২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্টিলের তৈরি এক অনন্য স্মৃতিসৌধ ‘প্রজন্ম শপথ’

অনন্য স্থাপত্য
-

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের নিক্ষিপ্ত বুলেটের আঘাতে তিন বীর শহীদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে এক অনন্য নির্মাণশৈলী ‘প্রজন্ম শপথ’। ব্যতিক্রমধর্মী এই স্থাপনাটি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ মুখের ডান পাশে নির্মাণ করা হয়েছে।
নেত্রকোনা কৃষিফার্মের পাশে ৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর স্বাধীনতার ঊষালগ্নে পাক সেনাদের সাথে এক সম্মুখ যুদ্ধে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের স্মরণে শহীদ হওয়ার ওই স্থানেই ২৬ ফুট উচ্চতা ও নয় ফুট প্রস্থের স্মৃতিসৌধ ‘প্রজন্ম শপথ’ নির্মাণ করা হয়।
স্থাপনাটি শুধু স্মৃতিসৌধ হিসেবেই নয় এতে অর্থবহ করে তোলা হয়েছে নেত্রকোনার কৃষ্টি, কালচার, ঐতিহ্য, নেত্রকোনা নামের নেত্রর প্রতিচ্ছবি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ ছয় দফা, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, ২১ ফেব্রুয়ারি, ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র স্বাধীনতার যুদ্ধ, পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ, আমাদের স্বাধীন ভূখণ্ডের মানচিত্র এবং ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনার মুক্ত দিবসকে। স্মৃতিসৌধের পেছনের অংশে ২৬ ফুট প্রস্থ ও ৯ ফুট উচ্চ দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও বিজয়ের আনন্দ-উল্লাসে অস্ত্র হাতে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধাদের ম্যুরাল উপস্থাপন করা হয়েছে। অসাধারণ এই স্থাপনাটিকে সাদা চোখে দেখলে অনেকের কাছে সাধারণ মনে হলেও এটি এখন এক অনন্য স্থাপত্যশৈলীর মর্যাদায় উপনীত হয়েছে।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ২০১৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার নেত্রকোনার তিন শহীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজ শুরু করেন। নকশা করেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী। ১২ ফুট বাই ১২ ফুট ভূমির ওপর নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক মাহবুবুল হক চিশতী এটি নির্মাণের সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করেন। নির্মাণে তদারকি করে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ড।
এটি নির্মাণে মাটির অংশে কংক্রিটের ওপর টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। ওপরের পুরোটাতেই স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার।
তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. তরুণ কান্তি শিকদার এই স্মৃতিস্তম্ভ সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত হয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘একাত্তর সালে যে স্থানে পাক হানাদারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে যে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য জোরালোভাবে দাবি তোলা হয়। প্রথমে সেখানে কালচারকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ শুরু করার পর পাশের মসজিদের মুসল্লিদের কাছ থেকে প্রতিবাদ আসে। পরে সর্বসম্মতিক্রমে ‘প্রজন্ম শপথ’ নামে স্টিলের এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। যেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের নানান বিষয় গুরুত্বসহ উপস্থাপন করা হয়েছে।
নেত্রকোনার সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শহীদ তিন মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে এই স্মৃতিসৌধটি নতুন প্রজন্মের কাছে একটি শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে ভালো কিছু করার প্রেরণা জোগাবে বলেই আমার বিশ্বাস।
নেত্রকোনা জেলা খেলাফত আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রহিম বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস, ঐতিহ্য চিরঞ্জীব থাকুক তা আমরাও কামনা করি। কিন্তু মসজিদের পাশে মূর্তি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। শেষে ওই স্থানে স্বাধীনতার যে স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে আমরা সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement