১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন সরকার

মন্ত্রণালয়ে আজ জরুরি বৈঠক
-

রমজান শুরু হতে আরো ৫ মাস বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে রমজান মাসে বাজার পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গেছে সরকার। বিশেষ করে রমজান মাসে পেঁয়াজ, ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি ও ডালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এখুনি আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে চাইছে সরকার। এই বাস্তবতায় আজ রোববার দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বিভাগ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে এই বৈঠকে বিশেষভাবে দাওয়াত দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, আগামী বছরের এপ্রিলের শেষে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাস সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদসহ কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়াতে পারেÑ এ ধরনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি পেঁয়াজের অতিরিক্ত দাম বাড়ার পেছনে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ইতোমধ্যে বাজার পরিস্থিতি অসহনীয় অবস্থায় চলে গেছে। পেঁয়াজের বাজার এখন প্রায় সবারই ধরাছোঁয়ার অনেকটা বাইরে চলে গেছে। এ পরিস্থিতি আরো একমাস চলতে পারে। কিন্তু এরপর রোজার মাসে এই পণ্যটি নিয়ে আবার কারসাজি করা হবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে সরকারের। রমজান মাসে এই পেঁয়াজ নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন সরকার। তাই যেকোনোভাবে রমজান পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চায় সরকার। এই জন্যই আজকের এই বৈঠকটি ডাকা হয়েছে।
বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ২৩০-২৬০ এবং আমদানিকৃতটি ১২০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। নতুন পেঁয়াজ সবে আসতে শুরু করেছে বাজারে। তবু দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৫৮-৬০ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৬৫-৭০ টাকা, প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ৮৫-৯০ এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৪৩০-৫২০ টাকায়, প্রতি কেজি ছোলা ৭০-৮০, মসুর ডাল জাত ও মান ভেদে ৫৫-১২৫, প্রতি কেজি খেজুর মান ভেদে ২২০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। অত্যাবশ্যকীয় এই পণ্য সারা বছর ধরেই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। পেঁয়াজ, চিনি, ডাল ও ছোলার অভ্যন্তরীণ কিছু উৎপাদন থাকলেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। রমজানে অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি চাহিদা সৃষ্টি হবে এসব পণ্যের।
জানা গেছে, রমজানের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বেসরকারি খাতকে আমদানি কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হবে। রমজান শুরুর একমাস আগে থেকেই চাহিদার সব পণ্য আমদানি ও মজুদ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে এলসি খোলা ও প্রয়োজনে ঋণ দেয়ার জন্য বলা হবে। রমজানে ব্যবহার হয় এমন সব ভোগ্যপণ্যের আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ এবং বন্দরে দ্রুত ছাড়করণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া নেবে সরকার। শুধু তা-ই নয়, রাষ্ট্রীয় বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম শক্তিশালী করা হচ্ছে। ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন সব পণ্যই এবার টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। শুধু তা-ই নয়, পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যথেষ্ট না হলে মিসর, তুরস্ক, মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৪টি মনিটরিং টিম নিয়মিত বাজার তদারকি করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, রজমান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। এজন্য বেশ আগেই আমরা এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে রোববারের বৈঠকটি আয়োজন করেছি। আশা এই বৈঠকে থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল