২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আকস্মিক রদবদল শিক্ষা প্রশাসনে

ক্লিন ইমেজ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ
-

গত এক বছরে শিক্ষা প্রশাসনে দ্বিতীয় দফায় বদলি ও পদায়নের আদেশ জারি করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এ বদলির উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিক্ষা প্রশাসনে একটি ক্লিন ইমেজ দেয়া। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এখনো দীর্ঘ দিন থেকে বিতর্কিতরাই বহাল রয়ে গেছেন।
এবারের বদলির আদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) একাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এবারের বদলির আদেশে যারা পদ হারিয়েছেন, তাদের বেশ কয়েকজনকে মাত্র কয়েক মাস আগে এ পদে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডর প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও রয়েছেন। কিন্তু নতুন মন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাসের মাথায় শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে যাকে আনা হয়েছিল, মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) তাকে নিয়ে পুরো প্রশাসনজুড়ে বিতর্ক থাকার পরও দ্বিতীয় দফা বদলিতে তাকে স্ব-পদেই রাখা হয়েছে। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত বদলির এ আদেশে যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবুল বাশারকে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে, মাউশি অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আব্দুল মান্নানকে সিলেটের সরকারি এমসি কলেজের বাংলার অধ্যাপক পদে, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মাদরাসা পরিদর্শক নাজমুল হককে টঙ্গী সরকারি কলেজে, মাউশি অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) জাকির হোসেনকে সংযুক্ত হিসেবে সরকারি কবি নজরুল কলেজে, নায়েমের উপপরিচালক মাসুদা বেগমকে কুমিল্লার সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে, মাউশি অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) এ কে মাসুদকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে, সরকারি বাঙলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সহিদুল ইসলামকে গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে বদলি করা হয়েছে।
যাদের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষায় ফল পাল্টানোর অভিযোগ, নিজ মেয়ের জেএসসির ফল টেম্পারিং ও বউ পেটানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা আগামী সোমবারের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হবেন। অন্যথায় একই তারিখ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন। শিক্ষা প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পদে এখনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত, প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত, ভিকারুননিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ কেলেঙ্কারি, টাকার বিনিময়ে স্কুল-কলেজের স্বীকৃতি দেয়া, মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি, ঢাকা বোর্ডের ৮০ কোটি টাকা বেসিক ব্যাংকের বিতর্কিত শাখায় জমা রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা ক্যাডার সূত্রে জানা গেছে, যাদের বদলি করা হলো তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিগত শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মন্মথ রঞ্জণ বাড়ৈ সিন্ডিকেটের সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এ গ্রুপটির নিয়ন্ত্রক শাহেদুল খবির চৌধুরী স্বপদে বহাল রয়েছেন। তিনি বর্তমানে শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্বরত। একজন জুনিয়র কর্মকর্তা হয়েও শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ দখলে রাখাকে শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা ভালো চোখে নিচ্ছেন না। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভই শুধু নয়, শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলছেন, এতে ক্যাডারের চেইন অব কমান্ড বিনষ্ট হয়েছে, যা বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে কাম্য ছিল না।
অন্য একটি সূত্র জানায়, এবারের বদলির তালিকায় শাহেদুল খবির চৌধুরীর নাম শীর্ষে থাকলেও মন্ত্রী নিজেই তার নাম এ যাত্রায় বাদ নিয়েছেন। তাকে বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ দফতর থেকেও সুপারিশ রয়েছে। সূত্র নিশ্চিত করেছেন, আগামীতে যেকোনো সময়ই তাকে বদলির আদেশ জারি হতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বদলির আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে শূন্য পদগুলোতে যাদের পদায়ন করা হয়েছে তারা হচ্ছেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক বেলাল হোসাইনকে মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক), ঢাকা কলেজের অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলামকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক রুপক রায়কে মাউশির সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) এবং মাউশি সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) সহকারী পরিচালক লোকমান হোসেনকে একই দফতরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) করা হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement