২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যানের জীবনের ব্রত জনগণের সেবা

মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি
-

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পরপর তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ একজন সফল জনপ্রতিনিধি। এর আগে ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নে একটানা চারবার ইউপি চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে সফলভাবে চেয়ারম্যান হন।
একজন সাদামনের মানুষ হিসেবে বালিয়াকান্দিসহ পুরো রাজবাড়ী জেলায় আবুল কালামের সুনাম ছড়িয়ে আছে। জনগণের সেবাই তার জীবনের ব্রত। আর সে জন্যই জনগণ তাকে ভালোবেশে টানা ৩৫ বছর ধরে তাদের সেবক হিসেবে নির্বাচিত করছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি জীবনে কোনো নির্বাচনেই হারেননি। তার এই সফলতার সম্পর্কে তিনি বলেন, জনগণের বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে সবক্ষেত্রে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। তাই জনগণ তাকেই বারবার বিজয়ী করেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বালিয়াকান্দি উপজেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলমত নির্বিশেষে তার ক্লিন ইমেজের কথা সব শ্রেণিপেশার মানুষের মুখে মুখে।
সম্প্রতি নয়া দিগন্তের সাথে এক সাক্ষাৎকারে আবুল কালাম আজাদ জানান, দীর্ঘ রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিত্ব জীবনে তার কোনো ব্যাংক ব্যালান্স নেই। উপজেলা শহরে তার কোনো জমি বা বাড়িও নেই। থাকেন নবাবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণবাড়ি গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে। সদালাপি হাস্যোজ্জ্বল দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক আবুল কালাম আজাদ পারিবারিক জীবনেও সুখী মানুষ। এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ছেলে বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজে ও ছেলের বউ বালিয়াকান্দি মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজে শিক্ষাকতা করেন।
আবুল কালাম আজাদ একজন মুক্তিযাদ্ধা। ১৯৭১ সালে যেমন তিনি দেশ-মাটিকে ভালোবেশে বিদেশীদের তাড়িয়েছিলেন, তেমন এখনো দেশের জনগণকে ভালোবেশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, একজন জনপ্রতিনিধির ওপর সরকার যে গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত করে, আমি সব সময়ই তার শতভাগ পূরণ করার চেষ্টা করেছি।
বিত্ত বৈভব সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে,আবুল কালাম বলেন, তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে দুই একর জমি হারিয়েছেন। নতুন করে আর কোনো জমিজিরাতের মালিক হতে পারেননি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবা করেই তিনি সন্তুষ্ট। আগামীতে জনপ্রতিনিধি না থাকলেও জনগণের সেবা করে বাকি জীবন কাটাবেন।
শিক্ষার মানোন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কৃতী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি।
উপজেলার সব ইউনিয়নেই সমভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। তাতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমেছে এবং উপস্থিতিও বেড়েছে।
হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। প্রত্যেক ইউনিয়নের একাধিক কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে তাতে ৩৬ প্রকার ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। সেখানে ডাক্তারের নিয়মিত উপস্থিতি, রোগীদের বসা ও বিশ্রামের সুব্যবস্থা করেছেন। রোগীরা সেবা পাচ্ছেন কি না, তাও মনিটরিং করেন তিনি। স্থানীয় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সেবার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময় উপজেলা ভূমিকা রাখছে। হাসপাতালের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মশক নিধনের জন্য মেশিনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
উন্নয়নের এক প্রশ্নের জবাবে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভালোবেশে বারবার নির্বাচিত করেছেন কাজের জন্য। আমি জনগণের সেবায় নতুন নতুন রাস্তা, ব্রিজ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করে প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছি। বালিয়াকান্দি উপজেলা শহরকে সম্প্রসারণ করেছি। এখন বালিয়াকান্দি শহরকে পৌরসভা হিসেবে রূপান্তর হওয়ার যোগ্য হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা একে একে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। উপজেলা এলাকার অধিকাংশ কাঁচা-পাকা রাস্তার উন্নয়ন করেছি। বালিয়াকান্দি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি। অনেক রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সোলার লাইটের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, শোষিত মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমি এলাকার মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনে উপজেলায় বহু রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার, বাজার উন্নয়ন, নলকূপ স্থাপনসহ উন্নয়নমূলক অনেক কাজ তিনি করেছেন। তারপরও রয়ে গেছে অনেক সমস্যা।
জমিসংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক কলহসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে প্রতি মাসেই গণশুনানির আয়োজন করে সমস্যার সমাধান করছি। এ কারণে উপজেলাবাসীর কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। ‘বালিয়াকান্দিতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি কম। এসব বিষয়ে তিনি জিরো টলারেন্স বলে দাবি করে বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলায় কেউ তার কাছে এ বিষয়ে প্রশ্রয় পায় না। তবে তিনি যদি বুঝতে পারেন তার উপজেলায় কোথাও ঘুষ-দুর্নীতি ও সন্ত্র¿াসী কর্মকাণ্ড চলছে, তিনি তা প্রতিহত করার শতভাগ প্রচেষ্টা চালান।
মাদক সম্পর্কে তিনি বলেন, সে নিজে ধূমপান ও মাদকমুক্ত মানুষ। তিনি বলেন, বালিয়াকান্দি এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ নেই। তবে মাদক সমস্যা আছে। মাদকমুক্ত করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
যুবকদের মাদকের সংশ্লিষ্টতা পেলে আমি নোটিশ করে ওই অভিভাবকদের ডেকে কাউন্সিলিং করে সংশোধনে সফল হয়েছি। তবে উপজেলার সব এলাকাকে এখনো মাদকমুক্ত করতে পারিনি। যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষায় উপজেলার উদ্যোগে খেলাধুলার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রশাসন উদ্যোগ নিলে অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো উপজেলায় মাদকমুক্ত করতে পারব।

 


আরো সংবাদ



premium cement