২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রিপোর্ট প্রকাশের পর অর্থনীতিবিদরা

উন্নয়ন ব্যয়ে দুর্নীতির কারণে বৈষম্য বাড়ছে

মানবোন্নয়নে এক ধাপ এগোলেও বৈষম্য কমেনি
-

মানবোন্নয়ন সূচকে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৩৬তম অবস্থান থেকে এক ধাপ এগিয়ে এ বছর ১৩৫তম অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের মানবোন্নয়ন সূচক। বরেণ্য অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ হলো, বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন বৈষম্য বাড়াচ্ছে। বৈষম্য কমাতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বিভিন্ন মাত্রায় শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বৈষম্য বাড়ছে। দেশের আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক সূচকগুলো কয়েকজনের হাতে বন্দী। তা ছাড়া নীতিনির্ধারণের বিষয়টিও কিছু গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত। তা না হলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে সংস্কারের কথা বলা হলেও কাদের স্বার্থে হচ্ছে না? উন্নয়ন ব্যয়ে দুর্নীতির কারণে বৈষম্য বাড়ছে।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ইউএনডিপির মানবোন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই মন্তব্যগুলো করেন দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বক্তব্য রাখেন, অর্থনীতিবিদ ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ব্র্যাকের গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, সেলিনা আহমেদ, ইউএনডিপির শারমিন ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সুদীপ্ত মুখার্জী ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নূরুল আমিনসহ অনেকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানবোন্নয়ন সূচককে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো অতি উচ্চ মানবোন্নয়ন, উচ্চ মানবোন্নয়ন, মধ্যম মানবোন্নয়ন ও নি¤œ মানবোন্নয়ন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানবোন্নয়ন সূচকে ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৫তম। তবে পাকিস্তান, মিয়ানমার, নেপালের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। অতি উচ্চ মানবোন্নয়নে রয়েছে ৬২টি দেশ। এর মধ্যে প্রথম নরওয়ে, দ্বিতীয় সুইজারল্যান্ড, তৃতীয় আয়ারল্যান্ড, চতুর্থ জার্মানি ও পঞ্চম হংকং। উচ্চ মানবোন্নয়ন সূচকে রয়েছে ৫৪টি দেশ। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৭১ আর মালদ্বীপের ১০৪তম। মধ্যম মানবোন্নয়নের তালিকায় রয়েছে ৩৬টি দেশ। এর মধ্যে ভারতের অবস্থান ১২৯তম, ভুটানের ১৩৪তম, বাংলাদেশের ১৩৫তম, মিয়ানমারের ১৪৫তম, নেপালের ১৪৭তম ও পাকিস্তানের ১৫২তম। নিচু মানবোন্নয়নের ৩৫টি দেশের মধ্যে থাকা আফগানিস্তানের অবস্থান ১৭০তম। এ ছাড়া প্রতিবেদনটিতে বিশ্বব্যাপী মাবনোন্নয়ন সূচকে বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ক্ষুধা নিবারণে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা চাই ক্ষুধাকে আক্রমণ করতে। এ ক্ষেত্রে আমরা শত্রু কাবু করতে পেরেছি। দরিদ্র মানুষের কল্যাণে আমরা সরাসরি কাজ করছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের সেবা দেয়া হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে। বৈষম্য কমাতে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভিআইপি কালচার বাদ দেয়া যাবে না। তবে ধীরে ধীরে এটা কমিয়ে আনা হচ্ছে।
পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, বৈষম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন বৈষম্য বাড়াচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে আরো গরিব করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে দক্ষ মানবসম্পদের দিকে নজর দিতে হবে। সৃজনশীলতা বাড়াতে হবে।
ড. শামসুল আলম বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবসম্পদ উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাজে লাগবে না। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম। এখনো ১৬ লাখ শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে। নগরায়ন বাড়ছে ফলে বস্তি বাড়ছে। বৈষম্য কমাতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বিভিন্ন মাত্রায় শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বৈষম্য বাড়ছে। প্রযুক্তিকে নতুন চালিকাশক্তি হিসেবে নিতে হবে। তিনি বলেন, আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের সর্বনি¤œ পর্যায় ৫ শতাংশ মানুষ প্রতিনিয়ত সম্পদ হারাচ্ছে। আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের পাঁচ শতাংশ মানুষের হাতে অধিকাংশ সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে।
বৈষম্যের অন্য কারণগুলো তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, উন্নয়ন ব্যয়ের অসাধুতার ও দুর্নীতির কারণে অসাম্য বেড়ে যায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারে অসাম্য রয়েছে। এটিও বৈষম্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, অসাম্যও বাড়ছে। আমাদের দেশে নারীর অংশগ্রহণ অনেক কম। এটা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশে অসাম্য বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই আলোচনা থেকে আমরা যা পেলাম, তা আগামী পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে অসাম্য যাতে সৃষ্টি না হয়, সে দিকে লক্ষ রাখা হবে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক সূচকগুলো কয়েকজনের হাতে বন্দী। তা ছাড়া নীতিনির্ধারণের বিষয়টিও কিছু গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত। তা না হলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে সংস্কারের কথা বলা হলেও কাদের স্বার্থে হচ্ছে না? উন্নয়ন ব্যয়ের দুর্নীতির কারণে বৈষম্য বাড়ছে। সাধারণ মানুষ গাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় করতে গিয়ে পুষ্টিকর খাদ্য ঠিকমতো কিনতে পারত না।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বৈষম্য বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। বিনিয়োগ ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন খাতে দক্ষ জনশক্তি অবকাঠামো এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ঘাটতি রয়েছে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জেন্ডারÑ সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। দেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও মানসম্পন্ন শিক্ষা হচ্ছে না। সর্বাধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ব্লকচেইনসহ আগামী প্রজন্মের শিক্ষা দক্ষতা অর্জনে এখন থেকেই কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায় হার অনেক কম। এই হার বাংলাদেশে জিডিপির মাত্র ৯ শতাংশ। কিন্তু অন্যান্য দেশে এই হার ১৯ শতাংশ। আমাদেরকে এটা বাড়াতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত

সকল