২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক ৩ দিনের রিমান্ডে

-

দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা আইসিটি অ্যাক্ট ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে এই রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট (সিএমএম কোর্ট)-৩৫ এর বিচারক মো: মামুনুর রশিদ। গতকাল শনিবার বিকেলে শুনানি শেষে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এই অনুমতি দেয়া হয়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মগবাজারস্থ দৈনিক সংগ্রাম অফিসে ঢুকে সম্পাদককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও পুরো অফিস তছনছ করে কিছু দুষ্কৃতকারী। তারা অফিস চলাকালেই সেখানে ঢুকে বিভিন্ন বিভাগের কম্পিউটার ও অফিসের মূল সার্ভার লাইন ভেঙে ফেলে। এ ছাড়াও অফিসের বিভিন্ন কক্ষের দরজা-জানালার গ্লাস ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ এসে সম্পাদক আবুল আসাদকে রাতেই হাতিরঝিল থানার হেফাজতে নিয়ে যায়। ওই রাতেই প্রথমে বলা হয়েছিল তাকে (আবুল আসাদ) ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু গতকাল সকালে তার বিরুদ্ধে একজন আইসিটি অ্যাক্টে মামলা দায়ের করেছে। মামলা নম্বর ২৪১২১২। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/৩১/৩৫ নং ধারা এবং দণ্ডবিধির ১২৪(ক)নং ধারায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার বাদি আফজাল হোসেন নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা।
এ দিকে দুপুরে সংগ্রাম সম্পাদককে হাতিরঝিল থানা থেকে পুরান ঢাকার সিএমএম কোর্টে নেয়া হয়। তাকে আসামিদের কক্ষে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখা হয়। পরে বিকেল ৪টার একটু আগে তার মামলাটি শুনানির জন্য তোলা হয়। ৩৫ নম্বর সিএমএম কোর্টের বিচারক মামলাটির শুনানি গ্রহণ করেন। আবুল আসাদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন।
মামলার শুনানিতে অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক বলেন, আবুল আসাদ একজন বয়োজ্যেষ্ঠ খ্যাতিমান লেখক ও সাংবাদিক। তার লেখা অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে। তার বয়স ৭৮ লেখা হলেও প্রকৃতপক্ষে ৮০ বছর। এই আইনজীবী আরো বলেন, আবুল আসাদ ব্ল্যাড ক্যান্সারের রোগী। তাকে নিয়মিত নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকতে হয় এবং সময়মতো অনেক ওষুধও খেতে হয়। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগেও তিনি আক্রান্ত।
এর আগে আবুল আসাদকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ গোলাম আজম। আদালত থেকে বাইরে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক বলেন, আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা আমরা প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। তবে আবুল আসাদের অসুস্থতা এবং তার বয়স বিবেচনায় তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য। আমরা আদালতে এই বিষয়টিই বোঝাতে চেয়েছিলাম এবং এই গ্রাউন্ডেই তার রিমান্ড আবেদন বাতিল এবং জামিন আবেদন করেছিলাম। তিনি আরো বলেন, আদালত আদেশে এ কথাও বলেছেন আবুল আসাদ কারাবিধি অনুযায়ী পূর্ণ চিকিৎসাসেবা পাবেন।
খুলনা সংগ্রাম অফিসে হামলা ও ভাঙচুর
এ দিকে খুলনা ব্যুরো জানায়, দৈনিক সংগ্রামের খুলনা অফিসে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। খুলনা প্রেস ক্লাবসংলগ্ন ১০২ স্যার ইকবাল রোডস্থ দোতলা ভবনে অবস্থিত অফিসে হামলার সময় কেউ ছিলেন না।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ২০ থেকে ৩০ জনের একটি দল হাতুড়ি ও শাবল নিয়ে দৈনিক সংগ্রাম অফিসের নিচে চায়ের দোকানের সামনে জড়ো হয়। এরপর তারা উপরে উঠে অফিসের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বিদ্যুতের মিটারটি ভেঙে ফেলে। কক্ষের তালা ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে অফিসে প্রবেশ করে তারা অফিসে রক্ষিত টেলিভিশন, কম্পিউটার, বুক সেলফ, ফাইল ক্যাবিনেট, চারটি টেবিল, ১৫টি চেয়ার, ফ্যান, ঘড়ি, পানির ফিল্টার, টেবিল ডেস্ক, কম্পিউটার টেবিল ভাঙচুর করে। পরে হামলাকারীরা তাদের আনা তালা অফিসের গেটে লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।
এ ব্যাপারে খুলনা সদর থানার ওসি আসলাম বাহার বলেন, ঘটনা শুনে আমরা অফিসে গিয়েছিলাম। ভেতরে চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, টিভি ভাঙচুর করে হামলাকারীরা গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেছে। এ ব্যাপারে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
দৈনিক সংগ্রামের মগবাজারস্থ কার্যালয়ের পরে খুলনা অফিসে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর, তছনছের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার নেতৃবৃন্দ।
হামলার নিন্দা ও সম্পাদকের মুক্তি দাবি
এ দিকে দৈনিক সংগ্রাম অফিসে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। পৃথক বিবৃতিতে তারা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান এবং সম্পাদক আবুল আসাদকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।
জাগপা : জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলটির মুখপাত্র রাশেদ প্রধানসহ নেতারা গতকাল দুপুরে দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু মোজাফফর মো: আনাছ, মো: হাসমত উল্লাহ, শেখ জামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সদস্য শওকতুজ্জামান, যুব জাগপা নেতা রিয়াজ রহমান, নাসির উদ্দিন নিশাত প্রমুখ। এ সময় হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাশেদ প্রধান বলেন, দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয়ে হামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর এক নতুন কালো অধ্যায়ের সূচনা হলো।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন : হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করার কারণেই দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয় ও সম্পাদকের ওপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরো বলেন, সরকারের অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করার কারণেই সংগ্রাম কার্যালয় ও সম্পাদকের ওপর হামলা করেছে। এ ধরনের হামলা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। তিনি অবিলম্বে দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয় ও সম্পাদকের ওপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং সম্পাদক আবুল আসাদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ পত্রিকা, সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
ইসলামী ছাত্রশিবির : এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম বলেন, একজন বয়োবৃদ্ধ প্রবীণ সম্পাদকের ওপর হামলা চালিয়ে হামলাকারীরা যে অসভ্য ও বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা অবিলম্বে প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদের মুক্তি এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার ও উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।  

 


আরো সংবাদ



premium cement