২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

উন্নয়নের রূপকার ছিলেন জিয়াউর রহমান : রিজভী

-

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ইতিহাসের এমন এক যুগসন্ধিÿণে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন, যখন দেশে বিরাজমান ছিল ঘোর অমানিশা। স্বাধীনতাত্তোর বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, হত্যা, খুন, জখম, মজুদদারি ও চোরাচালানিতে ভরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সে সময় তিনি ছিলেন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার, উন্নয়ন ও উৎপাদনের রূপকার। গতকাল সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, তৎকালীন ÿমতাসীনরা আইনের শাসনের বদলে জমিদারি শাসন কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রে স্বীকৃত স্বাধীনতাগুলোকে তারা এক এক করে নিরুদ্দেশ করে দিয়েছিল। আজকের মতো সে দিনও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষদের গুম, খুন ও কারা-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রের ওপর চলেছে দমন-পীড়নের দৃষ্টান্তহীন পৈশাচিকতা। রক্তস্নাত স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ÿমতাসীনরা স্বার্থলোলুপ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়ে গোটা দেশের জন্য হয়ে ওঠে বিপজ্জনক। ’৭৩-এর নির্বাচনে দেশবাসী প্রথম ভোট লুট ও ভোট সন্ত্রাসের আতঙ্কজনক পরিস্থিতি অবলোকন করেছে। মফস্বলের ব্যালট বাক্স হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে এসে তা গণনা করে নিজেদের পচ্ছন্দসই ব্যক্তিকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি এতই অবনতিশীল ছিল যে, তা সামাল দিতে না পেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিজেদের লোকদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘সবাই পেয়েছে সোনার খনি, আর আমি পেলাম চোরের খনি’।
তিনি বলেন, বিচারবহিভর্‚ত হত্যারও সূচনা হয় সেই আমলেই। সে সময় বিরোধীদের অনেকেই বিচারবহিভর্‚ত হত্যার শিকার হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ভিন্নমতের কারণে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারকে বিচারবহিভর্‚ত হত্যার শিকার হতে হয়। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আস্ফালন করা হয়েছে। মানুষ যখন আম-কাঁঠালের পাতা খেয়ে জীবনধারণ করছে, মাছ ধরার জাল পরে লজ্জা নিবারণ করছে, সে সময় আওয়ামী ÿমতাসীনরা ছিলেন বিত্তবিলাসে মত্ত। এরপর শুরু হয় নিহত গণতন্ত্রের চূড়ান্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। এক কলমের খোঁচায় সব রাজনৈতিক দল বন্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। সব সংবাদপত্র বন্ধ করে বাকশাল সমর্থিত চারটি পত্রিকা চালু রাখা হয়। এরপর ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট হৃদয়বিদারক রক্তাক্ত ঘটনার পর আওয়ামী লীগেরই একটি বড় অংশ রাষ্ট্রÿমতা দখল করে এবং ’৭৩-এ গঠিত সেই পার্লামেন্টই কার্যকর থাকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সেই সরকারের শপথ পাঠ করিয়েছেন। এরপর চলে নানা ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থা।
রিজভী বলেন, একটি অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে সিপাহি-জনতা রাজপথে এগিয়ে এসে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ঘটায়। জিয়াউর রহমানকে নেতা হিসেবে তারা বরণ করে এবং শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা। অর্গলমুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে অসংখ্য সংবাদপত্র। মানুষ ফিরে পায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় দেশ। দুর্ভিÿের হাত থেকে রÿা পায় কোটি কোটি মানুষ। শুরু হয় শিল্প ও কৃষি বিপ্লব, জনশক্তি রফতানি এবং সূচিত হয় স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিন্তু দেশী-বিদেশী কুচক্রী ষড়যন্ত্রকারীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক দেশপ্রেমিক জিয়াকে সহ্য করতে পারেনি। তাদের নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে শহীদ হন এই মহান জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী, গণতন্ত্র-উন্নয়ন-উৎপাদনের রূপকার দেশমাতৃকার এক মহান স্বাপ্নিককে হারিয়েছে দেশবাসী।
তিনি বলেন, আজ ১২ বছর ধরে ফের সেই বাকশাল রক্তপিপাসু প্রেতাত্মা হয়ে দেশে আধিপত্য বিরাজ করছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে নির্বাচন, ভোট, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের নাগরিক অধিকারকে হরণ করে চলেছে। ফিরিয়ে আনা হয়েছে বিচারবহিভর্‚ত হত্যা, গুম, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি। গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দেয়ার চিরস্থায়ী বন্দোব¯Í করতেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement