২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ

-

একাত্তরে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর বেতনভোগী ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতাবিরোধীর প্রথম পর্বের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। একই সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকারও প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম ধাপে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গতকাল রোববার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তালিকা প্রকাশ করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আরিফ উর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দীর্ঘ ৯ মাস তাদের স্থানীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির সহায়তায় বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হেফাজতে থাকা দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে সেইসব রাজাকারদের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট িি.িসড়ষধি. মড়া.নফ-এ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের বিভিন্ন জেলার রেকর্ড রুম এবং ওই সময় বিজি প্রেসে ছাপানো তালিকাও সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে। যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে আরো তালিকা প্রকাশ করা হবে। একই সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। তালিকার প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করা হলো। আগামী ২৬ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বর্তমান তথ্যমতে কোনো কোনো তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা তিন লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৬ জন। এর মধ্যে দাবিদার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৫১ হাজার ২৮৫ জন। বর্তমানে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ এক হাজার ৪৬১ জন। কিন্তু এই দুই লাখ ৫১ হাজার ২৮৫ সংখ্যক তালিকার অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম একাধিক গেজেট বা দলিলে থাকায় বেশি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা দুই লাখ ১০ হাজারের বেশি নয়। তিনি বলেন, একাধিক তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত একক তালিকা তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন। এই খসড়া তালিকা উপজেলা থেকে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে আগামী বছরের ২৬ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা রাজাকারদের যে তালিকা প্রকাশ করলাম তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাওয়া। এদের রাজনৈতিক পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগামীতে এটি করা যাবে। এদের বিচারের আওতায় আনা হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, এদের নামে মামলা এবং তালিকা প্রকাশ এক বিষয় নয়। আমি জাতির কাছে ওয়াদা করেছিলাম যে, রাজাকারদের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করব। আমি তা শুরু করলাম মাত্র। এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে কি না সেটি সরকারের বিষয়। কারণ গেজেট প্রকাশ হতে হলে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন লাগে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এককভাবে গেজেট প্রকাশ করতে পারবে না।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের নাম এই তালিকায় নেই। কারণ তারা রাজাকার, আল-শামসের চেয়েও উচ্চপর্যায়ের স্বাধীনতাবিরোধী নেতা ছিলেন। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই শ্রেণীর মানুষ ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। এক শ্রেণী ছিলেন যাদেরকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করেছিল। আরেক শ্রেণী ছিলেন যারা নিজেদের সুখ-শান্তি ও নিজেরদের নিরাপদে রাখতেই ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া তাদেরই একজন। এই শ্রেণীর লোকদের আমরা স্বাধীনতাবিরোধী বলে অবহিত করব।


আরো সংবাদ



premium cement