২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি দীর্ঘকাল ক্ষমতাসীন থেকেও জীবননগরের গোলাম মোর্তুজার সাদামাটা জীবনযাপন

-

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি গোলাম মোর্তুজা উপজেলার বৃহত্তম বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের পর পর চারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও তিনি বিআরডিবির টানা তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তবে কয়েক যুগ ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও একেবারেই সাদামাটা জীবনযাপন করছেন এই মানুষটি।
বাঁকা ইউনিয়নের মিনাজপুর গ্রামের এক সম্ভান্ত পরিবারে জন্ম গোলাম মোর্তুজার। তার বাবা মরহুম মেহের আলী মিয়াও ছিলেন সমাজসেবক। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে গোলাম মোর্তুজা সবার বড়। তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করে কৃষি বিভাগের স্ট্রোর কিপার পদে চাকরি নেন। কিছু দিন পর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। পরে পর পর তিনবার বিআরডিবির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন। এরপর বৃহত্তম বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের টানা চারবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে উপজেলার শীর্ষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে রাজনীতির হাতে খড়ি। ২০০৪ সাল থেকে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার আগে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া চলচিত্রে কালা খুন নামের একটি ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন।
গোলাম মোর্তুজা নয়া দিগন্তের সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানান, দীর্ঘ দিন ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং ২৫-৩০ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এলেও তার তেমন কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স নেই। বাপ-দাদার রেখে যাওয়ার বসতভিটা আর বাড়িতেই থাকেন। অথচ উপজেলার অনেক নেতা যারা তার হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করে অল্প দিনেই গাড়ি-বাড়ি আর অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমি ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও উচ্চশিক্ষিত দুুই ছেলের একজন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে এবং অপর ছেলে একটি ছোট ব্যবসায় করছে। গোলাম মোর্তুজা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে সাড়ে দশ বিঘা পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে আমি আর এক কাঠা জমিও কিনতে পারিনি। একজন প্রতিনিধি হিসেবে জনসেবা করাই আমার একমাত্র নেশা হয়ে পড়েছে।
এলাকার উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষ আমাকে ভালোবাসে বলেই বারবার নির্বাচিত করেছেন। তাদের ভালোবাসার মূল্য হিসেবে উপজেলাবাসীকে আমার সীমাবদ্ধতার মধ্যে জনসেবায় এলাকায় রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করে সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আমার প্রচেষ্টায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ-ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছি। বর্তমানে বিভিন্ন ক্লাব, শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় জীবননগর উপজেলায়ও ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আমার প্রচেষ্টায় ত্বরান্বিত হচ্ছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমি কখনো ঘুষ-দুর্নীতি কিংবা কোনো অন্যায় কাজকে সমর্থন করিনি এবং এখনো করি না। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় জীবননগর উপজেলায় ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস অনেক কম। তবে মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্নভাবে প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ করা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement