২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাইলেন্ট হ্যান্ডস সাপোর্টের উদ্যোগ ‘শিকল বন্দী’ শাকিল পেল জমি-বাড়ি

-

বছর খানেক আগে রাজধানীর ফুটপাথে শিকলে বন্দী থাকা প্রতিবন্ধী শাকিলের এখন নতুন বাড়ি হয়েছে। শরিয়তপুরে নিজ গ্রামে নতুন বাড়ি-ঘর পেয়ে বেশ উচ্ছ¡সিত প্রতিবন্ধী শাকিল ও তার মা হনুফা বেগম। মানবিক এ কাজটি করেছে ‘সাইলেন্ট হ্যান্ড সাপোর্ট’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। গত শুক্রবার শাকিলের মায়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ির দলিলপত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন সংগঠনটির প্রতিনিধিরা।
এই পাওয়া শাকিল ও তার মায়ের কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে। কারণ, এক বছর আগেও শাকিলের দিন কাটত রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুরে কবরস্থানের কাছে ফুটপাথে। ফুটপাথে পথচারী পারাপারের সাইনবোর্ডের খুঁটি ও পায়ের সাথে লাগানো শিকলই ছিল শাকিলের সারা দিনের সঙ্গী। সেখানে দাঁড়িয়েই করতে হতো প্রস্রাব-পায়খানা। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় যা-ই হোক, মা মানুষের বাড়িতে কাজ শেষ করে না ফিরলে শাকিলের মুক্তি মিলত না। এভাবে চলছিল এক বছর।
শাকিলের বাবা মারা গেছেন ১৬ বছর আগে। গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরের পালং থানার দক্ষিণ কেবল নগরে। গ্রামে এক মামা আর ঢাকায় এক খালা ছাড়া আর কেউ নেই শাকিলের। মা হনুফা বেগম মানুষের বাসায় কাজ করার পাশাপাশি কাগজ ও বোতল কুড়িয়ে যা আয় করতেন তা দিয়ে শাকিলের ওষুধ কেনা ও কোনো রকমে সংসার চলত। মা কাজে গেলে ফুটপাথে শিকলে বাঁধা থাকত শাকিল।
এক দিন এ দৃশ্য চোখে পড়ে অনার্স পড়ুয়া এক তরুণীর। যিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালিদের সহায়তায় পরিচালিত সাইলেন্ট হ্যান্ড সাপোর্ট নামের সংগঠনের সদস্য। তার সংগঠন তখনই প্রতিবন্ধী শাকিল ও শাকিলের মায়ের পাশে দাঁড়ায়। শাকিলের মায়ের সাথে কথা বলে তারা প্রথমে উত্তরা মেডিক্যাল হাসপাতাল এবং পরে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তবে শাকিলের মানসিক কোনো উন্নতি না দেখে চিকিৎসকরা জানান, তার সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পরে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের, নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাহবুবুর রহমান ও সহকারী কমিশনার জিনিয়া জিন্নাতের সার্বিক সহযোগিতায় সংগঠনটি দক্ষিণ কেবল নগরে সরকারি ২৬ শতাংশ খাস জায়গা শাকিলের মায়ের নামে রেজিস্ট্রি করায়। একই সাথে তার মায়ের নামে ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলে দেয়। তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে বিত্তবানদের কাছে শাকিলের পাশে দাঁড়ানোর আহŸান নিয়ে গেলে মানুষের দান-সহযোগিতার অর্থ সংগ্রহ করে তাদের জন্য একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়। মোটর চালিত গভীর নলক‚প, রান্নাঘর ও বাথরুমের ব্যবস্থাও করে সংগঠনটি। গত শুক্রবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে দলিলপত্রসহ বাড়িটি শাকিলের মায়ের কাছে হ¯Íান্তর করলে উচ্ছ¡সিত হন হনুফা বেগম। নতুন বাড়ি পেয়ে উচ্ছ¡সিত শাকিলও।
শাকিলের মা বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর সময় শাকিল সুস্থই ছিল। কিন্তু পরে শাকিল জ্বরে আক্রান্ত হয়। কিন্তু দারিদ্র্যের জন্য আমি তার চিকিৎসা করতে পারিনি। ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। আমি তাকে রা¯Íার পাশে বেঁধে রাখতাম যেন গাড়ির তলে না পড়ে।’ সাইলেন্ট হ্যান্ড সাপোর্টের মাধ্যমে এ বাড়ি করে দিতে যারা যারা সহায়তা করেছেন, সবার জন্য কান্নাজড়িত কণ্ঠে দোয়া করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, ‘এই বাড়িতে দু-তিন দিনের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদান করা হবে এবং যতদ্রæত সম্ভব শাকিলের প্রতিবন্ধী ভাতা এবং তার মা হনুফা বেগমের জন্য বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করা হবে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement