১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৭১তম জন্মবার্ষিকী আজ

হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান

বাংলা একাডেমিতে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান : নয়া দিগন্ত -

অন্যদিন প্রবর্তিত ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ও নবীন লেখক সাদাত হোসাইন। পুরস্কার হিসেবে তাদের পাঁচ লাখ এবং এক লাখ টাকা ছাড়াও ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
এ উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ এবং রেওয়াজ পারফরমার স্কুলের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর স্বাগত বক্তৃতা দেন:, অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন : এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও মেহের আফরোজ শাওন। এ ছাড়া প্রশংসাপত্র পাঠ করেন কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের ও সম্পাদক-সাহিত্য সমালোচক আবুল হাসনাত।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার ইমদাদুল হক মিলন, চিত্রশিল্পী হাশেম খান প্রমুখ।
‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ উপন্যাসের জন্য নবীন সাহিত্য শ্রেণীতে এবার পুরস্কার পেয়েছেন সাদাত হোসাইন। আর রাবেয়া খাতুন পেয়েছেন বাংলা কথাসাহিত্যে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য।
রাবেয়া খাতুনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর, বিক্রমপুরের পাউসার গ্রামে, মামাবাড়িতে। বাবা মৌলভী মোহাম্মদ মূলক চাঁদ, মা হামিদা খাতুন। স্বামী চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাংবাদিক ফজলুল হক। লেখালেখির পাশাপাশি একদা রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতাও করেছেন। বাংলা সাহিত্যে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাবেয়া খাতুন পেয়েছেন বহু পুরস্কার।
তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইনের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে। বাবা হেদায়েতউল্লাহ বেপারি। মা নাসরীন আলো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। প্রথম গ্রন্থ ‘গল্পছবি’। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘জানালার ওপাশে’। তবে তাকে পাঠকদের মণিকোঠায় ঠাঁই দেয় ‘আরশিনগরসহ একাধিক উপন্যাস। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে লিখেছেন পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। চলচ্চিত্রেও সাদাত গল্প বলে সমাদৃত হয়েছেন। তিনি লাভ করেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার।
২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয় ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। ২০১৫ সালে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী এবং সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক এবং স্বকৃত নোমান। অন্য দিকে ২০১৭ সালে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং মোজাফ্ফর হোসেনের হাতে। গত বছর এই পুরস্কার পেয়েছেন প্রবীণ কথাশিল্পী রিজিয়া রহমান এবং নবীন সাহিত্য শ্রেণীতে ফাতিমা রুমি।
হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী আজ
বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও পঠিত নন্দিত কথাসাহিত্যিক লেখক, চলচ্চিত্রকার এবং নাট্যকার-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। এ কিংবদন্তির ৭১তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৮ সালের এই দিনে ময়মনসিংহের কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর পলিমার কেমিস্ট্রির ওপর পিএইচডি নিয়ে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগে শিক্ষকতায়। দীর্ঘ দিন সম্পৃক্ত থাকার পর তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে পুরো মাত্রায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।
হুমায়ূন বহুসংখ্যক জনপ্রিয় উপন্যাসের রচয়িতা। তার রচিত প্রতিটি বই পাঠক গ্রহণ করেছেন সাদরে। বাংলাদেশের মিডিয়া অঙ্গনে অন্যতম শক্তিশালী একটি জায়গা দখল করে আছেন বাংলা সাহিত্যের এ মহানায়ক। তার রচিত উপন্যাস ও গল্প নিয়ে টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। বিশেষ করে হিমু, মিসির আলী আর বাকের ভাইয়ের মতো চরিত্র তৈরিতে তিনি যে লেখনীর দক্ষতা দেখিয়েছেন তাতে তাকে ও তার সৃষ্টিকে আজীবন মনে রাখবেন পাঠক। ‘হিমু’ সিরিজের বই, ‘মিসির আলী’ সিরিজের বইসহ ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘অপেক্ষা’, ‘রুপার পালঙ্ক’, ‘লীলাবতী’, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা ‘জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প’সহ অসংখ্য সুপাঠ্য বই তিনি উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য।
তার বেশ বড় মাপের অবদান রয়েছে বাংলাদেশের নাট্যজগতে। তারই রচিত অনেক উপন্যাস ও গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে নাটক। এর মধ্যে উলেখযোগ্যসংখ্যক তার চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে। এসব নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’ প্রভৃতি। তার রচিত উপন্যাস অবলম্বনে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ ‘আগুনের পরশমণি’, ‘আমার আছে জল’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দুই দুয়ারি’, ‘দূরত্ব’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘প্রিয়তমেষু’ প্রভৃতি।
তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। হুমায়ূন আহমেদ তার অনবদ্য রচনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনার জন্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, শিশু একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক প্রভৃতি উলেখযোগ্য। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার অন্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউ ইয়র্কে তিনি ইন্তেকাল করেন।
নানা আয়োজন
হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘হুমায়ূন মেলা’। আজ বেলা ১১টা ৫ মিনিটে হিমুপ্রেমীরা হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকে হলুদ বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করবেন। উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন অঙ্গনের হুমায়ূন ভক্ত ও বিশিষ্টজনরা। মেলায় থাকছে বিভিন্ন আয়োজন। চ্যানেল আই মেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। এ ছাড়া দেশীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের পর্দাজুড়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে থাকছে নানা আয়োজন। এ দিকে গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের বাসায় কেক কেটে দিনটি উদযাপন করেন পরিবারের সদস্যরা। আর আজ সকালে নূহাশ পল্লীতে থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠান।

 


আরো সংবাদ



premium cement