২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জাতিসঙ্ঘের আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার অভিযোগ কেন? রোহিঙ্গা সঙ্কট

-

আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্র দেশগুলোর মধ্যে গাম্বিয়া অন্যতম। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান এ দেশটিই রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে জাতিসঙ্ঘে সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগে গাম্বিয়া বলেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমার। দেশটি বলছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ৫৭ জাতির সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স বা ওআইসির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠিত ওআইসির ১৪তম সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজেতে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য ওআইসির এড-হক মিনিস্ট্রিয়াল কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গাম্বিয়া এ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছে।
গাম্বিয়ার পরিচিতি : দেশটির আয়তন বাংলাদেশের ১২ ভাগের এক ভাগ এবং দেশটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ১৯ লাখ। গাম্বিয়ার জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। রাজধানী বান্জুল। ১৯৬৫ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে গাম্বিয়া। ১৯৮২ সালে সেনেগালের সাথে একত্র হয়ে সেনেগাম্বিয়া নামের একটি কনফেডারেশন করা হয়। কিন্তু ১৯৮৯ সালে সে কনফেডারেশন ভেঙে যায়। ১৯৯৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন লেফট্যানেন্ট ইয়াহিয়া জামেহ। তিনি ২২ বছর দেশটি শাসন করেন। ২০১৫ সালে গাম্বিয়াকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন দেশটির তখনকার প্রেসিডেন্ট।
এ অভিযোগের গুরুত্ব কী? ব্রাসেলস-ভিত্তিক আনমশর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিডাউদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে অভিযোগ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে গাম্বিয়া দায়ের করেছে সেটি নজিরবিহীন।
গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে এর আগে আইসিজের কাছে কেউ কখনো আসেনি বলে উল্লেখ করেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আইসিজে যদি শোনার জন্য এ অভিযোগ গ্রহণ করে তাহলেও এটি একটি বড় প্রাপ্তি হবে।
গাম্বিয়ার দায়ের করা অভিযোগের গুরুত্ব সম্পর্কে মি. জিয়াউদ্দিন ব্যাখ্যা করেন, ‘এটা ঠিক ক্রিমিনাল কেস হচ্ছে না। গণহত্যাসংক্রান্ত যে আন্তর্জাতিক সনদ আছে ১৯৪৮ সালের, সে সনদটা ইন্টারন্যাশনাল ল’র একটি মূল অংশে পরিণত হয়েছে। কোনো একটা রাষ্ট্র যদি মনে করে যে আরেকটা রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন মান্য করছে না তখন তারা আইসিজের শরণাপন্ন হতে পারে এবং এখানে গাম্বিয়া সে কাজটাই করেছে।’
মিয়ানমারও ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের সদস্য। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, আইসিজে কি এখন মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে পারবে? জবাবে মি. জিয়াউদ্দিন বলেন, আইসিজের সামনে হাজির হওয়ার জন্য সার্বভৌম দেশ হিসেবে মিয়ানমার বাধ্য নয়। আইসিজের সে ক্ষমতাও নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement