাবনা করব? আমি চিন্তা-ভাবনার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘এর কারণ হচ্ছে বিচারিক আদালত এতিমের টাকা চুরি করার জন্য খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের জেল দিয়েছিল। আপিল করার পর হাইকোর্ট ডিভিশন আপিল আদালত হিসেবে সেটাকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে। তিনি সাজা ভোগ করছেন।’
‘বিচারিক আদালত এতিমখানার টাকা আত্মসাৎ করার জন্য তাকে সাত বছর সাজা দিয়েছেন। এখন তিনি সাজা ভোগ করছেন। আপিল বিভাগ তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। সবই আদালতের ব্যাপার, আমাদেরকে কেন ভাবতে হবে যে আমরা খালেদা জিয়াকে নিয়ে কী করব?’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে এ রকম প্রশ্ন ওঠেনি, আমরা অন্ততপক্ষে এটা নিয়ে এখন ভাবছি না।’
বিএনপি খালেদা জিয়ার মামলাকে রাজনৈতিক বলছে, দলটি বলছে সরকারের ইচ্ছায় তিনি কারাবন্দীÑ এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আমার মনে হয় আপনাদেরও ভাবার সময় এসেছে যে, কোনটা রাজনৈতিক মামলা আর কোনটা নয়। কারণ হচ্ছে এ মামলার তথ্যাদি সবকিছু আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। মামলা ২০০৭-০৮ সালে করা হয়েছে। তখন শেখ হাসিনার সরকার ছিল না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। চার্জশিট দিয়েছে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন এটি রাজনৈতিক মামলা নয়, এটি তিনি সব সময় বলেন, তিনি এ কথাও বলেছেন যে, তাদের কাছে কোনো আবেদন নেই। আমরা ইতোমধ্যে একটি সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বলেছি। সরকার একজন মুমূর্ষু মানুষকে ইচ্ছা করলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় সাজা স্থগিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। এর জন্য আবেদন করার প্রয়োজন হয় না। আইনমন্ত্রী মনে করছেন আমরা কোনো আবেদন করিনি। তা হলে আমাদেরকে বলুক আবেদন করেন, তখন আমরা কী আবেদন করব সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করব। কিন্তু আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য হচ্ছে সরকারের, এ কথা উনাকে বলতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা নয় এটা বলতে হবে। আমি আবারো বলছি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে রাজনৈতিকভাবে আটকিয়ে রাখা হয়েছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকার যদি বলে আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি তাহলে আমরা চিন্তা করব। আর ৪০১ ধারায় মুক্তি দিতে আবেদন করতে হয় না। এটা শুধু নির্ভর করে সরকারের সদিচ্ছা আছে কি না তার ওপর। বেগম খালেদা জিয়া একটা অমানবিক অবস্থায় জেলখানায় আছেন। তার প্রপার টিটমেন্ট হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী সরকারের ক্ষমতা আছে তাকে মুক্তি দেয়ার।
গত ১৪ জানুয়ারি ৪০১ (১) ধারায় (ফৌজদারি কার্যবিধি) খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, জেলখানায় যারা থাকেন এবং বহুদিন কারাদণ্ড ভোগ করেন ৪০১ (১) ধারা (ফৌজদারি কার্যবিধি) অনুযায়ী তাদের নানাবিধ বিবেচনায় অনেক সময় দণ্ড স্থগিত করা হয়। এখন তারা যদি সে রকম কিছু প্রমাণ করতে পারেন, তবে সে ব্যাপারে সরকার দেখবে।
গত ৯ জানুয়ারি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তার ইচ্ছামতো দেশে বা বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার দাবি জানায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের আহবায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এ দাবি করেন।


আরো সংবাদ



premium cement