২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সেমিনারে বক্তারা

দেশে ২০ ভাগেরও কম রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফল

-

বাংলাদেশে ২০ ভাগেরও কম রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফল। বর্তমান বিশ্বের যে কোনো দেশের রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রার তুলনায় এটিই খারাপ অবস্থা। ডায়াবেটিসের দীর্ঘকালীন জটিলতাগুলোতেও বাংলাদেশী রোগীরা বেশি ভুগছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি হলোÑ এখানে অল্পবয়সের ছেলে-মেয়েরাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিপুল বাংলাদেশী কিশোর-কিশোরী ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশের আরো একটি বড় ঝুঁকি হলোÑ বিপুলসংখ্যক গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগী। পৃথিবীতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার তুলনামূলক বেশি বাংলাদেশে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ৭১ ফাউন্ডেশন ও ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বিশ^ ডায়াবেটিস দিবস : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ; ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা ও প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রকাশিত দুইটি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে এ তথ্য উঠে এসেছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা: খালেদ শওকত আলী। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেনÑ ডায়াবেটিস গবেষক অধ্যাপক মো: আবু সাঈদ, পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, ডা: জেবুন নাহার প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, একজন রোগীর যদি প্রতি মাসে গড়ে দুই হাজার টাকা খরচ হয়, তাহলে সে হিসেবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বাবদ প্রতি মাসে বাংলাদেশে খরচ হচ্ছে এক হাজান ৮০০ কোটি টাকা এবং প্রতি বছরে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ডায়াবেটিস অন্য আরো নানা ধরনের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়তেই থাকে। এ রোগের চিকিৎসা নিতে মানুষের আর্থিক চাপ যেমন বাড়ছে তেমনি মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। বক্তারা বলেন, বিশ্বে ডায়াবেটিসের গড় বিস্তার যেখানে ১১৪ শতাংশ, সেখানে আমাদের দেশে বিস্তারের হার ১৪৯ শতাংশ, যা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক। ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন অনুযায়ী দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৮৪ লাখ। এর বাইরে অনেকেই আছেন যাদের রোগ শনাক্ত করা হয়নি। বিশ্বে শতকরা ৯ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ডায়াবেটিস রয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ। বছরে বাড়ছে আরো এক লাখ রোগী। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সব বয়সের মানুষই আজ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছরই দ্বিগুণ হারে বাড়ছে নতুন নতুন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। সচেতনতার অভাবে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দেশের ৮৫ ভাগ অধিবাসী যে পল্লী অঞ্চলে বাস করে, সেখানে ইনসুলিন পাওয়া যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ডায়াবেটিসের মতো আজীবন রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গির। যেসব হাসপাতালে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়, সেখানেও এসব রোগীর কোনো নথি কিংবা তালিকা রক্ষা করা হয় না; এমনকি কোনো কেন্দ্রীয় নিবন্ধনও নেই, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বলা হয়েছে, ৩০ বছর আগের তুলনায় ডায়াবেটিসের সংখ্যা এখন চার গুণ বেশি। বর্তমানে সারা বিশে^ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ কোটিরও বেশি এবং প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় ডায়াবেটিসের কারণে। বর্তমানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম স্থানে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, ১৯৮০ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি। ২০০০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি (বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ) ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ২০৩০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাবে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন বলছে, প্রাপ্ত বয়স্ক যেসব মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের। যেখানে খুব দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটছে। সংস্থাটি বলছে, ২০১৬ সালে ডায়াবেটিসের কারণে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষামতে নগরায়ন, ওয়েস্টার্ন ফুড আর সার্বিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতায় এ রোগের বিস্তার ঘটছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement