২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তৈরী পোশাকে প্রণোদনা দেখতে কর্মকর্তাদের চার দেশ সফর প্রতিবেদন পাওয়া গেলে নতুন করে প্রণোদনার উদ্যোগ

-

তৈরী পোশাক খাতে আরো প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে চারজন সরকারি কর্মকর্তাকে চারটি দেশে পাঠানো হচ্ছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড। উপসচিব ও যুগ্ম সচিবপর্যায়ের এই কর্মকর্তারা এই চার দেশ সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবেনÑ এসব দেশে তৈরী পোশাক খাতে বর্তমানে কী ধরনের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এই প্রণোদনার ধরন খতিয়ে দেখে কর্মকর্তারা সরকারের কাছে ১৫ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দেশের তৈরী পোশাক খাতকে নতুন সহায়তা প্রদান করা যাবে কি যাবে না তা নির্ধারণ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছেন, তৈরী পোশাক খাতের রফতানি ইতোমধ্যে কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী তৈরী পোশাক মালিক সমিতি (বিজেএমইএ) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছেÑ তাদের যেন আরো বেশি করে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়। তারা প্রায়ই আমাদের অন্যন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভারত ও ভিয়েতমান তাদের তৈরী পোশাক খাতে অনেক ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এখন এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য আমরা চারটি দেশে চারজন কর্মকর্তা পাঠাচ্ছি। এই দেশগুলো হলোÑ ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। এই কর্মকর্তারা স্থানীয় বাংলাদেশের দূতাবাসের সহায়তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তৈরী পোশাক খাতে কী ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে তার তথ্য সংগ্রহ করবেন। এই তথ্যগুলো তারা প্রতিবেদন আকারে আমাদের কাছে জমা দেবেন। সেগুলোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে দেশের তৈরী পোশাক খাতে কী ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।
সূত্র জানায়, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এই চার কর্মকর্তা আগামী সপ্তাহে চারটি দেশ সফর করবেন। আশা করা যায়, এ মাসের শেষ দিকে তাদের কাছ থেকে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া সম্ভব হবে।
এ দিকে, টানা চার মাস ধারাবাহিকভাবে কমছে পোশাক রফতানি। নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, অক্টোবরে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং আগস্ট মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে পোশাক খাতের রফতানি।
এই চিত্রে অনেকটা শঙ্কিত হয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, চলতি অর্থবছর শেষে আয়ের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের চেয়েও কমতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাই অর্থমন্ত্রীকে পাশে চান তিনি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী গত ২৮ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে এসব কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রী পোশাক খাতের এই পরিস্থিতির জন্য ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশী মুদ্রার শক্তিশালী অবস্থানকে দায়ী করেন। এ জন্য তিনি শুধু পোশাক খাতের জন্য ডলারের বিপরীতে পাঁচ টাকা অবমূল্যায়নের সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় পোশাক খাতের জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।
পোশাক খাতের জন্য ‘আরএমজি ফরেন কারেন্সি রিয়েলাইজেশন প্রোগ্রাম’ নামে একটি কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীকে তিনি লিখেছেন, পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা চলতে থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে ৭ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। তাতে এ খাতের রফতানি আয় দাঁড়াবে তিন হাজার ১৯০ কোটি ডলার। এ বছর যার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তিন হাজার ৮২০ কোটি ডলার।
আর এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্য গত রোববার বিজেএমএ সভাপতি রুবানা হককে নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী অনেকটা হঠাৎ করে অর্থমন্ত্রীর সাথে তার সচিবালয়ের কক্ষে দেখা করেন। তারা পোশাক খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে এ খাতের জন্য আরো প্রণোদনা দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, তৈরী পোশাক খাতেই সরকারের পক্ষ প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায় তৈরী পোশাক খাতে ১ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে গার্মেন্ট সেক্টরে চার ধরনের নগদ প্রণোদনা দেয়া হয়ে থাকে। রফতানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা বাবদ ৪ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়। বস্ত্র খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা (প্রচলিত নিয়মের) বাবদ ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। নতুন পণ্য/নতুন বাজার (বস্ত্র খাত) সম্প্রসারণ সহায়তা (আমেরিকা/কানাডা/ইইউ ছাড়া) বাবদও ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইউরো জোনে বস্ত্র খাতের রফতানিকারকদের জন্য (বিদ্যমান ৪ শতাংশের অতিরিক্ত) ২ শতাংশ দেয়া হচ্ছে। এর সাথে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ শতাংশ যোগ হওয়ায় এ খাতে নগদ প্রণোদনার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১৫ শতাংশে। এর ফলে এ খাতে সরকারের ব্যয় আরো এক দফা বেড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, ১ শতাংশ নগদ প্রণোদনা নতুন করে যোগ হওয়ায় সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটে প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement